Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
1456989492

খোলা বাজার২৪, রবিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০১৬: বিএনপির সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত দলীয় নেতা ও সাবেক এমপিদের এবার দলের ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এ কারনে সুযোগ আসছে সংস্কারপন্থীদের মাঠে থাকার । নীতি নির্ধারনের এক নেতা বললেন, তারা যদি বিএনপির বিরুদ্ধে কথা না বলেন, আন্দোলনে সংগ্রামে নিয়মিত অংশগ্রহন করেন, তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্ব-স্ব আসনে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

একটি সূত্রের দাবি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে সংস্কারপন্থী নেতাদের এই আশ্বাস দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহম্মদ শাহজাহান। এই দুই নেতা বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেননি।

তবে সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত অন্তত সাতজন সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মির্জা ফখরুল ও মোহম্মদ শাহজাহান তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সংস্কারপন্থীদের অনেক প্রলোভন দিয়েও গত নির্বাচনে সরকার নিতে পারেনি। এছাড়া তারা বিএনপির রাজনীতি করেই এমপি হয়েছেন রাজনীতিতে এসেছেন ফলে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবেন, এটিই স্বাভাবিক। তবে এটির প্রক্রিয়া চলছে।

বিএনিপর ভাইস চেয়ারম্যান মোহম্মদ শাহজাহান জানান, ‘‘বিএনপি চেয়ারপারসন পজেটিভ মানসিকতার নেতা। তিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান। ফলে সংস্কারপন্থী কিংবা জাতীয়তাবাদী শক্তির সবাই বিএনপির সঙ্গে থাকবেন।‘আলাপ-আলোচনা অব্যাহত আছে। দেখা যাক কী হয়!’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন, জহিরউদ্দিন স্বপন, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, মফিকুল হাসান তৃপ্তি ও ডা. জিয়াউল হক মোল্লাসহ সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় বিএনপি নেতাদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতাদের অন্তত তিনজন স্বীকার করেন, বিএনপির দুই নেতা তাদের ফোন করেছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপি নেতাদের আশ্বাসের পর সংস্কারপন্থী নেতারা নিজেদের মধ্যে দফায়-দফায বৈঠক করেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন, বিএনপিতে ফিরলে সবাই একসঙ্গে ফিরবেন। তাদের মধ্যে এ আলোচনাও হয় যে, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও খালেদা জিয়া নির্বাচনে না যাওয়ার শর্তে তাদের বিএনপিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কথা রাখেননি। ফলে এবারের আশ্বাসের ওপরও পুরোপুরি নির্ভর করা ঠিক হবে না। বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ঐক্য ধরে রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেন তারা।

২০০৭ সালের ২৬ জুন ১৫ দফা সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করে তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এবং তাকে সমর্থনকারী নেতারা সংস্কারপন্থী বলে বিএনপিতে পরিচিতি লাভ করেন। ওই বছরেরই ৩ সেপ্টেম্বর মান্নান ভূঁইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হলে সংস্কারপন্থীরা তার নেতৃত্বে তৎপরতা চালাতে থাকেন। কার্যত তখন থেকেই বিএনপিতে সংস্কার ও অসংস্কারপন্থী দুটি ধারা তৈরি হয়। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মহাসচিব হওয়ার পর বিভেদ আরও বাড়ে। কারণ তিনি ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠনের নামে সংস্কারপন্থীদের বিতাড়িত করেন। বিশেষ করে মান্নান ভূঁইয়ার সমর্থকদের দলে তিনি কোণঠাসা করেন। এদিকে মান্নান ভূঁইয়ার মৃত্যুর পর সংস্কারপন্থীরা কার্যত নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েন। যদিও তার সমর্থক অর্ধ শতাধিক সাবেক সংসদ সদস্য ও নেতা এখনও বিএনপির বাইরে রয়ে গেছেন। গত দুটি নির্বাচনে তারা মনোনয়ন পাননি। পাশাপাশি বিএনপির কোনও কর্মকান্ড এবং কমিটিতেও তাদের নাম নেই।

সূত্র জানায়, এই নেতাদের মধ্যেই ১৮ জন বিএনপির কাছে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন যে, তারা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির সঙ্গেই থাকতে চান। ৫ জানুয়ারির আগে সাদেক হোসেন খোকার বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তারা ওই অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন। যা পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়ার কাছে দেওয়া হয়। সংস্কারপন্থী ওই নেতাদের পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে স্ব-স্ব এলাকায় গিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া। শুধু তাই নয়, অনেক পৌরসভায় প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে সংস্কারপন্থীদের পরামর্শও নেওয়া হয়। এরপর খালেদা জিয়ার নির্দেশে তারা বিএনপি-প্রার্থীর পক্ষে কাজও করেন বলে জানা যায়। কিন্তু সর্বশেষ অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের পরে গত ৩ আগস্ট ঘোষিত কমিটিতে নাম না থাকায় সংস্কারপন্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন।

সূত্রমতে, তাদের এই তৎপরতার কথা খালেদা জিয়াকে অবহিত করেন বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। তারা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের সময় বিএনপির অনুরোধেই সংস্কারপন্থী সাবেক অন্তত অর্ধ শতাধিক সংসদ সদস্য নির্বাচনের বাইরে ছিল। পাশাপাশি ওই সময় তারই নির্দেশে সাদেক হোসেন খোকার বাসায় বৈঠকসহ সার্বিক বিষয়ে খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সিনিয়র নেতারা। খালেদা জিয়াকে তারা আরও বলেন যে, বিএনপিতে ফিরিয়ে নেওয়া না হলে সরকার আগামী নির্বাচনে সংস্কারপন্থীদের কাজে লাগাতে পারে। সিনিয়র নেতাদের ওই মতামতের কারণেই মির্জা ফখর“ল ইসলাম আলমগীর ও মোহম্মদ শাহজাহানকে সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়া।

উল্ল্যেখ্য সংস্কারপন্থীদের বড় একটি অংশ বিএনপিতে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকা, ড, ওসমান ফারুক, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, শাহ মোহম্মদ আবু জাফর, আসাদুল হাবিব দুলু, মাসুদ অরুণ, মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, শামসুল আলম প্রমানিক, রেজা আহমেদ বাচ্চু, শহিদুজ্জামান বেল্টু, মোজাহের হোসেন, নাসির“ল হক সাবু, ড. সালেক চৌধুরী ও কাজী রফিকসহ অনেকেরই নাম রয়েছে। তবে সংস্কারপন্থী বলে পরিচিতি লাভ করায় দলে তারা কাক্সিক্ষত পদ পাননি।সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন.