Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1kখোলা বাজার২৪, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬:  মুন্সিগঞ্জের পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী ও ইছামতি বিধৌত এলাকা। কিন্তু কালের বিবর্তনে সকল অস্তিস্ত বিলীন হয়ে গেছে। এক সময় এই জনপদের শাখা নদীগুলো দিয়ে পাল তোলা ও দাঁড়টানা নৌকায় যাতায়াত করত মানুষজন। নদীর প্রবাহ বয়ে যেত জেলার ছোট-বড় খাল দিয়ে। গ্রামের পর গ্রামকে স্পর্শ করে এক নদীর সঙ্গে আরেক নদীর সংযোগও ছিল এ ছোট বড় শাখানদীগুলোর। যা গ্রামের ভাষায় খাল বলা হতো সে সময়। সে খালগুলো প্রভাবশঅলীদের বড় বড় অট্টালিকায় ছেঁয়ে গেছে।

বরযাত্রী থেকে শুরু করে বউ-ঝিদের নাইওর যাওয়াসহ হাট-বাজার করে নৌকায় বাড়ি ফেরার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ খালগুলো। কালের বিবর্তণে তা আজ হারিয়ে গেলেও কয়েক বছর আগেও এসব খাল দিয়ে বালুর ট্রলার বা ছোটখাটো ট্রলার বা নৌকা চলাচল করত। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেসব সরকারি খাল প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় এখন তা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে।

মুন্সিগঞ্জ শহর ও শহরের বাইরে অন্তত ৪৫টি সরকারি ছোট-বড় খাল রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১২টি খাল প্রভাবশালীদের দখলে। বাকি খালগুলো পলিমাটি জমে শুকনো মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা এ খালের অবৈধ দখলদার। পূর্বপরিকল্পিতভাবে তারা আস্তে আস্তে মাটি ভরাট করে নিয়েছে ছোট-বড় ১২টি খাল।

এসব খালের তালিকা বা দখলদারের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট অফিসে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগেও পৌরসভা ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের ভিতরে ও বাইরে কমপক্ষে ১২টি খালের অস্তিত্ব ছিল। তখন থেকে দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়ে বর্তমানে সবকটি সরকারি খাল প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। দু’একটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেলেও সেগুলো আর খাল নেই। ক্যানেলের চেয়ে সরু হয়ে গেছে। এতে করে শহরে জলাবদ্ধতা বাড়তে শুরু করেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধান করে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জ শহর ও পার্শ্ববতী উপজেলার সরকারি খালগুলো পর্যায়ক্রমে প্রভাবশালীরা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকানপাট ইত্যাদি। শুধুমাত্র শহরের ভিতর দিয়ে ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীতে যোগাযোগের ১২টি খাল দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। এ সব খাল হল- গণকপাড়া-মিরেশ্বর খাল, এটা বর্তমানে নতুনগাঁও এলাকার পরিবেশ অধিদফতরের সামনে দিয়ে নয়াগাঁও চলে গেছে। মিরেসরাই খাল, নয়াগাঁও খাল, পঞ্চসার খাল, মালিরপাথর খাল যে খালটি ধলেশ্বরী নদী থেকে সরাসরি মালির পাথর, মাদবর বাড়ি, আধারিয়াতলা, দশকানি হয়ে শেষ পর্যন্ত কেওয়ার হয়ে কাটাখালী এসে মিশেছে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এখন আর সেই খালের কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ছোট ছোট কালভার্ট আর ব্রীজ এ খালগুলোর কালের সাক্ষী হয়ে। অন্যদিকে মালির পাথর খালটি দখল করে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

মালির পাথর এলাকার বাসিন্দা আবুল মোল্লা জানান, এ খাল দিয়ে আমরা কয়েক বছর আগে বড় বড় নৌকা নিয়ে হাট-বাজারে যেতাম এখন প্রভাবশালীরা ভরাট করে দখল করে নিয়েছে। আরেক স্থানীয় যুবক হাসান বলেন, ছোটবেলায় এ খালে সাঁতার কাটতাম এখন আর খাল নেই। চলে গেছে খালটি দখলদারদের পেটে। তিনি বলেন এসব সরকারি খাল দখলদারদের তালিকায় রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা।

পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, এলাকায় গিয়ে দখলকৃত খালগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে উদ্ধারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পঞ্চসার ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়া জানান, খালের কিছু কিছু অংশে ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তিও রয়েছে, পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, খালগুলো যদি অবৈধভাবে দখল হয়ে থাকে তাহলে খালগুলো পুনঃউদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।