Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ মঙ্গলবার, ১৮অক্টোবর, ২০১৬: তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেছেন, উন্নয়নের নামে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে সুন্দরবন ধ্বংসের উন্মাদনা চালাচ্ছে সরকার। এই উন্মাদনা থেকে সরে আসতে দেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা বিজ্ঞানসম্মত তথ্য-উপাত্ত সরকারের সামনে তুলে ধরছে। কিন্তু সরকার এই প্রকল্প করার ব্যাপারে এখনো অনড় আছে। সরকারের পক্ষ থেকে উল্টো রামপাল প্রকল্পের পক্ষে অনেক যুক্তি-তথ্য তুলে ধরলেও ইউনেসকো এসব ‘কুযুক্তি’ আমলে নেয়নি। তারা এই প্রকল্প বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সোমবার বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ আয়োজিত ‘রামপাল প্রকল্পের বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন।

জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব মনে করেন, এখনই রামপাল প্রকল্প বাতিলের সবচেয়ে ভালো সুযোগ পেতে পারে সরকার। দেশের বেশির ভাগ মানুষ ও বিশেষজ্ঞ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে—এই যুক্তি তুলে ধরে সরকার ভারতকে ‘না’ বলতে পারে। কেননা প্রকল্পের অর্থায়ন ও অন্যান্য অবকাঠামোর কাজ শুরু হয়ে গেলে তা থেকে সরে আসা কঠিন হবে। কারণ, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি রয়েছে, তাতে একটি রাষ্ট্র যদি মাঝপথে এসে মনে করে এর কারণে তার ক্ষতি হচ্ছে; তখন আর তার ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না।

আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল বাশার বলেন, দেশে যত মধু উৎপাদিত হয়, তার অর্ধেক হয় সুন্দরবনে। এই মধু উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করে একধরনের মৌমাছি। এই মৌমাছিটি সুন্দরবনের বেশির ভাগ বৃক্ষের পরাগায়ন ঘটায়। এই প্রাণীটি এতই সংবেদনশীল যে সামান্য দূষণের ঘটনায় এদের প্রজননতন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রামপাল প্রকল্প থেকে বের হওয়া ন্যূনতম দূষিত পদার্থ পুরো সুন্দরবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের আরেক অধ্যাপক আবদুল আজিজ ১৯৭২ সাল থেকে সুন্দরবন নিয়ে গবেষণার আলোকে তাঁর মতামত তুলে ধরে বলেন, ইতিমধ্যে ফারাক্কার কারণে সুন্দরবনে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরীগাছের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। রামপাল প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সুন্দরবনের পাশের ভূগর্ভের মিষ্টি পানির প্রবাহ থেকে নেওয়া হবে। এতে ভূগর্ভে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে পুরো সুন্দরবন এলাকাকে আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে।

পানি বিশেষজ্ঞ ড. ম ইনামুল হক বলেন, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে গিয়ে সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল যে মাটি খুঁড়লে প্রথম স্তরেই কয়লা পাওয়া যাবে। তবে তখন জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে ফুলবাড়ীর মাটির নিচে তিনটি স্তর আছে—প্রথম স্তরে আছে উর্বর মাটি, এরপর সুপেয় পানির প্রবাহ ও তৃতীয় স্তরে আছে কয়লা। কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় কমিটির বক্তব্যই ঠিক আছে। এ ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার শক্তির জোরে সুন্দরবনের পাশে রামপাল প্রকল্প করে ফেলতে পারে। কিন্তু এর ফলে এই বনটি চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বি ডি রহমতউল্লাহ দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা তুলে ধরে বলেন, দেশে সৌরশক্তি থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট; গরু গবর ও মুরগির বিষ্ঠা, গৃহস্থবর্জ্য থেকে আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। বিদ্যুৎ উৎপাদনের যতগুলো উৎস আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে পরিবেশ ধ্বংসকারী হচ্ছে কয়লা। সরকার এটাকেই বেছে নিচ্ছে। সরকার যদি ভারতের সহায়তা নিয়ে রামপাল প্রকল্প করেও থাকে, তাহলে জনগণকে নিয়ে তা ভেঙে ফেলা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ার করেন।

বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি প্রকৌশলী ইমরান হামিম রুমনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন এবং সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আবদুল মতিন। সভায় সংগঠনের কর্মী ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।