Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

khaleda-ziaখোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬: বিএনপির একাধিক পদধারী নেতাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তাদের ভাগ্য এখন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাতে। একাধিক পদ আঁকড়ে থাকা এসব নেতার কোনো কৌশলই শেষ পর্যন্ত কাজে আসছে না। বরং পদ না ছাড়লে তাদের ভাগ্যে বিপর্যয় ঘটতে পারে। খালেদা জিয়া শিগগিরই তাদের ব্যাপারে অ্যাকশনে যাচ্ছেন।

বিএনপিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, সম্প্রতি একাধিক পদধারী কয়েকজন নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের এমন বার্তাই দেয়া হয়। বার্তা পেয়ে কেউ কেউ তৃণমূলের পদ ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে তৃণমূলের কোন্দল নিরসন করে দ্রুত পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিবদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয়ভাবে ১৪টি টিম গঠন করা হয়েছে। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা এসব টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।
সিন্ডিকেট ভেঙে নতুন নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ করে দিতে গত কাউন্সিলে ‘এক নেতার এক পদ’ বিধান রেখে বিএনপির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা হয়। দলের এ সিদ্ধান্তকে প্রায় সব নেতাকর্মীই স্বাগত জানান। কিন্ত ‘রাজত্ব হারানো’র শংকায় পড়েন দীর্ঘকাল বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখা কিছু নেতা। তারা প্রত্যাশা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত বিশেষ বিবেচনায় কেন্দ্র ও তৃণমূলে তাদের ‘রাজত্ব’ ধরে রাখতে পারবেন। এজন্য একাধিক পদ ছাড়তে প্রথম থেকেই গড়িমসি শুরু করেন তারা। কিন্তু হাইকমান্ডের কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরে অনেকেই ইতিমধ্যে পদ ছেড়ে দিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, নতুন কমিটিতে ৬১ নেতা একাধিক পদধারী ছিলেন। একাধিক পদ ছাড়তে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মৌখিকভাবে নেতাদের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ৪৫ জন নেতা এক পদ রেখে বাকি পদ ছেড়ে দিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেন্দ্রের পদ ছেড়ে দিয়ে তৃণমূলে আর কেউ কেউ জেলা বা উপজেলার পদ ছেড়ে কেন্দ্রে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান জেলায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রের পদ ছেড়ে দেন। কামরুল মনির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা থেকে পদত্যাগ করে জেলায় থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আখতার হামিদ সিদ্দিকী তৃণমূলের পদ ছেড়ে কেন্দ্রে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। শাহজাদা মিয়া ফরিদপুর জেলার সভাপতি পদ ছেড়ে দেয়ার কথা কেন্দ্রে জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক পদ ছেড়ে জেলায় থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ওয়ারেছ আলী মামুন।
বিএনপির যে ১৬ নেতা এখনও একাধিক পদ ধরে রাখার নানা কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে আছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মুজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবীর খোকন, আসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ।
এদিকে গত রোববার রাতে গুলশান কার্যালয়ে পাঁচ যুগ্ম মহাসচিবকে ডেকে পাঠান খালেদা জিয়া। একাধিক পদ না ছাড়ার কারণ জানতে চান তিনি। এ সময় তারা বলেন, জেলার আগামী কাউন্সিল শেষ করে তারা পদ ছেড়ে দেবেন। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, আগে পদ ছেড়ে দিয়ে তারপর আমার কাছে আসবেন। যদি তা না করা হয় তবে আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নেব। চেয়ারপারসনের এমন কঠোর নির্দেশনার পর একাধিক পদধারী কয়েক নেতা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দ্রুতই তারা জেলার পদ ছেড়ে দেয়ার মানসিক প্রস্ততি নিচ্ছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘এক নেতার এক পদ’ কার্যকরে দলের হাইকমান্ড কোনো ছাড় দেবে না। একাধিক পদ ধরে রাখার কোনো কৌশলই শেষ পর্যন্ত কাজে আসবে না। হাইকমান্ডের কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সবাই একাধিক পদ ছেড়ে দেবেন বলে আশা করেন তৃণমূল পুনর্গঠনের এ সমন্বয়ক।
পুনর্গঠনের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে পুনর্গঠনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত কয়েকটি টিম বিভিন্ন জেলা সফরে যাবে। তারা স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে যে কোনো সমস্যা নিরসনে কাজ করবেন।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, দলের সিদ্ধান্ত তো মানতেই হবে। নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব দিতে দ্রুতই জেলার কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মহানগর বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টকে ইতিমধ্যে দায়িত্ব দিয়েছি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, একাধিক পদধারীদের ব্যাপারে হাইকমান্ডের মনোভাব কঠোরই মনে হচ্ছে। এদিকে তৃণমূল পুনর্গঠন দ্রুত শেষ করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনেক জেলা নেতাদের ঢাকায় ডেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কথা বলবেন। আবার যেসব জেলায় কোন্দল রয়েছে সেখানে কেন্দ্রীয় টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ লক্ষ্যে ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিবদের নেতৃত্বে ১৪টি টিমও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি পদ ছেড়ে দেয়া কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে দীর্ঘদিন জেলার রাজনীতি করার পরও সেখানকার নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছি। কেন্দ্র কোনো দায়িত্ব দিলে তা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করব।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এক নেতার এক পদ’ এটা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত। যেসব নেতা এখনও একাধিক পদে আছেন দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদেরও পদ ছেড়ে দেয়া উচিত।
সূত্র জানায়, তৃণমূল পুনর্গঠন দ্রুত শেষ করতে ১৪টি টিম চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে, ব্যারিস্টার আমিনুল হক রংপুর মহানগর ও জেলা, মৌলভীবাজারে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, পঞ্চগড়ের দায়িত্বে আসাদুল হাবিব দুলু।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকনকেও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।