Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
index

খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬: হঠাৎ অস্থির চালের বাজার। গত চার মাসে দফায় দফায় চালের দাম বেড়েছে। চিকন চালে কেজিপ্রতি দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৩-৪ টাকা। এছাড়া মোটা চালের দর বৃদ্ধি পেয়েছে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা।

গত রোজার ঈদের আগে মোটা যে চালের দর ছিল ২৪/২৫ টাকা সে চালের দাম এখন ৪০ টাকা।রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় খুচরা চাল বিক্রেতা মো. হারুন অর রশীদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘দাম নিয়ে লিখে কী হবে। কোনো সমাধান তো হবে না।’

‘প্রতিবারই বাড়তি দাম দিয়ে চাল কিনতে হয়। আমরাও বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে চাল বিক্রি করছি। এ ছাড়া তো উপায় নেই’— বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি এখন রশিদের মিনিকেট প্রতিকেজি বিক্রি করছি ৫২ টাকা যা ১০ থেকে ১২ দিন আগেও ছিল ৪৮ টাকা, আটাশ চাল বিক্রি করছি প্রতিকেজি ৪৬ টাকা যা ছিল ৪২ টাকা, সাকির মিনিকেট এখন ৪৫ টাকা আগে ছিল ৪২ টাকা, পাইজন এবং গুটি স্বর্ণা প্রতিকেজি ৪০ টাকা আগে ছিল ৩৬।

চাল বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই।’তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, চালের দাম তেমন বাড়েনি। দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে।

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চালের দাম খুবই কম বাড়ছে। পদক্ষেপ নেওয়ার মত এখনো সময় আসেনি।চার মাস যে চালের দাম ছিল ২৪-২৫ টাকা তার দাম এখন ৪০ টাকা দাম বৃদ্ধির এ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে প্রোডাকশন কস্ট কত? সেই তুলনায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। দাম আরো বাড়ার দরকার ছিল।’

চালের দাম বৃদ্ধি বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাড্ডার আরেক খুচরা বিক্রেতা বলেন, ‘এ বিষয়ে আর কী বলব। গত কয়েক মাসে যে কয়বার চাল আনতে গেছি তার বেশিরভাগ সময়েই আগের থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হয়েছে।’দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমরা বলতে পারব না। আমরা চাল কিনি কারওয়ান বাজার থেকে।’

চাল কিনতে আসা বাড্ডা এলাকার এক গৃহিনীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‍‘শুধু চাল কেন? কোনো জিনিসের দাম বাড়ছে না বলুন? আটাশ চাল আগে কিনেছি ৩৭ টাকা, এখন তা ৪৫-৪৬ টাকা। এগুলো দেখার কেউ নেই।’

কারওয়ান বাজারে চালের পাইকারি বিক্রেতা নূর আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মিনিকেট প্রতিকেজি বিক্রি করছি বিভিন্ন প্রকারভেদে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা যা ১০ থেকে ১২ দিন আগে ছিল ৪৪ টাকায় বিক্রি করেছি। ২৮ নম্বর বিক্রি করছি প্রতিকেজি ৪২ থেকে টাকা যা ছিল ৩৬ টাকা, মোটা চাল প্রতিকেজি ৩২ থেকে ৩৪ টাকা যা আগে ছিল ২৮ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘২৮ আর মোটা চালের দাম বেশি বেড়েছে। কী কারণে বেড়েছে এটা আমরা বলতে পারব না। কারণ আমরা যেসব মিল থেকে চাল কিনে আনি সেখানে দামাদামির কোনো সুযোগ নাই। তারা যেই দাম ঠিক করে দেবেন সেই দামেই আনতে হয়।’

এই বাজারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছক আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘আমি মিনিকেট ৪৮ টাকা, নাজির বিভিন্ন প্রকার ভেদে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ২৮ চাল ৪১ থেকে ৪২ টাকা বিক্রি করছি।’পুরান ঢাকার মৌলভী বাজারের চাল বিক্রেতা সামছু মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কী আর বলমু ব্যবসা ছেড়ে ভাবছি গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে চলে যাব।’

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের আরেক চাল বিক্রেতা মো. রফিক জানান, চিকন চালের দাম তো বেড়েছেই। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মোটা চালে। গত রোজার ঈদের পর থেকে কেজিপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ টাকা বাড়ছে।

দফায় দফায় চাল বৃদ্ধির এ প্রবণতায় নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে। দিন দিন ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্যের দাম। বাবু বাজার এলাকার রিক্শা চালক মনিরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় লেইখ্যা কী অইব কন? আপনি কন এহন চালের দাম কতই গিয়া ঠেকল? কোন জিনিসের দাম বাড়ে নাই কন?’

বাবু বাজারে মেসার্স বাবু বাজার এজেন্সীর পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. বাদল হোসেন বলেন, ‘রোজার ঈদের পর থেকে চালের দাম বাড়তেছে। মোটা গুটি চাল এখন বিক্রি করতেছি ৩৬ টাকা আগে ছিল ২৪ টাকা, ২৮ নম্বর এখন প্রকারভেদে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা আগে ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা, মিনিকেট প্রকারভেদে ৪২ থেকে ৪৬ টাকা আগে ছিল ৩৮ থেকে ৪২ টাকা, জিরা নাজির প্রকারভেদে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা আগে ছিল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা।’

চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাবু বাজারের আরেক দোকান বলাকা এন্টারপ্রাইজে গিয়ে কথা হয় বিক্রেতা সেলিম মিয়ার সঙ্গে। চালের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিল মালিকদের সিন্ডিকেট আছে। সরকারের উচিৎ এগুলোর খোঁজ নেওয়া। কারণ সেখানে আমরা কোনো কথা বলতে পারি না। তারা চালের যে দাম ঠিক করে দেয় সেই দামেই আমাদের আনতে হয়।’

‘এছাড়া মনে করেন ১ বস্তায় চাল থাকে ৫০ কেজি। কোনো কারণে বস্তায় ১০ টাকা বাড়লে খুচরা বাজারে কিন্তু সেটা কেজিপ্রতি ১ টাকা বেড়ে যায়। তারপর যখন আবার বস্তায় ১০ টাকা কমে তখনে কিন্তু খুচরা বাজারে তার দাম কমে না। এমন করেও কিন্তু চালের দাম বাড়ে। খুচরা বাজারে গিয়ে খোঁজ নিলে দেখবেন তারা প্রতিকেজি চালে ৫ থেকে ৬ টাকা লাভ করে’ যোগ করেন সেলিম।