খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬ : রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি গভর্নেন্স ও রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট স্পেশালিস্ট (আন্তর্জাতিক পরামর্শ) পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অতি শিগগিরই পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি একথা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সংরক্ষিত আসনের সদস্য বেগম লায়লা আরজুমান বানু।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, গত ৪ঠা ফেব্র“য়ারি মাসে হ্যাকিং-এর মাধ্যমে নিউ ইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক হতে খোয়া যায়। ওই অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইড)সহ সংশ্লিষ্ট সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ফিলিপাইন আদালতের মাধ্যমে টাকা ফেরত আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ফিলিপাইনে এএমএলসি’র প্রাথমিক তদন্ত এবং সিনেট শুনানিতে রিজার্ভ চুরির সঙ্গে দেশটির আরসিবিসি ব্যাংক, একটি মানি রেমিট্যান্স কোম্পানি ও তিনটি ক্যাসিনো এবং এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া গেছে। এএমএলসি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছে। পাশাপাশি অন্যদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেতে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী কিম অং তার কাছে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের মোট ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এএমএলসি’র কাছে ফেরত দিয়েছে। সেই অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরসিবিসি ব্যাংককে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যে এক বিলিয়ন পেসো (প্রায় ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) জরিমানা করেছে। যাতে এ ঘটনায় ব্যাংকটির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে। গত ১৬ই আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক এবং সুইফট-এর মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, ফিলিপাইনের সমপ্রতি গঠিত নতুন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল দেশটিতে যাবে। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চ?ালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের একেএম শাহজাহান কামালের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হতে খোয়া যাওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় প্রেরিত অর্থ ইতিমধ্যে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা হয়েছে। পাশাপাশি ফিলিপাইনে প্রেরিত ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ফিলিপিনো-চাইনিজ ব্যবসায়ী কিম অং তার নিকট রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের খোয়া যাওয়া অর্থ ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত দিয়েছে। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনের আদালত কর্তৃক ওই টাকা ফেরতের আদেশ দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের পাওনা: সরকারি দলের সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর (সরকারি/বেসরকারি) ৮ হাজার ২৮৩ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের আউট স্ট্যান্ডিং লোন ৯৯৪ দশমিক ৯৬ কোটি এবং ক্লাসিফাইড লোন ২১ দশমিক ২৭ কোটি। বাংলাদেশ জুট মিলস্ করপোরেশনের আউট স্ট্যান্ডিং লোন ৭৪৫ দশমিক ২১ কোটি এবং ক্লাসিফাইড লোন ৩৯ দশমিক ৬৮ কোটি। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন আউট স্ট্যান্ডিং লোন ২৬ দশমিক ৪৭ কোটি ও ক্লাসিফাইড লোন ২৬ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা। এরকম ২২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা রয়েছে। সরকারি দলের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৮৯২ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে।
ব্যাংকে অলস টাকা ৪ হাজার ১৯ কোটি: আওয়ামী লীগের “িারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, চলতি বছরের ৩০শে জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে অলস টাকার পরিমাণ ৪ হাজার ১৯ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোতে অলস টাকা হ্রাসে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঋণের সুদের হার হ্রাসের মাধ্যমে বিনিয়োগ উৎসাহিত তথা অলস অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারি দলের নজরুল ইসলাম বাবুর প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ কৃষিঋণ নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি ব্যাংকসমূহের কাছে ঋণের ২ শতাংশ হারে এবং নতুন ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মোট ঋণের ৫ শতাংশ হারে কৃষিঋণ বিতরণ করতে হবে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৮টি বেসরকারি ব্যাংক ৮ হাজার ৩৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। মানবজমিন