খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬: রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকে ভবন ধসে ৫ জন নিহতের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এ ঘটনায় সর্বশেষ নিহত ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভবন মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শহরের মহিলা কলেজ সড়কে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এছাড়া ঘটনার পর শহরে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
সূত্র জানায়, ওই এলাকায় কাপ্তাই লেক দখল করে একটি অপরিকল্পিত দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন স্থানীয় ছাত্রদল নেতা নঈম উদ্দিন টিটু। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা জনৈক ঠিকাদার মো. তৈয়বের শ্যালক। ভবনটিতে উপর দ্বিতল ছাড়াও লেকের লেভেলে আরেকটি নিচতলা ফাঁকা ছিল। উপরের দুই তলায় তিনটি পরিবার ভাড়ায় বসবাস করতেন। মঙ্গলবার শেষ বিকালের দিকে ভবনটি হঠাৎ ধসে তলিয়ে যায় লেকে। এতে বাড়িতে আটকে পড়া ৫ জনেরই মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার রাতব্যাপী পরিচালিত তৎপরতায় নিহত ৫ জনের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হন উদ্ধারকর্মীরা।
নিহতরা হলেন- গাড়িচালক মো. জাহিদুল ইসলাম (৪০), তার মেয়ে পিংকি আক্তার (১৩), গৃহশিক্ষক ও কলেজছাত্রী উম্মে হাবিবা রুনা (২২) এবং ভবনে বসবাসকারী রফিকুল ইসলামের দ্ইু শিশুসন্তান সামেদুল (৭) ও সাবেদুল (৪)। এ ৫ জনের লাশ উদ্ধারের পরই উদ্ধার অভিযান শেষ হয় বলে জানান নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রায়হান।
তিনি জানান, উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই ৫ জনের মরদেহ পাঠানো হয় রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে জাহিদুল ইসলামের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার সকালে ৫ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) মংক্যচিং মারমা সাগর।
এদিকে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার রাতেই সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, পৌরসভা মেয়রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক বিশেষ জরুরি সভা করেন জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান। সভায় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোয়াজ্জেম হোসাইনকে আহবায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- রাঙ্গামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুকমল চাকমা ও রাঙ্গামাটি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিক উল্ল্যাহ। কমিটিকে পরবর্তী পনের কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া শহরে কাপ্তাই লেকের ১১০ ফুট উপর লেভেলে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, ইমারত ও স্থাপনা তালিকা নিরূপণের জন্য রাঙ্গামাটি পৌরসভাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, ভবন ধসের ঘটনায় ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সর্বাত্মক ভূিমকা পালন করেছেন। এজন্য প্রশাসন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। অপরিকল্পিত ইমারত নির্মাণ, দায়িত্বহীনতা ও বসবাসকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করার দায়ে ভবনটির মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থার জন্য শক্ত অবস্থানে প্রশাসন। মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারদের প্রতি নগদ ২০ হাজার টাকাসহ খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। কাপ্তাই লেকের ১১০ ফুট লেভেলের উপর যারা অবৈধ বসতবাড়ী, স্থাপনা ও ইমারত নির্মাণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য শহরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ সব অবৈধ স্থাপনা নিরূপণ করে দ্রুত তালিকা প্রস্তুত করার জন্য পৌরসভাকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় বাজার ফান্ড কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি পৌরসভা মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী যারা কাপ্তাই লেক দখল করে অবৈধ স্থাপনা ও ইমারত তৈরি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং লেকের ১১০ ফুট উপর লেভেলে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদেরকে সরিয়ে নিরাপদে পুনর্বাসনের জন্য চিন্তাভাবনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে কাপ্তাই লেকে ভবন ধসে ৫ জন নিহতের ঘটনায় ভবনটির মালিক নঈম উদ্দিন টিটুর বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটি কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার রাতেই ইমারত নির্মাণ আইনের ১২ ধারা, প্যানেল কোর্টের ৩০৪ ধারা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(১) ধারায় বাদী হয়ে মামলাটি (নম্বর-২) করেছেন নিহত গাড়িচালক জাহিদুল ইসলামের ভাই লিটন মিয়া। তবে ঘটনার পরপরই বাড়ির মালিক আসামি নঈম উদ্দিন পলাতক বলে জানা গেছে।