Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
 resize909
খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬: ক্ষয়ে  যাওয়া হাঁটু নিয়ে সমস্যায় পড়েন অনেকে। কি করা উচিত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে মনে নানা দ্বন্ধ। প্রতিস্থাপন কখন করা উচিত এনিয়েও নানা মত। বুড়ো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা। তবে চিকিত্সা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডাক্তার ও রোগীরা সীমারেখা অনেক বেশি টেনেছেন। বর্তমানে কৃত্রিম জানু প্রযুক্তি ও সার্জিক্যাল কৌশলের ক্ষেত্রে এত উন্নতি হয়েছে যে প্রতিস্থাপন এখন অনেক বেশি দিন টিকেছ ২০ বছর বা এরও বেশি। তবু ডাক্তাররা এখনও প্রতিস্থাপনের রোগীদেরকে অসুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। ফলে অনেক রোগী তাদের জানুসন্রি কোমলাস্থি পুরোপুরি ক্ষয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে চলেছেন।
এভাবে তারা গৃহবন্দী হয়ে পড়েন, জানুতে প্রচণ্ডব্যথা নিয়ে হন শয্যাশায়ী। সমস্যা হলো, রোগী যারা অনেক দিন অপেক্ষা করেন, তারা এত রুগ্ন হয়ে পড়েন যে, সেরে উঠা কঠিন হয়ে পড়ে। হাঁটুর কার্যক্ষমতা ফিরে পাওয়াও সম্ভব হয়না। ডেলাওয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যালথেরাপি বিভাগের  অধ্যাপক লিন স্নাইডার বলেন, খুব দীর্ঘসময় অপেক্ষা করলে এমন এক বিন্দুতে  উপনীত হওয়া যায় যখন ফিরতি পাওনা ক্রমে কমে যেতে থাকে। একটির জন্য অন্যটির অসুখ হয় জীবনসঙ্গী। উন্নতদেশের পরিসংখ্যান মতে, পূর্ণবয়স্ক পাঁচ জনের মধ্যে একজনের থাকে আথ্রাইটিস বা হাড়ের গিটের কুনিক ব্যথা। মানুষের বয়স যত বাড়ে, কোমলাস্থি ক্ষয়ে যেতে থাকে, ফলে প্রদাহ হওয়াতে ফোলা হয়, ব্যথা হয় এবং নিশ্চল হয় সন্ধি। বিশেষ চাকুরী বা এমন কোনও ক্রীড়া যার জন্য বিশেষ হাড়ের গিটে বারবার সঞ্চলন ঘটে, এতে সেই হাড়ের গিটে হয় আথ্রাইটিস।
পারিবারিক ইতিহাস ও ওজন বৃদ্ধিরও ভূমিকা রয়েছে। তবে আথ্রাইটিস সূচিত হলেই হাড়ের গিটের প্রতিস্থাপন অবস্যম্ভাবী হয়না। ব্যথা ও প্রদাহের চিকিত্সা আশানুরূপ হলে কর্মক্ষমতা দীর্ঘদিন থাকে। বেদনাহর ওষুধ এবং গ্লুকোস্যামাইন ও কনড্রয়াটিন এর মত সাপ্লিমেন্ট দিলে উপসম হয়। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখলে জানুতে আথ্রাইটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়। মাঝারি ধরনের ব্যায়ামে কিছু কাজ হয়।
সার্জারির ব্যাপারে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি দিন অপেক্ষা করেন। হয়ত দুর্বল হয়ে যাওয়া হাড়ের সীমারেখা একা গ্রহণ করতে পারেন বেশিক্ষণ। জার্নাল অব্ বোনএণ্ড জয়েন্ট সার্জারিতে ২০০৯ সালের শেষদিকে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে ডা. স্নাইডার ম্যাকলেরার ও সহকর্মীরা ৯৫ জন পুরুষ  ও ১২৬ জন নারী যাদের জানু প্রতিস্থাপনের কথা এদের উপর গবেষণার কথা জানান। দেখা গেল পুরুষদের তুলনায় নারীদের সার্জারি বেছে নেওয়ার প্রস্তুতির সময় শারীরিক অবস্থা ও হাড়ের গিটের অবস্থায় অনেক বেশি খারাপ ছিল।
অন্য দিকে ক্যানাডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন র্জানালে রিপোর্ট বেরুলো ডাক্তাররা নারীদের চেয়ে পুরুষদের অনেক বেশিবার সার্জারির পরামর্শ দিয়েছিলেন। টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একজন পুরুষ ও একজন নারী বেছে নিলেন, দুজনেরই বয়স ৬৭, যাদের জানুতে ওস্টিওআথ্রাইটিস ছিল একই মাপের। এদের প্রত্যেকে ২৯ জন অর্থোপেডিক সার্জন ও ৩৮ জন পারিবারিক চিকিত্সকের কাছে ভিন্নভাবে গেলেন। যদিও তারা উভয়েই একই রকম উপসর্গের কথা বললেন তবুও দুইতৃতীয়াংশ ডাক্তার পুরুষকে দিলেন জানু প্রতিস্থাপনের পরামর্শ, অথচ কেবল একতৃতীয়াংশ মনে করলেন যে নারীদের জন্যও এটি প্রযোজ্য।
ভিনদেশী ষাট উর্দ্ধ একজন নারীর বক্তব্য, বছরের পর বছর যন্ত্রণা ভোগের পর তার ডাক্তাররা তাকে জানু প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিলেন, সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়ার পরও ডাক্তাররা এব্যাপারে মত দিতে দ্ধিধান্বিত ছিলেন, বলছিলেন সে ভদ্রমহিলা, নামটাও বলেফেলি, ক্রেগম্যাসন, তিনি বললেন, আমার গৃহচিকিত্সক বলতেই চাচ্ছিলেন না যে অপারেশন করা হোক, শেষে ডাক্তারকে ভয় দেখিয়ে বললাম, এবার যদি না করেন তবে মজা দেখাবো।
২০০৮ সালে মিসেস ম্যাসনের সার্জারি হলো। সেরে উঠতে একটু কষ্ট হলো। তবে জানুতে যে ক্রনিক ব্যথা ছিল, তাতো থাকলোইনা, সার্জারি ও ফিজিক্যাল থেরাপির ব্যথা ক্রমে উরে গেল। তবে পুরো জানু প্রতিস্থাপন সবার জন্য নয়, ডাক্তাররা বলেন, রোগীদের চল্লিশ/পঞ্চাশ বছর বয়সেও জানুর আংশিক প্রতিস্থাপন বা অন্য অর্ন্্তবর্তী সার্জিক্যাল চিকিত্সা চলতে পারে। কখনও কখনও  রোগীরা নিজেও সার্জারি করাতে দেরি করেন। মনে করেন সেরে উঠতে অনেক সময় লাগবে, পছন্দের কাজকর্ম ছেড়ে দিতে হবে। অথচ সার্জারি করেও অনেকেই স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যাচ্ছে।