Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

38খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬ :

বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে অন্তত ৩৫০ রান করা উচিত ছিল। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হয়নি। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে অন্তত ৩৫০ রান করা উচিত ছিল। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হয়নি।

এগুলো হলো এই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম তিন ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের হঠাৎ তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাওয়ার নমুনা! চট্টগ্রামের ওই দুটি ধ্বস তো ম্যাচটাই হারিয়ে দিল!ঢাকার এই ব্যাটিং ধ্সও কি তেমন কোন ইঙ্গিত দেবে?
উইকেট যেমনই হোক, বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে অন্তত ৩৫০ রান করা উচিত ছিল। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হয়নি। উইকেট এমনই– কেউ হয়তো বলতে পারেন। তাহলে তো বলতে হয়, ইংল্যান্ড যে শেষ ২ উইকেটে পাক্কা ১০০ রান তুলে ফেলল, সেটা কি ম্যাজিক ছিল!
দুই দিনে একটা টেস্ট উইকেটের তেমন কিছুই হয় না। হলে সেই উইকেট রিপোর্ট খাবে আইসিসির কাছে। আসল কথা, বাংলাদেশ প্রথম দুই উইকেটে আর ইংল্যান্ড শেষ দুই উইকেটে অনেক ভালো ব্যাটিং করেছে। আপনি না মানলেও এটাই সত্য।
তামিম আর মমিনুল এমন ব্যাটিং করছিলেন যে অ্যালিস্টার কুকের সুযোগের অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। কিন্তু রশিদ ও ওকস যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন মুশফিকুর রহিমের অনেক কিছুই করার ছিল।
শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড লিড নিল ২৪ রানের। প্রথম ম্যাচটা আমরা হেরেছিলাম ২২ রানে। এই লিড নেওয়াটাই (নাকি দেওয়াটাই) কাল হয়ে না দাঁড়ালেই হয়! লো স্কোরিং ম্যাচে এমন সংখ্যাগুলোই সাধারণত পার্থক্য গড়ে দেয়!
অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে জো রুট আউট হলেন। মুশফিক তখন আরও আক্রমণ না করে বরং রক্ষণাত্মক হয়েছেন! নতুন বোলার এনেছেন অযথাই, ফিল্ডার ছড়িয়ে দিয়েছেন অবিবেচকের মতো। যেন গেইল-শেভাগ ব্যাটিং করছিলেন! একজন অধিনায়কের অ্যাটিচুডের ওপরে দলের অনেক কিছু নির্ভর করে। মাশরাফি
আর মুশফিকের এটা হলো বড় পার্থক্য!
এজন্যই হয়তো টেকনিক্যালি দলের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিককে সরিয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে অধিনায়কত্ব দেওয়ার কথা উঠছে। আগামী বছর বাংলাদেশ ১১টা টেস্ট খেলবে। এই বিবেচনা হয়তো করা হবে। রিয়াদ ঘরোয়া ক্রিকেট, বিপিএলে প্রমাণ করেছেন তিনি ভালো অধিনায়ক, প্রত্যাশ্যার চেয়েও ভালো নেতৃত্ব তিনি দিয়েছেন।
কিন্তু, রিয়াদের এই সিরিজের তিন ইনিংসের আউটের ধরনগুলো দেখুন। রান দেখার দরকার নেই। রিয়াদ অনেক ভালো ব্যাটসম্যান সন্দেহ নেই। কিন্ত আউটগুলো দেখুন : দৃষ্টিকটু! আউট হয়েছেন তাও আবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে।
টেস্টে চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করেন দলের সেরা ব্যাটসম্যানরা। শচীন-লারারা এই পজিশনে খেলতেন। আজও দেখেন, কারা খেলেন বিভিন্ন দলে। রিয়াদ সেই সম্মানটা পেয়েছেন। একজন সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে তিনি যতদ্রুত এই সম্মান পুনোরুদ্ধার করবেন, ততই মঙ্গল। টেস্ট অধিনায়ক হতে হলে তাকে সেই ক্ষমতার পুরোটা মেলে ধরতে হবে।
দিনের শেষ বলে এভাবে তাঁর আউট হওয়াটা ঠিক হয়নি। চার মেরে অর্ধশত রান ছোঁয়াটা তখন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। নতুন দিনটা দুজন সেট ব্যাটসম্যান শুরু করতে পারলেই ভালো হতো।
এমনিতেই যে কোন নতুন দিনের প্রথম এক ঘন্টা উইকেট বোলারদের থাকে। বাংলাদেশের যেভাবে ব্যাটিং ধ্বস হচ্ছে, তাতে তৃতীয় দিন সকালটা কী লিখে রেখেছে কে জানে!
সাকিবের হঠকারি ব্যাটিং চট্টগ্রাম টেস্ট হারার পেছনে অনেকাংশেই দায়ী। রিয়াদ কি এবার ‘সাকিব’ হয়ে গেলেন!
জিতলে কেউ এগুলো মনে রাখবে না। কিন্তু এতো সুন্দর পজিশন থেকে ম্যাচটা হারলে এসবই বিষবাষ্প হয়ে উড়বে!
জিতুক বা হারুক, এতোদিনে বোধহয় বাংলাদেশ বুঝেছে যে, উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোর জন্য কোনটা আসলে পারফেক্ট উইকেট! স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে লাভ নেই। এটাই পারফেক্ট উইকেট। বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপ গত কিছুদিন ধরেই বিশ্বমানের। পেসাররা যেমন, স্পিনাররাও। টেস্টে যেহেতু আমাদের ভালো পেসার নেই, সেহেতু স্পিনিং উইকেটই সেরা। আয়, খেল বাবারা!
উইকেট পারফেক্টলি বানানো গেলেও, দলটা আসলে পারফেক্টলি বানানো হচ্ছে না। এটাও হয়তো অধিনায়কের আত্মবিশ্বাসের অভাবে হচ্ছে। প্রথম টেস্টে দুই পেসার খেলানোর কোন যুক্তি যে ছিল না, সেটা দ্বিতীয় টেস্টে বুঝেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় টেস্ট থাকলে আসলে বুঝত, দুই পেসারও এখানে অচল!
এটা মূলত স্পিনার ও ব্যাটসম্যানদের খেলা। সেই স্পিনার আবার শুভাগত হোম হলে চলে না। ফিল্ডিং করা ছাড়া শুভাগত ও রাব্বির তো কোন কাজ দেখি না। তার চেয়ে বরং স্পিনিং অলরাউন্ডার কোঠায় মোসাদ্দেক আর পেস অলরাউন্ডার কোটায় সৌম্যকে খেলানো যেত। সিরিয়াসলি বলছি, এটা ফান নয়। ব্যাটিংটা তাতে আরও শক্তিশালী হতো। এমন একাদশ সাজাতে সাহস লাগে। মুশফিকের সেটা কোনদিনও ছিলই না হয়তো!
বাংলাদেশের পেসাররা এই তিন ইনিংসে কত ওভার বোলিং করেছেন দেখেন। রাব্বি এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে কত ওভার বল করেছেন দেখেন। পেসাররা করেছেন মোটে ৩১ ওভার, এই টেস্টে মাত্র পাঁচ ওভার!
তা এটা যদি আপনি উইকেট দেখে পরিকল্পনায় নিতে পারতেন, তাহলে এই কয়েকটা ওভার বল করানোর জন্য তো মাশরাফি মুর্তজাই যথেষ্ট। নাকি ভুল বললাম? টেস্ট খেলার জন্য আরও অনেক কিছু লাগে। কিন্তু, ক্রিকেট খেলার জন্য ‘মাশরাফি’ হলেই চলে!
যে ভূমিকাতেই থাকুন না কেন, একজন মাশরাফি মাঠে থাকলেই দলটা কেমন করে জানি বদলে যায়! ওই নামটাতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট আটকে আছে কি না কে জানে! তাই, মুশফিকের অধিনায়কত্ব দেখলেই মাশরাফির জন্য হাহাকার হয়!