আমাকে ধন্য করেছেন: বেলাল চৌধুরী
এত কাল পরেও মনে আছে সে দিনকার সেই কৃশকায় কিন্তু উজ্জ্বলতম প্রতিশ্রুতি, যা শামসুল শায়েরই পরবর্তীকালে খোলস পাল্টে হয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক। আমরা তখন সবাই সোনালি রঙের প্যাকেট মোড়া গোল্ড ফ্লেক-ব্র্যান্ডের একনিষ্ঠ সেবক ছিলাম। হক ভাই আমাকে শুধু সিগারেটই খাওয়াননি, অনুজপ্রতিম স্নেহের ঋণে আবদ্ধ করে আমাকে ধন্য করেছেন। যার রেশ আজ এতকাল পরেও আমাকে ঘিরে রয়েছে।
জায়গাতেই তাঁর নিজস্ব পাঞ্জা: হাসান আজিজুল হক
সৈয়দ শামসুল হক কবিতা লিখেছেন সাহিত্য জীবনের শুরু থেকে। পাশাপাশি লিখেছেন ছোটগল্প। প্রাচুর্যে ভরা তাঁর এই সম্পদ। লিখেছেন উপন্যাস এবং আমাদের কথাসাহিত্যের ধারায় এখানেও তিনি অগ্রগণ্যদের একজন। তিনি লিখেছেন কাব্যনাটক, মঞ্চনাটক এবং এই শাখায় তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী, একমাত্রই। আমার মতে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নূরুল দীনের সারাজীবন এবং এ রকম আরও কিছু কাব্যনাটক আমাদের গোটা বাংলা সাহিত্যের স্থায়ীসম্পদ। এখন আশ্চর্য হয়ে দেখতে পাচ্ছি, শিল্প-সাহিত্যের এত অসংখ্য ধারায় আমাদের এ কালের লেখকদের মধ্যে আর সম্ভবত কেউ-ই নেই। তিনি এখানে একা। চলচ্চিত্রের সংলাপ লিখেছেন। ছবি এঁকেছেন। আর সব জায়গাতেই তাঁর নিজস্ব পাঞ্জা।তাঁর মৃত্যুতে আমি শোকাহত।
আমাকে তিনটি কবিতার বই দিয়েছিলেন: আসাদ চৌধুরী
বেশ মনে পড়ে ষাটের দশকের গোড়ার দিকে আমরা নিউ মার্কেটেই আড্ডা দিতাম। ‘একদা এক রাজ্যে’ কবিতার বইটি নিয়ে নওরোজ কিতাবিস্তানের বন্ধু কামলী এসেছেন মাত্র। আমি আর ওয়াজেদ বই টা না কিনে থাকতে পারিনি। কাউয়ুম চৌধুরীর এক রঙের অমন কাজ, ভাবা যায়? কারও কবিতা পড়ে নিজে যখন কিছু লেখার একটা তাগিদ অনুভব করি। বুঝতে কি বাকি থাকে যে, পঠিত সৃষ্টির সংক্রমণ ক্ষমতা বেশ প্রবল? আমার সৌভাগ্য, তিনি আমাকে তিনটি কবিতার বই দিয়েছিলেন। চাইনি, নিজেই ভালোবেসে দিয়েছিলেন, শওকত ওসমানের মতো অটোগ্রাফ ছাড়াই।
আমাদের শেষ কথা: নির্মলেন্দু গুণ
ঢাকায় আমার কবি হয়ে ওঠার যে উন্মেষকাল সে সময় সৈয়দ শামসুল হক লন্ডনপ্রবাসী। ফলে শুরুতেই একটা দূরত্ব ছিল। এরপর বহুবার আমাদের দেখা হয়েছে, একই মঞ্চে কবিতা পড়েছি। তবে আজকে তাঁর সঙ্গে আমার শেষ কথাটা মনে পড়ছে। ২০০৪ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এক সাহিত্য সভায় আমি তাঁকে রসিকতা করে বলেছিলাম, ‘হকভাই, আমি আপনাকে সব্যসাচী বলে সম্বোধন করবো, না কবি বলে?’ তিনি একটু অপ্রস্তুত হয়ে আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকালেন। সেই শেষ কথার রেশই এখন মনের ভেতরে বাজছে।
আমি শোকাহত, স্তব্ধ: সেলিনা হোসেন
সৈয়দ শামসুল হক সময়ের শির গিঁটগুলো যথাসময়ে দিয়েছেন, তা বুঝতেই হবে। সাহিত্যের মূল্যায়ণকাল-পরিধিতে নান্দনিক ভাষ্যে বিবেচিত হয়। শিল্পের দায় থেকে কোনও লেখকই মুক্ত নন। সৈয়দ শামসুল হক সেই দায় সঙ্গে নিয়েই সময়ের যাত্রাপথে এগিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত সচেতন দীর্ঘ মাপের শিল্পী। তাঁর মৃত্যুতে আমি শোকাহত, স্তব্ধ।
আমরা সবাই মর্মাহত: মামুনুর রশীদ
সৈয়দ শামসুল হক অসাধারণ লেখক ছিলেন। শেষ জীবনে তিনি আমাদের নাট্য জগতেও পা রাখলেন। তাঁর নাটক অত্যন্ত উঁচুমানের, কালজয়ী। তিনি অসুস্থ আছেন জানি, কিন্তু এভাবে হঠাৎ চলে যাবেন তা ভাবিনি।তাঁর মৃত্যুতে আমরা সবাই মর্মাহত। ব্যথিত।
তাঁর শূন্যতা পূর্ণ হবার নয়: কায়সার হক
পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অক্লান্ত সাধনা করেছেন। এই সাধনাই তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি। লেখার ব্যাপারে তাঁর নিয়ম-নিষ্ঠা এবং শৃঙ্খলাবোধ থেকে তরুণদের শেখা উচিৎ। সৈয়দ হক বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল তারকা হয়ে আছেন, চিরদিন থাকবেন। তাঁর শূন্যতা পূর্ণ হবার নয়।