খোলা বাজার২৪ মঙ্গলবার, ১৮অক্টোবর, ২০১৬: বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা বা মহানগর কমিটি গঠনে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বিরোধপূর্ণ এলাকার সমস্যা নিরসনে ১২টি টিম গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ওইসব টিম স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করবেন। তারা ব্যর্থ হলে তা হাইকমান্ডকে অবহিত করা হবে। ইতোমধ্যে কমিটি নিয়ে বিরোধপূর্ণ অনেক জেলার নেতাদের ডেকে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে এবং সমস্যা সমাধানে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
একইসঙ্গে বাদ পড়া আতঙ্কের সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘এক নেতার এক পদ’ বাস্তবায়নের কঠিন বার্তা। বারবার নির্দেশ দেয়ার পরও যেসব নেতা এখনও একাধিক পদ ছাড়েননি তাদের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে হাইকমান্ড। আজ থেকেই তা কার্যকর হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
একাধিক পদ ছাড়তে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মৌখিকভাবে নেতাদের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে অনেকেই এখনো একাধিক পদ ছাড়েননি। বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, দলের সিদ্ধান্ত না মানায় এসব নেতার ওপর চরম ক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ড। শেষ পর্যন্ত এদের মধ্যে কোনো কোনো নেতাকে জেলায় আবার কোনো নেতাকে কেন্দ্রে রেখে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হতে পারে।
দলীয় সূত্র জানায়, নতুন কমিটিতে ৬১ জন নেতা ছিলেন একসঙ্গে একাধিক পদধারী। তারা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পদের বাইরে জেলা-উপজেলা কমিটি বা বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনেরও পদধারী নেতা। এর মধ্যে শনিবার পর্যন্ত ৩০ জন একটি পদ রেখে অন্য পদ ছেড়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ জন নেতা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা লিখিতভাবে দলকে জানিয়েছেন। বাকিরা কেন্দ্রীয় কমিটির পদ রেখে অন্য পদ ছেড়েছেন। বাকি ৩১ জন কোন পদে থাকতে চান, তা এখনও জানাননি। তাদের বেশির ভাগই দলে প্রুভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পুনর্গঠনের তোড়জোড়ে তৃণমূল নেতারা জেলা বা মহানগরে কাঙ্খিত পদ পেতে বা স্বপদে বহাল থাকতে এবং অনুগতদের পদ পাইয়ে দিতে লবিং তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় নেতারা নিজ জেলা বা মহানগর ছেড়ে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। এসব নেতা ঘনঘন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। সুযোগ পেলে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাতের চেষ্টা করছেন।
গত কাউন্সিলের আগে তৃণমূল পুনর্গঠনে বিএনপিতে চলছে ব্যাপক তোড়জোড় কয়েকটি জেলা পুনর্গঠন করে হঠাৎ তা বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পর আবারও পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। তার নির্দেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান পুনর্গঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান পূর্বপশ্চিমকে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা বা মহানগরে কমিটি করে দেওয়া হবে। লবিং করে কেউ কোনো পদ পাবে না। নেতাকর্মীরা যাদের চাইবে তাদেরই নেতৃত্বে আনা হবে। এটাই হচ্ছে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত। আর ‘এক নেতার এক পদ’ দলের হাইকমান্ডের এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবেই। কোনো কৌশল করে লাভ হবে না।
বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির নেতাদের অনেকের কাছে কেন্দ্রের চেয়ে জেলা-উপজেলার রাজনীতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর সঙ্গে স্থানীয়ভাবে মহানগর, জেলা-উপজেলার রাজনীতিতে প্রভাব ধরে রাখার বিষয় জড়িত। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ও জড়িত। মাঠপর্যায়ের পদ ছেড়ে দিলে স্থানীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভালো পদ পেয়েও স্থানীয় কমিটির পদ ছাড়তে গড়িমসি করছেন অনেকে। আবার অনেকে কেন্দ্রীয় পদ ছেড়ে স্থানীয় কমিটির পদ রাখছেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, নেতৃত্ব বাছাই করার ক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ড অনেক সতর্ক। দলের নেতাকর্মীরা যাকে চাইবে তাকেই জেলা বা মহানগরের দায়িত্ব দেয়া হবে। এখানে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না হাইকমান্ড। আমাদের সেভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে।