খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬: গত ৪ বছর পূর্বঢাকায় বসে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষনা করা হয়। সে থেকেই চরম আকার ধারন করে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির কোন্দল। বর্তমানে মেয়াদ উত্তীর্ন এ কমিটি গঠন করার পর থেকে জেলা বিএনপিতে কোন্দল চরম আকার ধারন করে দীর্ঘ সময় ধরে দলীয় কার্যক্রম ব্যাতিরেখে সব নেতারা লবিং গ্রুপিং নিয়ে ব্য¯ত থাকে। ফলে দুটি গ্রুপ আলাদা আলাদাভাবে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে। দলীয় কোন্দল থাকার কারনে বিএনপির তেমন কোন কার্যক্রম নাই বললেই চলে।
জেলা বিএনপির সভাপতি দীর্ঘ আড়াই বছর যাবত এলাকায় তৃণমূলের কোন নেতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। সাধারন সম্পাদক ও গুটি কয়েকজন নেতাকর্মীদের নিয়ে তার বাসায় বসে ফটোসেশন করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচী প্রচার করে যাচ্ছে। এতে করে তৃণমূলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে দলের মধ্যে উপদল সৃষ্টি হয়ে কোন্দল চরম আকার ধারন করছে। উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে নুতন কমিটি গঠনের জন্য দাবী রেখেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপি দলীয় সূত্রে জানাগেছে, শরীয়তপুর জেলা বিএনপি ঢাকায় বসে কমিটি গঠন করা হয় ২০১২ সালের ১১ জুলাই ।এতে মোঃ শফিকুর রহমান কিরন সভাপতি ও সরদার একে এম নাসির উদ্দিন কালু কে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সভাপতি সফিকুর রহমান কিরন ঢাকায় বসে অসাংগঠনিক ভাবে এ জেলায় ৬টি উপজেলা একটি থানা ও ৫টি পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের কমিটি গুলো ভেংগে দিয়ে নুতন কমিটি করে দলের ভিতর বিভক্তি সৃষ্টি করেছেন বলে একাধিক ত্যাগী নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন ।
এ ছাড়াও ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির শরীয়তপুর শহরে কর্মী সভা না করে জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার বালার বাজারে। এতেও অনেক নেতাকর্মী ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। ঐ সময়ে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করার পর থেকে জেলা বিএনপি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। চরম আকার ধারন করে দলীয় কোন্দল। গ্রুপিংয়ের শিকার হয় তৃনমুলের নেতা কর্মীরা। কমিটিতে পদবঞ্চিত ও বাদপড়া নেতা কর্মীরা কমিটি বাতিলের দাবীতে শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ, ঝাড়–-জুতা মিছিল ও সভাপতি শফিকুর রহমান কিরনের কুশপুত্তকিা দাহ, সংবাদ সম্মেলন সহ নানা কর্মসূচী পালন করে। এক গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন এডভোকেট জামাল শরীফ হিরু ও প্রায়ত কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব এর সহধর্মীনি এড. তাহমিনা আওরঙ্গ। এরই সাথে যোগ হয়েছে জেলা ছাত্রদলেরর আহবায়ক জামাল উদ্দীন বিদ্যুৎ সহ সবক’িট উপজেলা ছাত্রদল। পাশাপাশি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রুহুল আমিন মুন্সি ও সবক’িট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটির নেতৃবৃন্দ।
অপর গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সফিকুর রহমান কিরন ও সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন কালু। এর সাথে যোগ হয়েছে জেলা যুবদল ও সবক’িট উপজেলা যুবদলের কমিটির নেতৃবৃন্দ। নাসির উদ্দিন কালু গুটি কয়েক নেতা কর্মীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচী পালন করছেন ধানুকাস্থ রানী মহলচত্বরে তার বাড়ীতে বসে। আর ফটো সেশন করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কর্মসূচী পালনের প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। আর অপর গ্রুপ কর্মসূচী পালন করছেন পৌর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক দুলাল খানের বাসায় বসে। কেউ কোনদিন রাস্তায় এসে বা কোন হলরুমে বসে সভা সমাবেশ, করেনি। কাউকে রাস্তায় মিছিল বা বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি।
বিশেষ করে জেলা বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও বিদ্রোহী গ্রুপের নেতৃবৃন্দসহ উভয় গ্রুপই ঢাকায় বসে জেলা বিএনপিকে নিয়ন্ত্রন করছে। এ কারনে প্রায়ত কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব এর মৃত্যুর পর দলীয় কোন নেতা কর্মী দলীয় কর্মকান্ড পালন করতে গিয়ে কোনদিন কোন পুলিশী হামলা মামলার শিকার সহ নির্যাতনের শিকার হয়নি। এ দিকে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির ক্ষমতা বলে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন ও সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে কোন দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারেনি। বরং আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি করে মনোনয়ন প্রত্যাহারের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিনোদপুর, চিতলিয়া ও পালং ইউনিয়নের মনোনয়ন বিক্রি করে ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে শুধু তাই নয় ২০০৮সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন কালু দলীয় প্রার্থী শহিদুল হক লিটু সিকদারের পক্ষে কাজ না করে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রাথী মোবারক আলী সিকদারের পক্ষে কাজ করেছে।
গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর হোসেন হাওলাদারের পক্ষে সরাসরি কাজ করেছেন।সফিকুর রহমান কিরন ও নাসির উদ্দিন কালুর বিরুদ্ধে কথা বলার কারনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলতাফ হোসেন সিকদার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রুহুল আমিন মুন্সী ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসম্পাদক আঃ জব্বার খানকে বহিস্কার করেছেন। এ দিকে ২০১০ সালে জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি গঠন করার পর আদৌ পুনাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে ও দলীয় নেতৃবৃন্দের কোন মাথা ব্যাথা নেই। একই ভাবে চলছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি তা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে অনেক আগেই।
জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক জামাল উদ্দিন বিদ্যুৎ বলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দলীয় কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকার কারনে সময়মত পুর্নাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। আমরা দলের সকল কর্মসূচী পালন করে থাকি।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মুন্সি রুহুল আমিন বলেন, জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন কালু বর্তমান কমিটির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কোন দিন রাজপথে কোন কর্মসূচী পালন করেনি। গুটি কয়েকজন লোক নিয়ে তার বাসায় কর্মসূচীর নামে ফটোসেশন করে। আর সভাপতি সফিকুর রহমান কিরন কখনোই জেলায় আসেনি। এ ছাড়া সাধারন সম্পাদক গত ইউপি নির্বাচনে বিনোদপুর, চিতলিয়া ও পালং ইউনিয়নেরে মনোনয়ন টাকার বিনিময় আওয়ামীলীগের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন সিকদার বলেন, বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক দলীয় কোন কর্মসূচী পালন করে না। তাদের দ্বারা দলের কোন উপকারে আসেনা। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। কোন নির্বাচনেই সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন কালু দলের প্রাথীর পক্ষে কাজ করেনি। বিগত দিনে টাকার বিনিময়ে জেলা কমিটি দেয়া হয়েছে। আমরা চাই উভয় গ্রুপের নেতা কর্মীদের সমন্বয়ে নুতন করে একটি শক্তিশালী জেলা কমিটি গঠন করা হোক।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট জামাল শরীফ হিরু বলেন , আমিতো জেলা বিএনপির কোন দায়িত্বে নেই।তাই ঢাকায় থাকি। তার পরে ও আমি ও আমার সমর্থকরা রাজপথে আছি । আগামী দিনে ও থাকবো। অপর গ্রুপ যদি রাজপথে আসে তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো।
দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ না করার কথা অস্বীকার করে জেলা বি এনপির সাধারন সম্পাদক সরদার এ কে এম নাছির উদ্দিন কালু বলেন, আমার মনোনিত কোন ইউপি চেয়ারম্যান প্রাথী এ কথা বলতে পারবে না। আমরা পুলিশী বাধার কারনে বাসার বাইরে কোন দলীয় প্রোগ্রাম করতে পারিনা। ত্যাগী নেতা কর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন প্রসংগে বলেন ,কেন্দ্রের নিদের্শে আমরা কমিটি গঠন করেছি। এখানে আমাদের কোন হাত নেই।
শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ শফিকুর রহমান কিরণ বিদেশে অবস্থান করার কারনে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
