খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০১৬: ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা, অধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা…..রবীন্দ্রনাথের এই কবিতার অংশ তুলে ধরে সাবেক রাষ্ট্রপাতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশটা আজ আধমরা। আজ নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে এসে দেশের সংকটময় মূহুর্ত মোকাবেলা করতে হবে। আধমরা দেশটাকে বাঁচাতে হবে।
বুধবার রংপুর নগরীর লালকুঠি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, আজ কোথাও যেন নিরপত্তা নেই। কে কোথায় গুম হবে, কখন কোন মায়ের বুক খালি হবে। কখন কাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। কেউ জানে না।
তিনি বলেন, দেশে আজ দুই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে। একটি অভিজাত শ্রেণির আর একটি গরীব মানুষের। একটিতে ইংরেজি মাধ্যম আর একটি বাংলা। এ রকম বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা রেখে দেশের শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন করা যাবে না। এর পরিবর্তন করতে হবে। একই রকম শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, মানুষের নিরাপত্তহীনতার কথা উল্লেখ করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, রংপুরের একটি ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে কেউ জানে না। আজও তার খোঁজ নেই। এভাবে কত যে মায়ের বুক খালি হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। আমি জাতীয় সংসদে তাই বলেছিলাম-কত মায়ের বুক খালি হয়েছে কত মায়ের চোখের পানি ঝরেছে সেই পানিতে একদিন আমরা ভেসে যাব।
তিনি বলেন, দেশে আজ আমাদের মেয়েরা কতটা নিরাপত্তাহীনতায় আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। খুন-ধর্ষণ-সন্ত্রাস-এসিড নিক্ষেপ, প্রতিনিয়ত এর বলি হচ্ছে আমাদের মেয়েরা। সাগর-রুনি, মিতু, তনু হত্যার বিচার হয়নি। কিছুদিন আগে ঢাকায় একটি মেয়েকে এসিড ছুড়ে মারা হলো। দু’দিন আগে সিলেটের সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে প্রকাশ্যে দিনের বেলা ক্যাম্পাসে নৃশংসভাবে কুপিয়ে যখম করা হলো। সে এখন জীবন মৃত্যুর মাঝে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই হলো আমাদের মেয়েদের ওপর সহিংসতার চিত্র।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মেয়েদের, আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা দিতে হবে। তাদের জীবন সন্ত্রাস আর খুনিদের হাতে বিপন্ন করে তোলা যাবে না। এ বিরুদ্ধে সরকারকে যেমন কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে তেমনি সকল মানুষকে এগিয়ে এসে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আমি নারীদের এগিয়ে নিতে, স্বনির্ভর করে তোলার জন্য আমার সরকারের আমলে প্রথম প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছিলাম। পৌরসভার বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করেছিলাম। বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দিয়েছিলাম। আজ সেই পথ ধরে সরকারগুলো তা দ্বাদশ-ডিগ্রী পর্যন্ত অবৈতনিক করছে। চারটি শিক্ষাবোর্ডকে একই কারিকুলামের আওতায় এনে একই সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে সামাজিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে অনতে হবে। আমাদের বর্তমান ছাত্রসমাজের শিক্ষার মান নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। তারা এ-প্লাস পাওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। আমরা এই শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই না। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা আগামী দিনের সুনাগরিক হবে। মানবিক মূল্যবোধে প্রকৃত মানুষ হবে। আর এ দায়িত্ব নিতে হবে নতুন প্রজন্মকে। সামাজিক অবক্ষয় থেকে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ষা করতে হবে। শিক্ষক-অভিভাবক ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের সেই কাজটি নিজেদের তাগিদে করতে হবে। তা না হলে আমাদের সন্তানদের সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করা যাবে না।
তিনি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমরা আমাদের দেশের অন্ধকার দূর করতে পার। তোমাদের হাত ধরে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। তোমরাই আমাদের আলোকবর্তিকা। তোমরা সুশিক্ষা আর সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তুলে সুনাগরিক হিসেবে আমাদের আশার আলো দেখাবে।
তিনি নারী শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, নারীরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত না হলে সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। আজকে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও বিরোধীদলীয় নেতা নারী। এটি দেশের নারী শিক্ষার উন্নয়নের জন্য হয়েছে।
কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মাহবুব রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- রংপুর সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ (বিএড) কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আখতার বানু, লালকুঠি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার, প্রভাষক সাইফুল ইসলাম, রুপালী ব্যাংকের রংপুর শাখার ডিজিএম ইসমাইল হোসেন, জাতীয় পার্টি জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর জাপা আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সদস্য সচিব এসএম ইয়াসির প্রমুখ।