খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬: আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলকে স্বাগত জানিয়ে এর সফলতা কামনা করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একথা জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। তাদের এই সম্মেলনকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা আশা কর, তাদের এই সম্মেলন সফল হবে। একই সঙ্গে এটা আশা করি, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনবার জন্যে তারা তাদের ভুমিকা পালন করবেন। বিএনপি শুধু নয়, দেশের মানুষের একটাই প্রত্যাশা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবার জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব উপযুক্ত ভুমিকা পালন করবে।
থাইল্যান্ডের প্রয়াত রাজা ভুমিবলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকালে বারিধারার থাই দূতাবাসে শোকবইতে স্বাক্ষর করার পর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের প্রেস উইয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের যেরকম অতীত ভুমিকা রয়েছে যে, তারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। আবার দুর্ভাগ্য হচ্ছে, তাদের হাতেই বার বার গণতন্ত্র আহত হয়েছে, বিঘ্ন হয়েছে এবং গণতন্ত্র পরাজিত হয়েছে।
বর্তমান সংকট সৃষ্টির জন্য ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করে এ থেকে উত্তরণে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন. দেশে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, যে সংকট তৈরি হয়েছে, এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যেহেত আওয়ামী লীগ এখন সরকারে আছে, উদ্যোগটা তাদেরকেই গ্রহন করা উচিৎ। দেশকে আবার গণতন্ত্রে ফিরিয়ে নিয়ে আনা, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া- এই দায়িত্বটা তাদেরই পালন করা উচিৎ। আমরা আশা করব, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা(আওয়ামী লীগ) সেই লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন।”
আওয়ামী লীগের সম্মেলন জাক-জমকপূর্ণভাবে করা হচ্ছে, বিএনপিকে যেভাবে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সম্মেলন করতে দেয়া হয়নি- এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের সমর্থ অনুযায়ী, পরিবেশ অনুযায়ী তাদের সম্মেলন ও কার্য্ক্রম করবেন।
বিএনপি তো দীর্ঘকাল ধরে অভিযোগ করে আসছে, বিএনপিকে শুধূ নয়, বিরোধী দলকে কোনো গণতান্ত্রিক পরিসর বা স্পেস দেয়া হচ্ছে না। শুধু সভা-সমাবেশের ব্যাপারেই নয়, সব ক্ষেত্রেই এখন গণতন্ত্র সংকুচিত শুধু নয়, গণতন্ত্র প্রায় নির্বাসিত হয়ে গেছে। সেই কারণে আমরা মনে করি যে, আওয়ামী লীগ নিজেদের জন্য যে কাজটি করছে, সেই কাজটি অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে করার সুযোগ দেবে-এটাই আমরা আশা করি।
বিএনপি আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো আমরা আমন্ত্রণ পাইনি। আমন্ত্রণ পেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
দারিদ্র বিমোচন প্রসঙ্গে
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের দারিদ্র জয়ের যে প্রশংসা করেছেন, সেবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র বিমোচনের যেটুকু সাফল্য এসেছে, এটা শুরু হয়েছে দীর্ঘকাল আগে। ’৭৪ সালে আওয়ামী লীগের আমলে যে দুর্ভিক্ষ হয়, সেসময়ে অনেকে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো। কিন্তু আমরা দেখেছি, পরবর্তিতকালে যখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন, তিনি তার ১৯ দফা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উৎপাদন-উন্নয়নের যে একটা জোয়ার সৃষ্টি করেছিলেন, একটা ধারা সৃষ্টি করেছিলেন, সেই ধারাবাহিকতায় আজকে আপনারা বাংলাদেশকে দেখতে পারছেন।
জিয়াউর রহমান একটা বদ্ধ অর্থনীতিকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। বেসরকারি খাতকে খুলে দিয়েছিলেন, গ্রামীন অর্থনীতিতে একটা প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। আজকে গ্রামে যে বিদ্যুৎ দেখছেন, তিনিই পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড তিনিই গঠন করেছেন। গ্রামের অর্থনীতিকে সচল করার জন্য সকল কর্মকান্ড নিয়ে যাচ্ছিলেন গ্রামের দিকে।
তিনি বলেন, অনুন্নত এলাকা উন্নয়নে রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী বোর্ড, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে জিয়াউর রহমান শিল্পায়নের ব্যবস্থা করেছেন। ওইসব অঞ্চলে শিল্পে বিনিয়োগের জন্য ২ % রেটে সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। ফলে পরবর্তিতে দেখেছি, এসব অঞ্চলে শিল্প গড়ে উঠেছিলো, কৃষিতে বিপ্লব হয়েছিলো।
গ্রামীন অর্থনীতিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র ঋনের ধারণার প্রসঙ্গ টেনে অর্থনীতির শিক্ষক মির্জা ফখরুল বলেন, মাইক্রো ক্রেডিট অর্থাৎ মাইক্রো ফাইন্যান্স যেটা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীন ব্যাংকের ধারনা জিয়াউর রহমানের সময়ে থেকেই শুরু হয়েছিলো। তখনই গ্রামীন অর্থনীতিতে পূঁজিকে নেয়ার একটা চেষ্টা হয়েছে। তারই ফলোশ্রুতিতে আমাদের অর্থনীতিতে একটা বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে, গ্রামীন অর্থনীতি হচ্ছে বড় অর্থনীতি বাংলাদেশে।
সেই কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা মোমেন্টাম হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সক্ষমতা তৈরি হলো গ্রামের মানুষের মধ্যে পুরো বিষয়টা বিকশিত হয়েছে। সুতরাং দারিদ্র বিমোচনের ব্যাপারটা যদি কেউ এককভাবে দাবি করেন, তাহলে এটা সঠিক হবে না। এটা শুরুটা করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেব। পরবর্তিকালে প্রতিটি সরকারই কাজ করেছে। বিশেষ করে আমি বলব, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস সাহেবের গ্রামীন ব্যাংক ও ব্রাকসহ অন্যান্য এনজিও গুলো দারিদ্র বিমোচনে বড় ভুমিকা পালন করেছে।
গ্রামে নারীদের ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, দারিদ্র দূর করার অগ্রগতির পেছনে সকলের কিন্তু অবদান রয়েছে। বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকার আমলে গ্রামের ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার সুবিধার জন্য ফুড ফর এডুকেশন চালু করেছিলেন। যেটাতে ৩০ কেজি গম পেতো যদি সে তার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতো। এটা একটা বড় রকমের ইনসেনটিভ ছিলো। নারীদের বিনামূল্যে বই-পত্র প্রদান, দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত তাদের অবৈতনিক লেখা-পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিলো। এই কাজগুলো তখন হয়েছে। আমি মনে করি, এই ভিত্তিগুলোর জন্য আজকে গ্রামে দারিদ্রতা কমে এসেছে।