
খোলা বাজার২৪, রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬: গতকাল শনিবার নিরাপদ সড়ক চাই দিবস। সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমানোই এদিনের মূল আহবান। বেসরকারিভাবে নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে দিনটি। কিন্তু প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিবছর প্রাণ হারায় ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ। যদিও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, এ সংখ্যা সাড়ে আট হাজার। সড়ক দুর্ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ায় সপ্তম আর বিশ্বে ১৩তম। মানুষ যাতে নিরাপদে সড়কে চলাচল করতে পারে সেজন্য চলচ্চিত্রের এক সময়কার জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন গত ২২ বছর ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর দিনটিকে তিনি নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালন করেন। ফিটনেসবিহীন যান চলাচল, মহাসড়কের বেহাল দশা, চালকদের অসচেতনতা আর নজরদারির অভাবে মূলত প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর স্বজনদের কান্না থামাতে দরকার সর্বস্তরের সচেতনতা; প্রয়োজন সঠিকভাবে রাস্তা নির্মাণ আর সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন। বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এক সময় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আমাকে দেখতেই পারতো না। তারা মনে করতো, আমি ভুল কাজ করছি। তাদের ধারণা ছিল দুর্ঘটনা হলো কপালের লেখা। সেটা থেকে এখন তারা বেরিয়ে এসেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পরিবহনের দাপুটে চলাফেরাই বলে দেয়, কতটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছেন এ পথের যাত্রীরা। সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়াভাবে পরিবহন আর অদক্ষ চালকদের খামখেয়ালিতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। : নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের শুরুর দিকে চালকদের মনোভাব বর্ণনা করতে গিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত বছর এক অনুষ্ঠানে খুলনায় একজন ড্রাইভার আমাকে ধরে কেঁদে ফেলে এবং বলে যে, আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম কারণ আপনার সম্পর্কে এতো খারাপ শুনেছি যে, মনে হতো রাস্তায় পেলে আপনার ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দিবো। বাংলাদেশ পুলিশের হিসাবে, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৯ হাজার ৪৫০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি মানুষের। এর বাইরে গেলো ঈদুল আজহার আগে ও পরে সড়কে প্রাণ ঝরেছে ২শর বেশি। বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজ বলছে, বেপরোয়া গতি, ওভার টেকিংসহ বেশকিছু কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বার বার। একই সাথে, মোটরযান নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট আইনের অভাবকেও দুষছেন অনেকেই। : এদিকে সারাদেশে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে ২২৭টির ব্ল্যাক স্পট নির্ধারণ করেছে সরকার। যেগুলো সংস্কারে কাজও শুরু হয়েছে কিন্তু তাতেও কী মিলবে সমাধান? যদিও চালকরা নিজেদের রক্ষার্থে বলছেন সড়ক সংস্কারের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। আর সড়ক বিভাগের মতে, ব্ল্যাক স্পট সংস্কারের কাজ শেষ হলে কমবে দুর্ঘটনার মাত্রা। তারপরও চালকদের আরো দক্ষ হওয়ার পরামর্শ তাদের। : আর ইলিয়ার কাঞ্চন চালকদের বর্তমান অবস্থা বর্ণনায় বলেন, এমন কোনো জেলা উপজেলা বাকি নেই যেখানে নিরাপদ সড়কের প্রচারণায় অংশ নিতে তিনি যাননি এবং এখন পরিস্থিতি পাল্টিয়েছে এবং চালকরাও আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে।