Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

9kখোলা বাজার২৪, সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬ : রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোয় চরম অব্যবস্থাপনায় ভরাডুবি নেমেছে। কার্যক্রম শুরুর মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে বিশাল খেলাপি ঋণের বোঝা ব্যাংক খাতে নতুন সংকট তৈরি করেছে। পুরো ব্যাংকিং খাতে নতুন এসব ব্যাংকের কার্যক্রম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। মাত্র তিন বছরের কম সময়ের এই ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। প্রতি বছরই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করে ফেঁসে যাচ্ছে এরা। আমানতকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে অনেক ব্যাংক বিনিয়োগ করতে পারছে না।
কিছু কিছু ব্যাংকের মালিকানা দ্বন্দ্বে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। নামে-বেনামে পরিচালকরাই ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। কয়েকটি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক শোকজ করেছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের কার্যক্রম পরিদর্শনে পর্যবেক্ষকও বসিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় সুযোগ পেয়ে ব্যাংক স্থাপন করে এখন আর্থিক খাতে নতুন সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। এখনই এসব ব্যাংকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি করা উচিত।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের কোনো প্রয়োজন ছিল না। মোট বিনিয়োগ হিসাবে নিলে নতুন ব্যাংকগুলোর কিছুই করার নেই। নতুন করে কোথায় তারা বিনিয়োগ করবে? মুনাফা করতে হলে তাদের ঝুঁকি নিতে হবে। আর দেশের বাস্তবতায় এমন ঝুঁকি পুরো আর্থিক ব্যবস্থাপনায় আরও সংকট তৈরি করবে। তাই আমি মনে করি, নতুন ব্যাংকগুলো একীভূত করে বা অন্য কোনোভাবে চিন্তা করা উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক পর্ষদ নিয়োগ দেওয়ায় এই খাতে চরম অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এখন সেই রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে আরও দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন ব্যাংকের সব না হলেও কয়েকটি অনিয়মে জড়িয়েছে। এ কারণে খেলাপি ঋণও বেড়েছে। অনিয়মের সঙ্গে এসব ব্যাংকের পরিচালকরা জড়িত থাকতে পারেন। এটা এখনই কঠোর নজরদারি ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতাদের মালিকানায় ২০১৩ সালে নয়টি ব্যাংক আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে প্রবাসী নাগরিকদের উদ্যোগে তিনটি ব্যাংক হলো এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল ও এনআরবি গ্লোবাল। এসব ব্যাংকের মালিকানা প্রবাসীদের হলেও তারা বিভিন্ন দেশে থাকা ক্ষমতাসীন দলেরই নেতা। বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স আহরণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও এই তিন ব্যাংক কিছুই করতে পারেনি। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। তবে এই সময়ে তারা কোনো প্রকল্পেই বিনিয়োগ করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রেমিট্যান্স সংগ্রহে কাজ করার কথা থাকলেও এক টাকাও তারা রেমিট্যান্স আনতে পারেনি। এমনকি রেমিট্যান্স আহরণের জন্য আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা চুক্তিও করতে পারেনি। একাধিকবার পেপল, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানি এক্সপ্রেসের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য তারা চেষ্টা করলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো আগ্রহ দেখায়নি। এর মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মালিকানা দ্বন্দ্বে স্থবির হয়ে গেছে তাদের কার্যক্রম। এই ব্যাংকের পরিচালকদের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যাংকের পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ১৫ জন পরিচালকের মধ্যে পাঁচ জনকে বাদ দিয়ে শত শত কোটি টাকা লোপাট কর হয়েছে। গত ১১ মে তিন পরিচালকের বেনামি প্রতিষ্ঠানকে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং তা বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন পুরোপুরি ভঙ্গ করে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ এই প্রতিষ্ঠানে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটিতে খেলাপের পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি টাকা। গত জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকায়। এনআরবি ব্যাংকের খেলাপের পরিমাণ ১৮ কোটি টাকা। গত মার্চে যা ছিল ১৩ কোটি। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। মার্চে যা ছিল ৭ কোটি টাকা। জুন শেষে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ কোটিতে। এর বাইরে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার, ইউনিয়ন, ফারমার্স, মধুমতি, মেঘনা ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের মালিকানায়ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রয়েছেন। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক আমানতকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বিনিয়োগ করতে পারছে না। ব্যাংকটির জুন পর্যন্ত মোট আমানত সংগ্রহের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার কম। জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। সাউথ বাংলার দাপটশালী একজনের বিরুদ্ধে বেনামে বিশাল অঙ্কের টাকা ঋণ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপের পরিমাণ বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকটিতে তিন মাসে খেলাপের হার বেড়েছে প্রায় ১৭ গুণ। মার্চে যেখানে ছিল মাত্র ১৫ লাখ টাকা জুন শেষে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই কোটিতে। এ ছাড়া মধুমতি ব্যাংকের খেলাপের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি, মিডল্যান্ড ব্যাংকের প্রায় ১৫ কোটি, মেঘনা ব্যাংকের প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি রয়েছে। কিছু ব্যাংকের অনিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে। ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অনিয়ম যাতে না হয় সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন