ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) বিজয় কুমার সিং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বলেন, অখন্ড যোগাযোগ ও নিরাপদ এশিয়া গঠনে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে।
গতকাল থাইল্যান্ডের বাংককে শুরু হওয়া দ্বিপাক্ষিক এসিডি সম্মেলনে (সামিট) যোগ দিয়ে তারা সাইডলাইনে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন আজ শেষ হচ্ছে।
তারা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় এবং সড়ক ও রেল যোগাযোগ প্রকল্পে আঞ্চলিক সহযোগিতার চতুর্পক্ষীয় ফোরাম বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল (বিবিআইএন) ও বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার (বিসিআইএম)-এর সম্পর্কযুক্ত বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের দুই দেশের মানুষের পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগ ও জ্বালানি নিরাপত্তা এজেন্ডায় সামনের দিকে অগ্রসর হতে চায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে এসিডি ও অন্যান্য আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামে কাজ করবে।
তিনি পুনরায় আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য নবম জিএফএমডি সম্মেলনে (সামিট) ভারতকে আমন্ত্রণের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন এবং এ ব্যাপারে সম্মেলনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব সম্পর্কে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অভিবাসীদের কল্যাণে কিছু প্রস্তাব তৈরি করেছেন। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইয়েমেন থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকদের ফেরত আনার ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য ভারতের প্রতিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশ ও ভারতের অভিবাসী শ্রমিকদের বৃহত্তর স্বার্থে তারা একযোগে কাজ করবেন বলেও সম্মত হন।
একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রামে তার সফরের দায়িত্বের কথা স্মরণ করে বিজয় সিং সন্ত্রাস প্রতিরোধ, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও আসিয়ান সংলাপ পার্টনারশিপে একাত্তরের মতোই ভারত বাংলাদেশের প্রতি তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
এর আগে শাহরিয়ার এসিডি সম্মেলনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং সে দেশের জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. থানি বিল আহমেদ আল-জাউদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন এবং নবায়নযোগ্য ও টেকসই জ্বালানি প্রযুক্তি বিষয় কারিগরি সহায়তা নির্বাচনসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সে দেশে শ্রমবাজার পুনরায় চালু ও অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
ইউএই মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবেলায় এবং সৌরশক্তি ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশ আবুধাবী ফান্ডের সুবিধা নিতে পারে। বাংলাদেশের প্রতিমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং তাকে অবহিত করেন যে, বাংলাদেশে ৪০ লাখ বসতবাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ রয়েছে, যা এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
ইউএই মন্ত্রী ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আবুধাবিতে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রী পর্যায়ের এসিডি টেকসই জ্বালানি বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশে ইউএই প্রতিনিধিদের নির্ধারিত সফরের কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার আশা প্রকাশ করেন যে, তারা (ইউএই) বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য শ্রমবাজার খুলে দেবে।
এ ব্যাপারে ইউএই মন্ত্রী বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেন, সে দেশে কৃষি ও মৎস্য সেক্টরে বিদেশী শ্রমিকদের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগের ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে। প্রতিমন্ত্রী আগামী ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য রফতানি মেলায় বাংলাদেশকে কিছু ভাল স্টল বরাদ্দের জন্যও অনুরোধ জানান।
থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক দুটিতে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ভারত ও ইউএই’র রাষ্ট্রদূতও সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বৈঠককালে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রতিমন্ত্রী এসিডি বিজনেস কানেক্ট ফোরামে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাতলুব আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করছে।