খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬: বরগুনা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারু ও কারু কলার সহকারী শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে তদন্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে ঘটনার তদন্ত করেন- বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নুরুজ্জামান এবং সহকারী কমিশনার রুবাইয়া তাসনিম।
এসময় শিক্ষার্থীরা সকল ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখিত অভিযোগ উপস্থাপন করেন তদন্ত কর্মকর্তাদের নিকট। তবে শিক্ষার্থীদের লেখায় অবাক করা অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দীর্ঘ দিনের পুষে রাখা কষ্টের কথাগুলো অকোপটে তারা উপস্থাপন করে। দীর্ঘ দিনের চলমান এই সমস্যা শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিকট মৌখিক অভিযোগ দিয়েও এর কোন প্রতিকার মেলেনি।
শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্যানুযায়ী শিক্ষক জাহিদুল ছাত্রীদের সাথে যে সব অশোভন আচরন করে থাকেন- ক্লাশে ঢুকে ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন সুরসুরি হয় এমন অশালীন বাক্য বিনিময় করে থাকেন। ছাত্রীদেরকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দেন এবং শরীরে হাত দিয়ে মারধর করেন। পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করে ছাত্রীদেরকে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। বাসায় প্রাইভেট পড়তে যেতে বলেন। বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জোর করে ছাত্রীদেরকে নিজের মটোরসাইকেলে তুলে নেন।
অপরদিকে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকও উপস্থিত হয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের নিকট তার লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। তদন্তের সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আহমেদ, বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু সহ অন্যান্য শিক্ষক, সাংবাদিক এবং এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আহমেদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে মর্নিং শিফটের শিফট প্রধান সহকারী শিক্ষক পারভিন বেগম, দিবা শিফটের প্রধান সহকারী শিক্ষক মো. জাকির হোসেন এবং সহকারী শিক্ষক মো. মোস্তফা কামালসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হয়েছিল। সে তদন্ত প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
খেলাঘর বরগুনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক মুশফিক আরিফ জানান, একজন শিক্ষক যখন চরম অন্যায় করে ফেলে তখন তিনি আর শিক্ষক হিসেবে গণ্য হতে পারেন না। যখন কোন অপরাধের ঘটনা ঘটে যায় তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। তাও যদি হয়ে যায় একজন শিক্ষকের দ্বারা। তখন সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়ে যায় বিদ্যালয়ের উপর থেকে। বরগুনাবাসী তার দৃষ্টান্ত মূলক বিচার দেখতে চায়।
উল্লেখ্য, বরগুনা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর মা। ওই শিক্ষার্থীর মা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক জাহিদুল এসব হয়রানির ঘটনা ঘটালেও লোক লজ্জার ভয়ে এতদিন মুখ খোলেননি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার। সম্প্রতি শ্রেণি কক্ষে তার মেয়েকে যৌন হয়রানি করলে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকসহ বরগুনার জেলা প্রশাসক ড. মহা: বশিরুল আলমের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ঘটনার তদন্ত করেন- বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং সহকারী কমিশনার।