Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

4kখোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬: গোটা বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার উন্নত দেশগুলোতেই ব্যক্তি নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে। ধর্ষণের মতো বর্বর ঘটনার মতো অপরাধের শীর্ষে রয়েছে সেই সব উন্নত রাষ্ট্রসমূহ।

বিশ্বের নানা বিষয়ে সেরা দশ নির্বাচনকারী ওয়ান্ডারলিস্টের তথ্যানুসারে ধর্ষণ অপরাধে সেরা দশের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, ব্রিটেন, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশের নাম।

শীর্ষ দশে রয়েছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও। তালিকায় এই দেশের স্থান পঞ্চমে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দক্ষিণ আফ্রিকা: তালিকার প্রথম স্থানে থাকা দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে বলা হয় ‘রেপ ক্যাপিটাল অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। দেশটিতে প্রতিবছর ৫ লাখ ধর্ষণের অভিযোগ জমা হয়। দেশটির নারীদের ৪০ শতাংশ পুরো জীবনে একবার হলেও ধর্ষণের শিকার হন। দেশটির মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের মতে পুলিশের কাছে ৯টি ধর্ষণ ঘটনার মাত্র একটির অভিযোগ জমা পড়ে।

এছাড়া দেশটির ৪ শতাংশ পুরুষ অপর পুরুষের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। দক্ষিণ আফ্রিকান পুলিশের মতে, ধর্ষণ অভিযোগের ৪১ শতাংশ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। ধর্ষণের শিকার ১৫ শতাংশের বয়স ১১ বছরের নিচে। এই দেশে একজন ধর্ষকের শাস্তি মাত্র ২ বছরের কারাবাস।

সুইডেন: তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সুইডেন শীর্ষে রয়েছে। সুইডেনে ৪ জন নারীর মধ্যে ১ জন ধর্ষণের শিকার হয়। ১৯৭৫ সালে দেশটির পুলিশের কাছে মাত্র ৪২১টি অভিযোগ জমা পড়ে। আর ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬৬২টিতে। আর এতেই বোঝা যায় দেশটি নারীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক।

সুইডিশ ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ক্রাইম প্রিভেনশনের তথ্যানুসারে দেশটির গড়ে এক লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৬৩টি ধর্ষণ মামলা তালিকাভুক্ত হয়।

অন্যদিকে দেশটির র‌্যাপ ক্রাইসিস অ্যাডভোকেটসদের তথ্যানুসারে দেশটির প্রতি ৩ জনে ১ জন নারী কিশোর বয়সেই ধর্ষণের শিকার হয়।

আমেরিকা: ধর্ষণ অপরাধের শীর্ষ তিনে থাকা দেশ আমেরিকা। জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ৩ জন নারীর ১ জন পুরো জীবনে একবার হলেও ধর্ষণের শিকার হন।

এছাড়া দেশটির ১৯.৩ শতাংশ নারী ও ২ শতাংশ পুরুষ ধর্ষণের শিকার হন। আর মার্কিন নারীদের ৪৩.৯ শতাংশ ও ২৩.৪ শতাংশ পুরুষ পুরো জীবনে একবার হলেও যৌন নির্যাতনের শিকার হন।

গবেষণা বলছে দেশটির ৭৯ ভাগ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে ২৫ বছরের মধ্যে যাদের বয়স, তাদের সঙ্গে। আর ৪০ ভাগ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে আঠারো বছরের কম বয়সীদের সঙ্গে।

গবেষণার আরও ভয়াবহ তথ্য হলো- প্রতিবছর দেশটির জনগোষ্ঠির ৬৮ শতাংশ ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার অপরাধীদের ৯৮ ভাগই কোনোদিন বিচারের সম্মুখীন হয় না।

অন্যদিকে ব্যুরো অব জাস্টিস স্ট্যাটিস্টিক অনুযায়ী আমেরিকায় ধর্ষণের শিকার নারীর পরিসংখ্যান ৯১ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ পুরুষ। ন্যাশনাল ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যানের সার্ভে অনুযায়ী আমেরিকার প্রতি ৬ জন মহিলার মধ্যে ১ জন ধর্ষণের শিকার হন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা ৩৩ জনে ১ জন।

ব্রিটেন: সভ্য দেশের তকমা সেঁটে বেড়ানো ব্রিটেনে ৪ লাখ মানুষ প্রতিবছর ধর্ষণের শিকার হন। আর এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেশটিকে ধর্ষণ অপরাধের শীর্ষ পঞ্চম দেশে অবস্থানে নিয়ে এসেছে। দেশটির প্রতি ৫ জন মহিলার (১৬-৫৯ বছর বয়সী) মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার হন। প্রতিবছর দেশটিতে ৮৫ হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৭৩ হাজার নারী ও ১২ হাজার পুরুষ রয়েছে। এদের মধ্যে ১৬ বছরের নিচে থাকা কিশোরীর সংখ্যাই বেশি।

ভারত: সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের মতো ঘটনায় পুরো বিশ্বের কাছে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ভারতকে। দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০১০ সালে পর থেকে দেশটিতে ৭.৫ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তালিকার পঞ্চম অবস্থানে থাকা দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অনুযায়ী ২০১২ সালে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে ধর্ষণের অভিযোগ জমা হয়েছে ২৪ হাজার ৯২৩টি।

২০১৩ সালে দেশটিতে ৩৩ হাজার ৭০৭টি ধর্ষণ অভিযোগ তালিকাবদ্ধ হয়। দেশটিতে ধর্ষণের শিকার হওয়াদের প্রতি ৩ জনের একজনের বয়স ১৮ এর নিচে। দেশটির নতুন দিল্লিতে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

তথ্য বলছে দেশটিতে প্রতিদিন ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। এর মধ্যে ৯৪ শতাংশ নারী পরিচিত পুরুষদের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হন। তবে বেশিরভাগ ধর্ষণের অভিযোগই থানা পর্যন্ত আসে না।

আর এই ধর্ষণের শিকার নারীদের ১০০ জনের মধ্যে ৯৮ জনই আত্মহত্যা করেন।

তালিকার ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড, সপ্তম স্থানে কানাডা, অষ্টম স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নবমে রয়েছে জিম্বাবুয়ে আর দশম স্থানে যুগ্মভাবে রয়েছে ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড।