Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

10খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০১৬: চিকিৎসাসামগ্রীর মধ্যে নাকে-মুখে নল লাগানো অবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শুয়ে আছেন ছাত্রলীগ নেতার অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খাদিজার বোঝার উপায় নেই তাঁকে কে বা কারা দেখতে আসছে। তাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছে নানান, অনেকে নিচ্ছেন অনেক অবস্থান। আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আইসিইউ গাউন গায়ে সেলফি তুলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন নেত্রী।

খাদিজার হামলাকারী বদরুল আলমের বিচারের দাবিতে সারা দেশ যখন সোচ্চার, প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে—এ সময়ে ঠিক এ রকম একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন। তাঁর পাশে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলস এবং আরো এক নেত্রী। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পোস্ট করা হয়েছিল ছবিটি।
নৃশংস আঘাতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকা একটি মানুষের কাছে গিয়ে কেউ যদি এমন আচরণ করেন, তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় ওঠা স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। তার ওপরে মানুষটি যখন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, তখন এমন আচরণ প্রশ্ন তোলে আরো বেশি। বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশের পর সেখানেও মানুষ তাঁদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চলছেন। আইসিইউর মতো স্পর্শকাতর একটি জায়গায় আশঙ্কাজনক একজন রোগীকে দেখতে গিয়ে এহেন সেলফি তোলায় অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ফেসবুকে।
এই সমালোচনার মধ্যেই সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন অবশ্য সেই সেলফি নিজের ওয়াল থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তুহিনের ফেসবুক ওয়ালে আলোচিত সেই ‘সেলফি’ আর দেখা যাচ্ছে না। রাত সাড়ে ১২টার কিছু পর তিনি ১১টি ছবি ‘অ্যাড’ করেছেন, যেগুলো বিভিন্ন সময় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নারী কর্মীদের সংঘর্ষ কিংবা নির্যাতনের ছবি। ছবিগুলোর জন্য সংসদ সদস্য তুহিন একটি দীর্ঘ ক্যাপশন ব্যবহার করেছেন, যেখানে তিনি সেই ছবিটিকে ‘সেলফি’ হিসেবে অস্বীকার করেছেন :
‘যখন বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচারের এই ছবিগুলো দিই, তখন শেয়ার হয় না ইমরান এইচ সরকারদের কাছে। আমরা আওয়ামী লীগের নারী কোনো প্রতিবাদ হয় নাই কখনো। আমরা ভুক্তভোগী, তাই নারীর কষ্ট বুঝি, তাই পাশে গিয়েছি। ছবিটি যদিও সেলফি না, ছোট ভাই শাহাদাতের তোলা। মনে হচ্ছে, কতগুলো খুন করেছে আর যে খাদিজাকে না বাঁচিয়ে ভিডিও করল এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চুপ। বেগম জিয়া সারা বছর গোলাপি লিপস্টিক দেয়, এটা চোখে পড়ে না। উনি তারপরও খাঁটি মুসলিম। আমরা ভদ্র ড্রেস পরে গেছি, তার পরও কত কথা।’
গত সোমবার ডিগ্রি (পাস কোর্স) দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা। বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল আলম (২৭)। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা তাঁকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এরই মধ্যে আজ সিলেটের আদালতে খাদিজার ওপর হামলার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বদরুল আলম। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আট বছর ধরে খাদিজাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তিনি। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁর ওপর হামলা চালান বদরুল।
ঘটনার দিন গুরুতর আহত অবস্থায় খাদিজাকে প্রথমে সিলেটে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মঙ্গলবার তাঁকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রয়েছেন খাদিজা। গতকাল চিকিৎসকরা বলেছেন, ৭২ ঘণ্টা পর তাঁর অবস্থা সম্পর্কে বলা যাবে। বুধবারও খাদিজার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।