Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, শনিবার, ০৮ অক্টোবর, ২০১৬:  বয়স প্রায় ৮০। নুয়ে পরেছে শরীর, স্বামী মারা গেছে ১০ বছর আগে। একমাত্র ছেলেটি ৫ বছর হয় মাকে ছেড়ে নরসিংদী শহরে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকে। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নিজ বাড়িতেই রাখে তার স্মামীসহ। স্বামী রিকসা চালিয়ে স্ত্রী ও শাশুরীকে ভরণ পোষন করের। কোথাও কোন জায়গা জমি নেই যে কিছু করে খাবে। মাত্র ২ ডিসিমেলের এক খন্ড জমিতে ছোট্ট দুটি জুপরি তুলে তাতেই কাটে সাবানী এবং তার মেয়ের সংসার।

এই ২ শতাংশ জমি থেকে ১ শতাংশ নিয়ে গেছে বাড়ির পাশের বালিখেকো সুরুজ মিয়া। শুধু তাই নয় এখন দুটি ঘরের মধ্যে একটি ঘরের পিড়াও চলে গেছে এই বালু পুকুরেই। এখন কি করি উপায় খোঁজে পাচ্ছিনা। শেষ পর্যন্ত মাথা গুজার ঠাইটুকুও যদি বালুপুকুরে চলে যায় তাহলে কোথায় গিয়ে থাকবো ভেবে পাচ্ছিনা। কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন এই সাবানী বেগন। নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের চন্ডিবর্দী গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের স্ত্রী সাবানী বেগম। বুধবার শিবুপর উপজেলার দুলালপুরের চন্ডিবর্দী এলাকায় গিয়ে কথা হয় ৮০ বছরের বয়স্ক এই সাবানী বেগমের সাথে। তিনি এই প্রতিনিধিকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পরেন।

এলাকার সুরুজ মিয়া, কুলি, মাজারুল, ইব্রাহিম, গণিসহ প্রায় ২০/২৫ জন বালিখোকো হতদরিদ্র কৃষকেদের ভুল বুঝিয়ে তাদের কৃষিজমি নিয়ে পুকুরের নামে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করতে থাকে। এভাবে একসময় বালি উত্তোলনের ফলে আশপাশের জমি ভেঙ্গে যায় তাও কৃষক বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। এভাবে এই ইউনিয়নের চন্ডিবর্দীতে প্রায় ১০টি, মীর্জাকান্দিতে ২৫টি, দত্তেরগাও এলাকায় ২০টি, দুলালপুরে ৩০টি, বিল চিনাদীতে ৩/৪টি পুকুরের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করে বালি ব্যবসায়ী নামের এই ভূমি খেকোরা। তারা এই ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক দালালের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনের কাজটি পরিচালনা করে থাকেন।

এরফলে ৬/৭াট গ্রাম অত্যান্ত ঝুকির মধ্যদিয়ে বসবাস করছে। কারণ তারা ঘর থেকে ভেরুলেই দেখতে পায় বালুর গর্ত। আর তাতে পরে বেশ কিছু শিশুও মারা গেছে।

এই পুকুরের গর্ভে চলে গেছে মোছলেহ উদ্দিন, মিনারা বেগম ও কিছমতআলীসহ আরো ৭/৮ বাড়ি। এছাড়া পুকুর পাড়ের মোতালেব, লাল মিয়া, সাহাজউদ্দীন, মিলন মিয়া, নয়ন মিয়া, বকুল মিয়া, নুরুল ইসলাম, চাঁন মিয়া ও ইসমাইলসহ আরো ২০/২৫টি বাড়ি ভেঙ্গে যেতে পাড়ে যে কোনো সময়। তাই তারা নির্ঘূম রাত কাটায়।

এই বিষয়ে দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিঞা হোসেন নাজির জানান, এরা শক্তিশালী একটি গ্রুপ এই কাজটি পরিচালনা করছে। তারা কোথায় থেকে যে এই শক্তিটা পায় তা আমার জানা নেই। আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে একাধিকবার উদ্যোগ গ্রহণ করেও তা বন্ধ করতে পারিনি।
এই বিষয়ে শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আফসার ও সহাকারী কমিশনার (ভূমি) মোস্তফা মনোয়ার মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে উপস্থিত ৬ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে এবং বালি উত্তেলন বন্ধ করে দেন।

স্থানীয় এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই এলাকার একটি শক্তিশালী গ্রুপ, পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে কৃষিজমি থেকে বালি উত্তোলন করে আসছে। যখনই কোনো মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হয় তখনই নামে মাত্র ২/৩দিন প্রশাসনের একটু আনাঘোনা দেখা যায়। পরে আবার পুরোধমেই চলে বালি উত্তোলনের কাজ।

এরপর এলাকাবাসীর অনুরোধে পাশের মীর্জাকান্দি এলাকায় গিয়ে একটি পুকুরে পাওয়া যায় ৩টি মেশিন একসাথে পুকুরের এক কোনে রেখে জুয়া খেলায় মগ্ন ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপারগণ। পুকুরের পাশেই দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে ৪/৫টি ট্রাক। হয়তো রাতের বেলা বালি উত্তোলন করে ট্রাকে করে নেয়া হবে। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখা যায়, বেকু দিয়ে রোপনকৃত ধানখেত থেকে কাটি কাটা হচ্ছে। জানতে চাইলে বেকুর লোকজন মুখ না খোললেও ৫ম শ্রেনীতে পড়–য়া কাজল জানায়, এই ধানখেত কেটে বালি তোলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এখানে প্রায় ৩বিঘা জমিতে ধানচাষ করা হয়। আর এই ধানক্ষেত কেটেই পুকুর করে তা থেকে বালি উত্তোলন করা হবে বলে জানায় শিশুবালক কাজল। কথা গুলো বলায় দমক দিয়ে কাজলতে তাড়িয়ে দেয় বেকুর লোকজন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, আমি এই দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আছি, আমি এই বালু উত্তোলনের বিষয়টি আগে জানতাম না। এখন জেনেছি তাই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি শিবুপর এ্যাসিলেন্ডকে নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চালাচ্ছি।

এভাবে অবৈধ পন্থায় বালি উত্তোলন করলে একদিকে কৃষি জমি হ্রাস পাবে। অন্যদিকে এলাকার মাটির স্তর নিন্মদিকে ধাবিত হয়ে যেকোনো সময় গ্রামের বাড়িঘর দেবে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।