খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৬: কাশ্মির মুক্ত নাহওয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদের অবসান হবেনা বলেমন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, চীনকে কাশ্মিরিদের পাশে দাঁড়াতেহবে, ভারতের মাওবাদী আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। একইভাবে উলফা, মনিপুরি, অরুণাচল থেকে মেঘালয় পর্যন্ত যে স্বাধীনতা আন্দোলনচলছে, তাদের পাশেও দাঁড়াতেহবে।
ঢাকারিপোার্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) চীনের প্রেসিডেন্ট শিজিনপিং-এর বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে ‘‘চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কেও ৪ দশক’’শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনিএসবকথাবলেন। বাংলাদেশ ন্যাশনালআওয়ামীপার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ এই আলোচনাসভারআয়োজনকরে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ডা. জাফরুল্লাাহ চৌধুরী বলেন, চীনকে ১৯৭১ সালের মতো ভুল করলে চলবেনা। সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা পৃথিবীর অমঙ্গল বয়ে আনবে। মানুষের প্রাণহানিহবে। ভারতের আধিপত্যবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান দেখতে পেয়েছিলেন ভারতেরআধিপত্যবাদী চেহারা, দেখেছিলেন রক্ষীবাহিনীর চেহারা। এজন্য তিনি ৭২ সালেরসংবিধানে একটি ধারা করেছিলেন, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে স্বাধীনতাকামীদের আমরা (বাংলাদেশ) সমর্থন দেব। তাইযদি দিতেহয়তাহলেআমাদের দরজাউলফারজন্য খুলেদিতেহবে। আমাদের দরজামনিপুর ও মেঘালয়বাসীদের জন্য খুলেদিতেহবে। ঠিক যেভাবে খোলাছিল শেখমুজিবুররহমানেরআমলে। বঙ্গবন্ধুর আমলেওউলফার ট্রেনিংবাংলাদেশে অব্যাহতছিল। জিয়াউররহমান ও এরশাদেরআমলেওউলফারট্রেনিংঅব্যাহতছিল। কিন্তু‘,দুর্ভাগ্য খালেদা জিয়াআমল থেকে ভারতীয়রা এটি বন্ধকওে দিয়ে আমাদের কণ্ঠ রোধকরছে।
বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি‘র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মে,জর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাতীয় দল চেয়ারম্যান এডভোকেট এহসানুল হুদা, ন্যাপ প্রেসিডিয়াম সদস্য সাদ্দাম হোসেন, ব্যারিষ্টার মশিউর রহমান গাণি, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ নুরুল আমান চৌধুরী, সম্পাদক মোঃ কামাল ভুইয়া, মতিয়ারা চৌধুরী মিনু, নগর সদস্য সচিব মোঃ শহীদুননবী ডাবলু, নারী নেত্রী বাসন্তি বরুয়া বাবলী, আবদুল্লাহ আল কাউছারী, জিল্লুর রহম,ান পলাশ প্রমুখ।
ডঃি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল, সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু, ভুলে গেলে চলবেনা, তাদের দুর্যোগ অব্যবস্থাপনারকারণেএর ১০ লাখ লোক মারা গিয়েছিল। তাদের তালিকা আজপর্যন্ত ভারত আমাদেও কাছে স্থান্তও রকরেনি। রেডক্রসকে সে তালিকা দেয়নি। অনেকেযে ৩০ লাখ ৩০ লাখ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ) বলছেন, তারমূল কোথায়? সেটা আড়াল করতে ভারতীয় প্রচারণায় মুক্তিযুদ্ধে সেই শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করতেদিতেআগ্রহীনয়। ৩০ লাখশহীদের নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকরাহলেতাদের স্বজনরাবলতেপারবেআমারবাবা, আমার দাদা মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু‘ এটা করতে সরকার উৎসাহিত নয়। অথচ তারা ৩০ লাখশহীদ (সংখ্যা)নিয়ে খেলছে। এর মূল কারণ এটা ভারতীয় চক্রান্ত। ভারত জানে শহীদদের তালিকা করলেভারতের শরনার্থী শিবিরে যে ১০ লাখ বাংলাদেশিমারাগিয়েছিল, সেটা সামনে চলে আসবে।
চীন বাংলাদেশের সব চেয়ে ভালবন্ধু উল্লেখ করে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ১৯৭১ সালের ঘটনাকে বড় করে দেখাতে চায় অনেকে। কিন্তু‘, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবেনা। আমাদের মুক্তি সংগ্রামে ভারত উড়ে এসে জুড়ে বসে মুক্তিযুদ্ধকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল। ভারতীয়আধিপত্যবাদী নীতির কারণেই চীন মুক্তিযুদ্ধের সময় সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেছিল।তবে চীনকে বলবো-ব্রিকস সম্মেলনে আপনারা এই অঞ্চলের অবহেলিত মানুষগুলোর পক্ষে কথাগুলো বলুন। আন্তঃ নদী সংযোগ প্রকল্পসহভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলুন। বিগত সরকারগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা এক দিকে চীনের বন্ধুত্ব কামনা করবো আবারক্ষমতায়গিয়ে চীনের বিরুদ্ধে যাব-এটাহতে পারেনা। বাংলাদেশের জনগণসবসময় এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতিক বলেন,মানুষ সমাজে বটগাছের আশ্রয় খোঁজে, পাখিও খোঁজে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। সামাজিক, সাংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু প্রয়োজন। চীন আমাদের সেই পরীক্ষিত বন্ধু। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি চীনকে পরীক্ষিত বন্ধু মনে করে। তার সফর বাংলাদেশে ররাজনীতিতে দীর্ঘ প্রভাববিস্তার করবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেবেল রহমান গানি বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলদেশের যে দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে, চীন প্রেসিডেন্টের এই সফর দুই দেশের মধ্যে সেই সম্পর্ক জোরালো করতে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে এক মাত্র চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলেই উপকৃত হবে। নইলে অন্য যেকোনো দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বর্তমানে যে ভাবে আগ্রাসনের শিকার হয়েছে সেভাবে আগ্রাসনের শিকার হবে। চীনের দায়িত্ব মানবতার দিকেতাকিয়ে বাংলাদেশকে আগ্রাসির জিঞ্জির হতে রক্ষা করবে।
চীনা প্রেসিডেন্টের আসন্ন বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরো বেশি শক্তিশালী করবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, কাশ্মির ও রোহিঙ্গা ইস্যুও সমাধান ছাড়া জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়।
গভায় মূল বক্তব্যে এম, গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী ও চীনের মহান নেতা মাও সেতুংয়ের ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে চীনের সাথে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তা আরো শক্তিশালী করতে হবে।