Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

72খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬ : জঙ্গিদের হত্যা না করে জীবিত রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহ করতে বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি দুদেশ এক সঙ্গে কাজ করে কীভাবে জঙ্গি দমন করা যায়, সে বিষয়ে জানার আগ্রহ দেখিয়েছে।

এছাড়া আগামী বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সহযোগিতা গড়ে তোলার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে দুদেশ। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের কঠোর অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসাও করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সদ্যসমাপ্ত নিরাপত্তা সংলাপে অংশ নেয়া প্রতিনিধিদলের সদস্যদের কাছ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় আনুষ্ঠানিক সংলাপের পর রোববার সন্ধ্যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বাসভবনে এক নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ছাড়াও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আমন্ত্রিত ছিলেন।
নৈশভোজে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট এবং দুদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানরা বক্তব্য রাখেন। তারা উভয়েই বলেছেন, ‘একটি আলোচনা বৈঠক করে নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। ভবিষ্যতে আরও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী একজন কর্মকর্তা সোমবার বলেন, এবারের নিরাপত্তা সংলাপে দুপক্ষের মধ্যে আন্তরিক পরিবেশে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। দুদেশের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল খুবই কম।
বাংলাদেশী ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি দমন নিয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বলেছেন, বাংলাদেশ যেন জঙ্গিদের ধরে মেরে না ফেলে। বরং তাদের জীবিত রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়েছে, প্রশংসাও করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও জঙ্গি দমনে সামর্থ্য বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কামনা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের এ অভিমত সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ সোমবার বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যতগুলো সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার প্রত্যেক হামলাকারীকে তারা মেরে ফেলেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র নিজের থেকে জঙ্গিদের মেরে না ফেলার এই সুপারিশ করেছেন, এটা আমার বিশ্বাস হয় না।’
তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, বাংলাদেশে নাগরিক সমাজের কেউ কেউ আছেন, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এ কথা বলতে বলেছেন। তাদের ওই ইচ্ছাকে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় অর্ন্তভুক্ত করেছে বলে আমার মনে হয়।’
এ নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘জঙ্গিদের বাঁচিয়ে রাখলে তথ্য পাওয়া যাবে এটা সবাই জানে। কেউ তো ইচ্ছা করে কাউকে মেরে ফেলে না। কিন্তু জঙ্গিরা যখন বন্দুক তাক করে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর জীবনের হুমকি সৃষ্টি করে, তখন শক্তি প্রয়োগের অধিকার রাষ্ট্র আইনশৃংখলা বাহিনীকে দিয়েছে। গুলশানে পুলিশের এতগুলো হতাহতের ঘটনার পর শক্তি প্রয়োগ না করে জঙ্গি ধরা সম্ভব ছিল না।’
আবদুর রশিদ বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী পৃথিবীর কোথাও নিজেরা ক্ষতি মেনে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে না। ভারত যে পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে, সেখানে সেনাদের ওপর নির্দেশই ছিল যে, আহত ও নিহতদের মরদেহ ফেলে আসা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা সব দেশেই নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নির্দেশ জারি থাকে যে, শত্রু খতম করতে গিয়ে নিজেদের সামান্যতম ক্ষতিও করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী দায়মুক্তিও পায়।’
বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পঞ্চম নিরাপত্তা সংলাপ রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব (দ্বিপক্ষীয় ও কনস্যুলার) কামরুল আহসান। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরসমূহের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম মোনাহান যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে নিয়মিত নিরাপত্তা সংলাপ আয়োজন করে আসছে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সংলাপে দুদেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও অংশীদারিত্ব সংক্রান্ত ইস্যুতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব ইস্যুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- কৌশলগত অগ্রাধিকার ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বেসামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম এবং সন্ত্রাস দমন ও সহিংস উগ্রবাদ দমন।