খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬ : শিল্পীদের নৈপুণ্যে বাড়ছে নরসিংদীর মৃৎ শিল্পীদের তৈরী দূর্গা প্রতিমার কদর। সৌন্দর্য্যে দেশ সেরা হওয়ায় রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় চাহিদা বেড়েছে নরসিংদীর প্রতিমার।
আসন্ন দুর্গাৎসবকে সামনে রেখে প্রায় ৩৫০টি প্রতিমা তৈরী করছে এই জেলার মৃৎ শিল্পীরা। ষষ্ঠীবোধনীতে দেবী দূর্গাকে পূজা মন্ডপে পৌছে দিতে প্রতিমা শিল্পালয়গুলোতে কাজ চলছে দিন-রাত। পুরোদমে চলছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি।
পূর্বে মৃৎ শিল্পীরা তাদের বসত বাড়িতে প্রতিমা তৈরী করতো। তবে আশির দশকে সদর উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামের মৃৎ শিল্পী বলরাম পালের হাত ধরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অন্যান্য জেলার তুলনায় নরসিংদীর মৃৎ শিল্পীদের তৈরী প্রতিমার নজরকাড়া গঠন ও কারুকার্যে কদর বাড়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। গত দুই দশকের ব্যবধানে নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১৮টি প্রতিমা শিল্পালয় গড়ে উঠেছে।
এতে প্রায় দেড় শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। আসন্ন দূর্গাৎসবকে সামনে রেখে মৃৎ শিল্পীরা গত ৩ মাস যাবত দূর্গা প্রতিমা তৈরী কাজ করছে। এখন বাকি রংয়ের প্রলেপ ও অঙ্গ সজ্জার কাজ। তাই প্রতিমা শিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই। দূর্গা দেবীকে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষনীয় করে তুলতে রং তুলির আঁচড়ে এখন পুরোদমে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
তুর্যয় প্রতিমা শিল্পালয়ের স্বত্বাধিকারী দুলাল চন্দ্র পাল জানান, বৈশিষ্ট্যের উপর ভিক্তি করে অজন্তা, অরিয়েন্টেল, দেবী ও স্বাম্য নামে ৪ প্রকারের প্রতিমা তৈরী করে মৃৎ শিল্পীরা। এদের মধ্যে পূজার আয়োজকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে অজন্তা প্রতিমা। আমরা সারা বছর কাজ যা করি এর তুলনায় দূর্গা পূজার আসলে কাজ বেশি করতে হয়। পূজা অতি সংনিকটে তাই দিনরাত কাজ করে প্রতিমার রং করছি। পূজার আগে যাতে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে পারি।
শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথ প্রতিমা শিল্পালয়ের স্বত্বাধিকারী বলরাম পাল জানান, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গী হামলা ও পুরোহিত হত্যার ঘটনায় আমাদের ধারণা ছিল এবার কম মন্ডপে দূর্গা পূজা হবে। এ কারণে আমরা প্রতিমা কম তৈরী করি, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার দূর্গা পুজার উপড়ের বেশ জোরালো উদ্যোগ গ্রহন করেন তাই আগের চেয়ে বেশি পূজা হচ্ছে এ বছর। এবং শেষ মুহুর্তে প্রতিমা সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের পরিস্থিতি ভাল ছিলনা বলে এবার আমি ৩৫টি প্রতিমা তৈরী করেছি যার দাম ২৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পযর্ন্ত।
এ বছর জেলার বিভিন্ন কারখানায় ও ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ৩৫০টি প্রতিমা তৈরী হয়েছে। আকার ও গঠন ভেদে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা দরে এ সকল প্রতিমার কার্যাদেশ নেয়া হয়েছে। নরসিংদীর এসব প্রতিমা ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গী হামলা ও পুরোহিত হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের ধারণা ছিল এবার কম মন্ডপে দূর্গা পূজা হবে। এ কারণে মৃৎ শিল্পীরা প্রতিমা কম তৈরী করায় শেষ মুহুর্তে প্রতিমা সংকট দেখা দিয়েছে।
নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অধ্যাপক সূর্য্যকান্ত দাস বলেন, মৃৎ শিল্পীদের হাতের নৈপুণ্যের উপর নির্ভর করে প্রতিমার সুন্দর্য্য। মানে ভাল ও দামে কম হওয়ায় নরসিংদীর প্রতিমার চাহিদা দেশজুড়ে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের মৃৎ শিল্পীরা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেলেও এদেশের মৃৎ শিল্পীরা অবহেলিত। এই শিল্পটি মহাজনী ঋণের উপর নির্ভরশীল। তাই নরসিংদীর সুখ্যাত প্রতিমার শিল্পীদের বিনা সুদে ঋণের দাবী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের। গতবার নরসিংদীর জেলায় ৩শত ০৪ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার আমরা আশা করছি নরসিংদীর জেলায় ৩শত ১৫টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে এবং পূজার মন্ডপের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে পুলিশ বলেছে এ উৎসবকে ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
আগামী ৭ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে। ১১ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হবে।