Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1kখোলা বাজার২৪, রবিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০১৬:  তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্স যথেষ্ট সক্ষমতা থাকলেও বিদেশী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমকে দেশের স্থলভাবের ১০টি গ্যাসকূপ খননের কাজ দেয়া হয়। তাতে ওসব উন্নয়ন কূপ খননে ব্যয়ও হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু কূপ খননের দুই বছরের মধ্যে ৫টিতে গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। তারমধ্যে একটি কূপে নতুনভাবে সংস্কার কাজ (ওয়ার্কওভার) করতে হয়েছে। তাতে অতিরিক্ত ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আরেকটি কূপের ওয়ার্কওভার চলছে। বাকি কূপগুলো ওয়ার্কওভারে আরো দেড়শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অথচ গ্যাজপ্রমের খনন করা বাকি ৫ কূপ থেকে বর্তমানে মাত্র ৮৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষ বিধানে দরপত্র ছাড়াই ২০১২ সালে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে ওসব কূপ খননের কাজ দেয়া হয়েছিল। তাতে ব্যয় ধরা হয় দেড় হাজার কোটি টাকা। কূপের খনন ব্যয় অত্যধিক হওয়ায় তখনই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছিল। আর সম্প্রতি বাপেক্সেও এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্যাজপ্রমকে দিয়ে কাজ করানোর ফল আশানুরূপ হয়নি। বাপেক্স নিজেই ওই কাজ করলে ব্যয় অনেক কম হতো। আর বিশেষজ্ঞদের মতে দুই-তিন গুণ ব্যয়ে কূপ খননের পর দুই বছর না যেতেই গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হওয়ার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।

সূত্র জানায়, বিগত ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে গ্যাজপ্রম বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফসিএল) এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) মালিকানাধীন বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে ১০টি উন্নয়ন কূপ খনন করে। প্রতিটি কূপ খননে গ্যাজপ্রমকে ১৫৪ কোটি টাকার বেশি দিতে হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে ৫টি কূপেরই গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ওই কূপগুলোতে ওয়ার্কওভারের জন্য নতুন করে গড়ে ৫০ কোটি টাকা করে ব্যয় হবে। অর্থাৎ এককেকটি কূপের পেছনে মোট ব্যয় দাঁড়াবে দুইশ’ কোটি টাকারও বেশি। অথচ বাপেক্সের একটি উন্নয়ন গ্যাস কূপ খননে ব্যয় হয় ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা। আর অন্য বিদেশি কোম্পানির কূপ খনন ব্যয় সর্বোচ্চ ১১০ কোটি। বন্ধ হওয়া কূপগুলো তিতাস, শাহবাজপুর, সেমুতাং, বেগমগঞ্জ ও শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্রে অবস্থিত। ইতিমধ্যে জুলাই মাসে বাপেক্স তিতাস ২১ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভার করেছে। ওই জন্য বাপেক্সকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা দিয়েছে বিজিএফসিএল। তাছাড়া বাপেক্স শাহবাজপুরের কূপটির ওয়ার্কওভার করছে। সেটি চলতি মাসেই শেষ হতে পারে। বাকি তিন কূপেও পর্যায়ক্রমে ওয়ার্কওভার করা হবে।

সূত্র আরো জানায়, এদেশে স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির প্রয়োজন নেই। তবে জ্বালানি মন্ত্রণালয় মনে করে গ্যাসের উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে বিদেশি কোম্পানিকেও কাজ দেয়া উচিত। কারণ বাপেক্সের পক্ষে একা এতোগুলো কূপ খনন করা সম্ভব না। বাপেক্সের সেই জনবল, রিগসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি নেই। তাছাড়া আন্তর্জাতিক নানা সম্পর্কের কারণেও রাশিয়ার কোম্পানিকেই কাজ দেয়া যুক্তিযুক্ত মনে করেছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। কারণ এদেশের জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনের অংশগ্রহণ থাকলেও রাশিয়ার অংশগ্রহণ সেভাবে ছিল না। তাই গ্যাজপ্রমকে কাজ দেয়া হয়েছে। স্থলভাগে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেয়ায় বাপেক্সের সাথে একটা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। ফলে উভয় কোম্পানির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতায় কিছু ঘাটতি রয়েছে। গ্যাজপ্রমকে গত বছর আরো ৫টি কূপ খননের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওগুলোর জন্য কূপপ্রতি দেড় শতাধিক কোটি টাকা দিতে হচ্ছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটিকে। তাছাড়া সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে স্থলভাগে ৩০ থেকে ৩৫টি নতুন কূপ খনন করতে চায়। ওই প্রকল্পগুলোতেও গ্যাজপ্রম কাজ পেতে আগ্রহী বলে জানা যায়।

এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন- অধিক ব্যয়ে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেয়ার মাঝেই প্রশ্ন রয়েছে। তা তদন্ত হওয়া উচিত। বাপেক্সে বা অন্য কোনো বিদেশি কোম্পানিকে দরপত্রের মাধ্যমে ওই কাজ দিলে অর্ধেক ব্যয়েই আরো বেশি সুফল পাওয়া যেত। গ্যাজপ্রম নিজে কাজ না করে ঠিকাদারি কোম্পানিকে দিয়ে কাজ করিয়েছে। এখন গ্যাসকূপ বন্ধ হওয়ার পেছনে কারিগরি ত্রুটি থাকলে তার দায় অবশ্যই গ্যাজপ্রমকে নিতে হবে। কিন্তু গ্যাজপ্রমকে কোম্পানিগুলোর নির্বাচিত স্থানে কূপ খনন করতে হয়েছে। ওই নির্বাচিত স্থান সমস্যার কারণে উৎপাদন বন্ধ হলে তার দায় গ্যাজপ্রমের ওপর কম বর্তায়। এদেশে স্থলভাগের উন্নয়ন কূপ খননের জন্য বাপেক্সই যথেষ্ট। এখানে বিদেশি কোনো কোম্পানিকে নিয়োগ করা দেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানি দ্রুত নিয়োগ দেয়া উচিত। কারণ সেখানে বাপেক্সের কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

অন্যদিকে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেয়া প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানানা। তবে গ্যাজপ্রম সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান- গ্যাজপ্রম বিশ্বের অন্যতম তেল গ্যাস কোম্পানি। সব ধরনের আন্তর্জাতিক মান মেনে চুক্তি অনুসারেই কূপ খনন করা হয়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়া বা বন্ধ হওয়ার জন্য কূপের স্থান নির্বাচনই দায়ী। বাপেক্স ও বিজিএফসিএল যেসব স্থানে কূপ খনন করতে বলেছে সেখানেই কূপ খনন করা হয়েছে। আর কূপ খননের জন্য বাপেক্স, পেট্রোবাংলার কাছে সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত বার বার চাওয়া হয়েছিল। তারা বলেছিলেন প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সবাই মিলে বিশ্লেষণ করে কূপ খনন করা হোক। কিন্তু তাদের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বলা হয়েছে নির্ধারিত স্থানেই কূপ খনন করতে হবে।