খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬: সব অপশক্তি বিনাস করে কল্যান প্রতিষ্ঠায় দেবী দূর্গা মর্তোলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হল হিন্দু ধর্মালম্বীদের শারদীয় দূর্গোৎসব। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া ইছামতি নদীর তীরে মঙ্গলবার গড়ে উঠেছিল ঐতিহ্যবাহী শতাব্দী প্রাচীন বউমেলা। দিনভর বৃষ্টির মধ্যেও এই বউমেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উচচেপড়া ভীড়। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা আর নানা আনন্দ আয়োজনে দেবী দূর্গা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এক দিনের বউমেলার অনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
সরেজমিনে জানা যায়, ধুনট পৌরসভার ছোট একটি গ্রাম সরকারপাড়া। ওই গ্রামে শতভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস। গ্রামের র্পূব পাশ দিয়ে বহমান ইছামতি নদী। নদীতে ধুনট সদর, চরধুনট, দাসপাড়া ও মালোপাড়া সহ আশপাশের প্রতিমা এক সাথে বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা বির্সজন উপলক্ষে লোকজনের সমাগম বেশী হওয়ায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ওই গ্রামে মেলা বসেছিল। বেলা গড়ার সাথে সাথে শতাব্দী প্রাচীন এ মেলায় দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। সব বয়সের উৎসুক মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়। ধুনট সদর থেকে পূর্ব দিকে মেলার দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। ওই রাস্তাটি জুড়ে উপচেপড়া মানুষের ভীড়, রিকসা, ভ্যান আর মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি। মানুষের ভীড়ে থেমে যায় যানবাহনের চাকা। ঠেলাঠেলি করে পথ পাড়ি দিতে হয়েছে মেলায় আগত লোকজনকে। মেঘলা আকাশে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যেও অনেকে পায়ে হেঁটে মেলায় পৌঁছেছে। গ্রামীন সড়ক জুড়ে ছিল মানুষের কোলাহল। শিশুর হাতে মেলার বাঁশি। হাওয়ায় ভাসা রঙ্গিন বেলুন। নব সাঁজে বঁধুর ঘোমটার ফাঁক দিয়ে উকি মারছে সিথির সিঁদুর। গ্রামটি যেন হঠাৎ করে জেগে ওঠে কোন এক অজানা পরশে। বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজাকে ঘিরে সরকারপাড়া হয়ে ওঠে এক উৎসবমুখর গ্রাম। মেলায় হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজন আসে ভক্তি আর মানত নিয়ে। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকজন আসে আনন্দ উৎসব করতে। মূহুর্মূহু উলুধ্বনি, সাঁকের আওয়াজ, ঢাক কাঁসরের তালে তালে চলে আরতির নাঁচ। ধূপের সরভিত ধোঁয়া, বাতাসে নাড়–-সন্দেস-মিষ্টির গন্ধ আর সাউন্ড বক্রের হাই ভলিয়মের শব্দ মেলার উৎসবের আমেজ। সবঅপশক্তি বিনাস করে কল্যান প্রতিষ্ঠায় দেবী দূর্গা মর্তোলোক ছেড়ে এক বছরের জন্য চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখাই এই মেলার প্রধান আকর্ষন। বিজয় দশমীতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মেলার সমাপ্তি হয়। যুগযুগ ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। দিন বদলের সাথে সাথে মেলার রুপ, মাধুর্যের পরিবর্তন ও প্রসার ঘটছে।
মেলায় আগত ক্রেতা সুরভী রানী, আরতী রানী ও কুলসুম বেগম জানায়, মেলার ভিতরে পুরুষ লোক না থাকায় অনেক সাচ্ছন্দে কেনাকাটা করেছি। দামও কিছু হাতের নাগালের মধ্যে রয়েছে। তবে বৃষ্টি কারনে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
মেলা কমিটির সভাপতি নিতাই চন্দ্র দেব জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড় ছিল। শান্তিপূর্ন পরিবেশে মেলা শেষ হয়েছে। মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল রাখতে পুলিশ মোতায়েন ছিল এবং এলাকাবাসীর অনেক সহযোগীতাও ছিল।