Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

25খোলা বাজার২৪, শনিবার, ০৮ অক্টোবর, ২০১৬: মন্ডপে মন্ডপে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনির শব্দ দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের কথা জানান দিচ্ছে। এ ছাড়া পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, আরতি আর মাইকের আওয়াজে এখন মাতোয়ারা নরসিংদীর পূজা মন্ডপগুলো। হিন্দুদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও এসব মন্ডপে ঘুরতে আসায় উৎসব সার্বজনীন রূপ নিয়েছে। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। বছরান্তে আশ্বিন-কার্তিকের পঞ্চমী থেকে দশমী তিথির পাঁচটি দিবস ‘জগজ্জননী’ উমা দেবীর পিতৃগৃহ ঘুরে যাওয়া। মন্ডপে মন্ডপে ঢাকের বোলে যেন ধ্বনিত হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাঁধভাঙ্গা আনন্দের জোয়ার। নরসিংদী জেলার পূজামন্ডপ এখন উৎসবে মাতোয়ারা।
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গত শুক্রবার সারাদেশের ন্যায় নরসিংদী ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে সূচনা হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। মহাষষ্ঠীতে দুর্গতিনাশিনী দেবীর অধিষ্ঠান, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। এদিন সকাল ৮টা ৩১ মিনিটের মধ্যে ছিল ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ। এ সময় বেলতলা কিংবা বেলগাছের নিচে দেওয়া হয় ষষ্ঠীপূজা। সন্ধ্যায় দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস ছাড়াও সব মন্ডপে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগারতির আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় বিশেষ আলোকসজ্জাসহ অনেক মন্ডপে বিশেষ প্রার্থনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
শারদীয় দুর্গোৎসবের গতকাল ছিল মহাসপ্তমী। এদিন শুরু হয়েছে দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণ। মূলত:দুর্গোৎসবের মূল পর্বও শুরু হয়েছে কাল। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা হয়। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা। সপ্তমী পূজা উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামন্ডপে ভক্তিমূলক সঙ্গীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠান হয় । বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে সপ্তমীতে পূর্বাহ ৯-৫৭ মধ্যে নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তাদি কল্পারম্ভ এবং সপ্তমী বিহিত পূজা প্রশস্ত। আজ মহাষ্টমী। পূর্বাহ ৯-৫৮ মধ্যে মহাষ্টমীর কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমী বিহিত পূজা প্রশস্ত। রাত্র ১২-৩৫ গতে সন্ধিপূজা আরম্ভ, ১২-২৪ সন্ধিপূজা সমাপন। প্রতিবছরের মত এবারও নরসিংদী অগ্রণী সংঘে পূজা মন্ডপে মহাষ্টমিতে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী কুমারী পূজা। পাঁচ দিনের শারদ উৎসব শেষ হবে ১১ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে। দশমীদিন নরসিংদী শহরের স্বাধীনতা চত্বরে তৈয়ার করা হবে দশমী মঞ্চ। ওইদিন সকল মন্ডপের প্রতিমাগুলোকে এখানে একত্র করে বিষর্জ্জনের উদ্দেশ্যে পালাক্রমে একে একে দশমী ঘাটে নেয়া হবে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ দল বেঁধে পূজা দেখতে আসছে। উৎসবপ্রিয় বাঙালি মেতে ওঠে পূজার আনন্দে। বিকাল থেকেই পূজামন্ডপগুলোয় দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। বাহারী পোশাকে আর অঙ্গসজ্জায় নিজেদের সাজিয়ে রাঙ্গিয়ে উৎসব-আনন্দে মেতে উঠেছে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী। সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্ন পূজামন্ডপ ঝলমলে আলোকসজ্জায় রঙিন হয়ে ওঠে। আলোকসজ্জায় এবার আনা হয়েছে ভিন্নতা। এ ছাড়া মন্দিরে মন্দিরে শোনা যাচ্ছে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসা ও ঢাকের বাদ্য।
নরসিংদীতে হিন্দু স¤প্রদায়ের ৫ দিনব্যাপী প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় সাজানো হয়েছে। মন্ডপগুলোতে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পাশাপশি পূজা কমিটির নিদিষ্ট নিরাপত্তা কর্মী নিযুক্ত রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ মন্ডপেই মেটাল ডিটেকটিভের মাধ্যমে দর্শণার্থীদের তল্লাশী করে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে এছাড়া শহরের বেশ কিছু মন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
এ বছর নরসিংদী জেলায় মোট ৩১৬টি ম-পে পূজা হচ্ছে । এর মধ্যে নরসিংদী সদর ৫৮ টি, মাধবদী ৩৬টি, রায়পুরা ৫৬টি, শিবপুরে ৬৭টি, মনোহরদীতে ৩৮টি, পলাশে ৪২টি ও বেলাবতে ১৯টি মন্ডপে পূজা হচ্ছে ।
নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রফেসর সূর্য়কান্ত দাস। তিনি বলেন, সারাদেশের মানুষ বর্তমানে জঙ্গীবাদ আতংকে ভুগছে। তা সত্যেও এবছর নরসিংদী জেলা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশী সংখ্যক মন্ডপে পূজা উৎসব হচ্ছে। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পূজারি ও মা দূর্গার ভক্তবৃন্দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিও কাজ করছে।