খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৬: আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীদের চাওয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশের রাজনীতিতে ফের সক্রিয়া না হওয়ার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া এক বার্তায় তিনি নেতাকর্মীদের ভালোবাসা পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
ভবিষ্যতেও ভালো কাজের উদ্যোগে সবার সহযোগিতা পাবেন সে আশাবাদও জানিয়েছেন সোহেল তাজ।
এরআগে কাউন্সিল উপলক্ষে তিনি দেশে আসায় নেতাকর্মীরা আশায় বুক বেধেছিলেন। সবার আশা ছিল, সোহেল তাজ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কাউন্সিল শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান তিনি।
এসব নিয়েই সোহেল তাজ ফেসবুকে দেয়া ওই বার্তায় বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আপনাদের মন্তব্যগুলো আমি মনযোগের সঙ্গে পড়েছি। আমার প্রতি আপনাদের অনুভূতি, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। আমি যদি আপনাদের কাউকে কোনো কারণে কষ্ট দিয়ে থাকি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। সেটা কখনই আমার উদ্দেশ্য ছিল না।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমার কাছে এও প্রতীয়মান হয়েছে যে, আপনারা অনেকেই আমার প্রতি ভালোবাসার কারণে আমাকে অনেক প্রশংসা করেছেন, সেজন্য আমি অভিভূত এবং কৃতজ্ঞ। যদিও জানি না আমি এই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কি না। ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, ভুল-ত্রুটি, চড়াই-উৎরাই নিয়েই একটি মানুষ। আর সেই মানুষকে নিয়েই সমাজ। আমিও সেই সমাজেরই একজন। তবে আমার ব্যক্তি জীবনে এবং রাজনীতির প্রাঙ্গণে আমি সব সময় চেষ্টা করেছি আমার বাবা ও মা’র আদর্শ বুকে ধারণ করে নিজেকে পরিচালনা করতে।’
সোহেল তাজ বলেন, ‘আমি আপনাদের সবার কাছে দোয়া চাই যেন ভবিষ্যৎ জীবনে যাই করি না কেন, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা সামাজিক কাজ, তা যেন সৎ ও স্বচ্ছভাবে করতে পারি।’
নিজ বক্তব্য দেয়ার পর সোহেল তাজ রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালে লেখা একটি খোলা চিঠি সংযুক্ত করেন।
নিচে তা হুবহু তুলে ধরা হল;
অনেক কষ্ট করে গড়ে তোলা সুন্দর একটি জীবন ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। কৈশোর বয়স থেকে নিজে দিনরাত কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি। বাবা-মায়ের দেয়া শিক্ষা, দেশপ্রেম থেকেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে সবকিছু ছেড়ে দেশে ফিরে গিয়েছিলাম। প্রথমে সামাজিকভাবে কাজ শুরু করেছিলাম। আর্সেনিক নিয়ে সচেতনতার কাজও অনেক করেছি। গ্রামে-গঞ্জে ঘুরেছি দিনের পর দিন।
বাবা ও মায়ের রাজনৈতিক সহকর্মীদের পরামর্শ এবং কাপাসিয়ার মানুষের অনুরোধেই আমার সক্রিয় রাজনীতিতে আসা। তাঁরা আমাকে বুঝিয়েছিলেন, রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরও ভালো করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা সম্ভব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও শরীরে বয়ে চলা বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের রক্তই আমাকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করেছে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগ দিতে এবং দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে।
ক্ষমতা, অর্থসম্পদ, খ্যাতি প্রতিপত্তির জন্য আমি রাজনীতিতে যোগ দিইনি। যদি উদ্দেশ্য তা-ই হতো, তাহলে সবকিছু মেনে নিয়ে এখনও এমপি ও মন্ত্রিত্বের পদ আঁকড়ে থাকতাম। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাকে বাকি জীবন এই লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে রাখেন। নিজের দলীয় ও তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সৃষ্টি করা শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ২০০১ সালের নির্বাচনে কাপাসিয়ার মানুষের ভালোবাসায় প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলাম।