খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬: সদর হাসপাতালের ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারিতা ,অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারনে শরীয়তপুরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সদর হাসপাতালের বেশীরভাগ ডাক্তারের ইচ্ছা মাফিক বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত থাকার কারনে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। ডাক্তারা নানা অজুহাতে অনুপস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন। সিভিল সার্জন দায়সারা বক্তব্য দিয়ে বলছেন বার বার সতর্ক করার পরেও তারা এরিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে ও শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের অফিস সহকারী নিপা আক্তার জানান, নানা অনিয়ম , অব্যবস্থাপনার ও ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারিতার এবং ডাক্তারের ইচ্ছে মাফিক বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকার কারনে গোটা শরীয়তপুরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। কোন নিয়ম নীতি মানছেনা কেউ। যে যার মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। এতে করে দুরদুরান্তের রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কতৃপক্ষের গাফলতির কারনের এধরনের অব্যস্থাপনা ও ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারিতার কথা বলছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে ১০০ শয্যার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালটিতে কোন ডাক্তারই নিয়ম নীতি মানছেন না। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে বরাদ্ধকৃত পদ রয়েছে ১৯টি । আর বর্তমান কর্মরত ডাক্তার পোষ্টিং দেয়া আছে সংখ্যা ১১জন। নিয়মিত ভাবে ডাকাতার থাকে মাত্র ৩ থেকে ৪জন । তা ও বেশীর ভাগ জুনিয়র ডাক্তার। বেশীর ভাগ ডাক্তারাই বিনা অনুমতিতে ছুটিতে গিয়ে ৩দিন থেকে ৭/১০দিন পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে অন্যত্র বা প্রাইভেট চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকেন। এতে করে দুর দুরান্ত থেকে রোগীরা এসে কোন ডাক্তার না পেয়ে ফেরত চলে যায়। আবার ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে ও রীতিমত চিকিৎসা পাচ্ছেনা। যে সব ডাক্তার কর্মস্থলে থাকেন তাদের উপর পড়ে অতিরিক্ত চাপ । কর্মরত এ সব ডাক্তাররা ওয়ার্ডে গেলে বর্হিবিভাগে রোগী জড়ো হয়ে যায়। আবার বর্হিবিভাগ সামাল দিতে গিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। ডাক্তাররা ও হিমশিম খাচ্ছে এ নিয়ে। এতে করে রোগীরা ও সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনি ভাবে চলছে দীর্ঘদিন। কেউ যেন দেখার নেই। সদর হাসপাতালে ডাক্তারদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিকের সাথে শেয়ার হোল্ডার থাকার কারনে তারা কর্মস্থলে থাকার পরে ও রোগীরা সরকারী সেবা পাচ্ছেনা। ডাক্তাররা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যায় নিদিষ্ট প্রাইভেট ক্লিনিকে। এমনও ডাক্তার আছে ৭দিন বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার পরে ও তার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা থাকে। এমন ও ডাক্তার আছে মাসে ৩দিন কর্মস্থলে থাকেন, আবার কেউ কেউ সপ্তাহে ৩দিন অফিস করে চলে যান । আবার ফিরে এসে সবক’িট স্বাক্ষর একবারে করে নেন। গত রোববার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডাঃ আকরাম এলাহি গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সে কর্মস্থলে যোগদান করেননি। অথচ হাজিরা খাতায় ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার স্বক্ষর করা রয়েছে। সে এ প্রতিনিধির সাথে মুঠো ফোনে আলাপ কালে স্বীকার করে বলেছেন তিনি ১৮ তারিখ থেকে অনুপস্থি আছেন ছুটির দরখাস্ত দিয়ে গেছেন। হাজিরা খাতায় ঐ স্বাক্ষর তার নয়। তাহলে কে ডাক্তার আকরাম এলাহীর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছে ?। এ ছাড়া ও তিনি নিয়মিত ভাবে প্রতি বৃহস্পতিবারকর্মস্থল ত্যাগ করে চলে যান । সোমবার দুপুরে এসে হাজির হন বলে হাসপাতালের কতৃপক্ষ জানান। হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলছেন ডাঃ আকরাম এলাহির কোন ছুটি পাওনা নেই। এ ছাড়া সার্জারী বিভাগের জুনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ আশরাফুর রহমান কর্মস্থলে থাকেন মাত্র ৩দিন। তাও সোমবার। এ যাত্রায় গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি কর্মস্থলে নেই। তিনি কোন ছুটি ও নেননি। একই ভাবে নাক, কান ও গলা বিভাগের বিশষজ্ঞ ডাঃ ইমরান খান মাসে মাত্র ৩দিন থাকেন। বাকি দিন গুলো তিনি বিনা অনুমতিতে ছুটিতে থেকে প্রাইভেট চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকেন। এ যাত্রায় তিনি গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। জুনিয়র বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নুরুল আমিন ২৫ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে অনুপস্থিত ছিলেন। গাইনী বিভাগের ডাক্তার সাজেদা বেগম সপ্তাহে মাত্র ৩দিন হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন। তাও সোম,মঙ্গল ও বুধবার । বৃহস্পতিবার চলে যান সোমার আসেন । এমনি ভাবে চলছে দীর্ঘদিন। এ যাত্রায় তিনি গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুপস্থিত রয়েছেন। দন্ত বিভাগের ডাক্তার সাকিব হাসা কে ও ঐদিন অনুপস্থিত পাওয়া যায়। এ সময় হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার সুমন পোদ্দার বর্হিবিভাগে একা প্রায় ২ শতাধিক রোগী কে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। রোগীদেরকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন ডাঃ কমলেশ চন্দ্র বসু, ডাঃ রাজিব শংকর ,ডাঃ মিতু ও ডাক্তার রেজাউল করিম। তারা রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। রোগীরা অভিযোগ করে বলেছেন এ হাসপাতালের ডাক্তাররা রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকে। বেশীর ভাগ ডাক্তারা কোম্পানীর রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে সময় কাটায় সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। রোগী দেখার সময় মোবাইলে ফোন করে ব্যস্ত দেখায়। কম বয়সী ডাক্তারা অফিস সময়ে মেয়ে রোগীদের সাথে গল্প করে সময় কাটানোর ও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ সকল বিষয়ে বার বার অভিযোগ পাওয়ার পরে ও দায়সারা ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে কোন কার্যকরী ভুমিকা রাখছেন না সিভিল সার্জন ডাক্তার মশিউর রহমান। সিভিল সার্জন ডাক্তার মশিউর রহমান নিজেই রীতিমত অফিস করেন না। এ কারনে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পরেও কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। সিভিল সার্জন ডাক্তার মশিউর রহমানের মেয়ে আমেরিকাতে থাকে । তিনি সেখানে মেয়ের কাছে যাওয়ার জন্য শরীয়তপুর টু ঢাকা দীর্ঘদিন যাবত ব্যস্ততা দেখিয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আসা মাহমুদপুর এলাকার রোগী মাকসুদা বেগম বলেন, সকালে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছিলাম। এসে দেখি রোগীদের ভিড়। অনেক রুমে ডাক্তার নেই। সারাদিন বসে ‘১টার সময় ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।
আটং এলাকার রোগী সহিদুল বন্দুকচি বলেন, যখনই সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসি তখনই দেখি ডাক্তার নেই। ক্লিনিকে আছে। সারা দিন বসে থেকে ডাক্তার দেখাতে হয়। আমাদের গরীবের ভোগান্তি কমলোনা।
সদর হাসপাতালের অফিস সহকারী মোঃ বজলুর রশীদ বলেন, উল্লেখিত ডাক্তারগন ইচ্ছে মাফিক বিনাঅনুমতিতে ছুটিতে চলে যান। ৩ দিন থেকে ৭দিন আবার ১০ দিন ও থাকেন। কোন কোন ডাক্তার মাসে ৩দিন থাকেন । আবার কোন কোন ডাক্তার সপ্তাহে ৩দিন থাকেন। বাকি সময়ে তারা বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ করে বাইরে চিকিৎসা করেন । অনেক সময় স্টেশনে থাকলে ও স্বাক্ষর করে ব্যক্তিগত কলে রোগী দেখতে চলে যান। ছুটি থেকে এসে একবারে সব স্বাক্ষর করে দেন। ডাক্তার আকরাম এলাহি ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে স্টেশনে নেই। তার হাজিরা খাতায় ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাক্ষর করা রয়েছে।
ডাঃ আশরাফুর রহমান বলেন , আমার ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য অনুপস্থিত আছি। কতৃপক্ষ জানে কেন আসিনি।
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইমরান খান ফোন রিসিভ করে একটু পরে বলে ফোন কেটে দেন।
মেডিকেল অফিসার আকরাম এলাহি বলেন, আমি ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ছুটিতে আছি। ২৬ সেপ্টেম্বর কর্মস্থলে যোগদান করবো। ছুটিকালীন সময়ে আমার হাজিরা খাতার ঐ স্বাক্ষর আমি করিনি।
গাইনী বিভাগের ডাক্তার সাজেদা বেগম এর কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আধাঘন্টা পরে ফোন দেয়ার কথা বলে কেটে দেন। আর কোন যোগাযোগ বা ফোন করেননি।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার মশিউর রহমান বলেন, এ সকল ডাক্তাররা নিজেদের খেয়াল খুশী মতো চলে। বার বার সতর্ক করার পরে ও নানা অজুহাতে এরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং অনিহা প্রকাশ করে। এ ছাড়া ডাক্তার আশরাফ অনুপস্থিতির বিষয়ে আমাকে কিছু জানায়নি। আকরাম এলাহিকে আমি ছুটি দেইনি। আমি এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি।