খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কৃষকদের কাছে ধানের পোকা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জনপ্রিয় একটি পদ্ধতির নাম হচ্ছে আলোক ফাঁদ। বর্তমানে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে ও সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমন ফসলের ক্ষেতে পোকামকড়ের উপস্থিতি যাচাইয়ের জন্য এই আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিটি বর্তমানে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেতের আইলে কোথাও পানি ভর্তি পাত্রে, কোথাও কাগজের উপড় আলো জ্বেলে ধানে আক্রমণাত্মক বিভিন্ন পোকা ধরছেন। কৃষকরা নিজেই জমিতে এই পোকাগুলোর পরিমাণ দেখে ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণের আগেই কোন ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে তা খুব সহজেই নিরূপন করতে পারছেন । এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা নিজেই তাদের আমন ক্ষেতে কোন ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে তা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতায় প্রয়োগ করতে পারছেন। এতে করে পোকার আক্রমনের আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছেন উপজেলার কৃষকরা। এই আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে এলাকার অনেক কৃষক বর্তমানে খুব কম ঔষধ ব্যবহার করছেন। এতে কৃষকদের খরচ অনেকটাই কমে আসছে এবং ধানের উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এবার আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা, এবার আমন মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার ৪শত ৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসের অনুপ্রেরনায় কৃষকরা বর্তমানে এই আলোক ফাঁদ পদ্ধতির প্রতি উৎসাহিত হয়েছেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা সহজেই আমন ধানের শত্রু বিভিন্ন পোকা নিধন করতে পারছেন। এতে করে আমন ক্ষেত পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের কৃষক লোকমান, জিসারুল, সিরাজ ও কাশিমপুর গ্রামের কৃষক জাহেদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর, সালাস, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মান্নান জানান, আমরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হয়েছি। সহজ লভ্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা খুব সহজেই ক্ষেতের পোকামাকড়গুলো নিধন করতে পারছেন। পোকামাকড়গুলোর উপস্থিতি চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন। এতে করে তাদের খরচ অনেকটাই কমে এসেছে। এটা পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম গোলাম সারওয়ার জানান, এটি একটি সহজলভ্য পদ্ধতি। কৃষকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই ধানের ক্ষেতে পোকামাকড়রে বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা কোন প্রকার ঔষধ প্রয়োগ ছাড়াই কৃষকরা ধানের ক্ষেতের পোকা মাকড় নিজ হাতে নিধন করতে পারছেন। কৃষকরা যদি এই পদ্ধতিটি আমন মৌসুমে অব্যাহত রাখেন তাহলে একদিকে তাদের ধান উৎপাদনে খরচ কম হবে এবং অপরদিকে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।