Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

72খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৬: সাকিব! বয়স কতইবা হবে! ৮/৯ বছরের শিশুটি হাসলে পোকা খাওয়া সামনের দাঁত দুটো বেরিয়ে আসে। পোকা খাওয়া দাঁত মানুষ দেখলে কী বলবে, সেই লজ্জায় সবসময় ঠোঁট দুটো চেপে মুচকি হাসার চেষ্টা করে সে। সাকিব রামপুরা থেকে মাদারটেক রুটে চলাচলকারী লেগুনার হেলপার। দু’বছর হয়েছে সে এই লাইনে কাজ করে। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা অব্দি ডিউটি করে সাকিব। দৈনিক আয় ৪০০ টাকা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ‘এই মাদারটেক, মাদারটেক সামনে সিট খালি। এই মিরপুর, মিরপুর সিট খালি। এই মেরাদিয়া, মেরাদিয়ার গাড়ি সামনে।’ লেগুনার যাত্রী জোগাড় করতে রামপুরা, বাড্ডা লিংক রোড, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে উঁচু স্বরে সারাদিন এসব কথা জপতে থাকে সাকিবের মতো হাজারো কোমলমতি শিশু। বলার ভঙ্গি আর গলার তেজ দেখলেই বোঝা যায় জীবনের যাঁতাকলে কত বেশি পিষ্ট এরা। কার আগে কে গাড়ি ভর্তি করবে তার জন্য যাত্রী ডাকাডাকিতেও প্রতিযোগিতা করতে হয় সমবয়সীদের সঙ্গে। এরপর গাড়ি ভর্তি হলে পেছনে পাদানির উপর দাঁড়িয়ে ঝুলতে ঝুলতে শুরু হয় সাকিবদের পথচলা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক হাতে হ্যান্ডেল ধরে আরেক হাতে যাত্রীদের থেকে ভাড়া কাটে তারা। এভাবেই সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে এসব কোমলমতি শিশুরা।

রামপুরা মাদারটেক রুটে লেগুনার হেলপার সাকিব। দু’বছর হলো সে এ রুটে লেগুনার হেলপারি করছে। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়। মাঝে মধ্যে রাত ১২টাও বেজে যায়। ড্রাইভারের বেতনভুক্ত সে। প্রতিদিন ৪০০ টাকা বেতন পায় সাকিব। সারাদিনের খাওয়া খরচ ড্রাইভারের। বাসায় কে আছে জানতে চাইলে সাকিব জানায়, মা আর ছোট বোন আছে। তার বাবা আরেকটা বিয়ে করে সেই বউয়ের সঙ্গে থাকে। তাদের কোনো খবর নেয় না। তাই খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে লেগুনার হেলপারি করে সে। দিন শেষে প্রাপ্য মজুরি মায়ের হাতে তুলে দেয়। মাকে সুখী করতে চায় সাকিব। মা অন্যের বাসায় কাজ করে। এটা সাকিবের ভালো লাগে না।
সাকিব জানায়, এ রুটে অধিকাংশ লেগুনার হেলপার তার সমবয়সী। সবাই পারিবারিক সমস্যার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় কাজ করছে। কারো বাপ নেই। কারো বাবা আছে তো মা নেই। ঘরে সৎ মা। খেতে পরতে দেয় না। তাই লেগুনায় হেলপারি করে তারা।
বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার রক্ষা ও তাদের বিকাশের জন্য রয়েছে নানা আইন। তারপরও বাংলাদেশে লঙ্ঘিত হচ্ছে শিশু অধিকার। সমাজ থেকে শিশু-কিশোরদের যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার কথা তা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিশুনীতিকে পাশ কাটিয়ে খোদ রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় বেড়ে উঠছে শিশুশ্রম। অথচ দেখার কেউ নেই।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে লেগুনার পাশাপাশি প্রায় ৩০০ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা নিয়োজিত। দেশের প্রচলিত আইনে শিল্প কারখানায় শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও পারিবারিক ভাঙনসহ নানা কারণে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ বিষয়ে কথা হয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি জানান, ২০২১ সালের মধ্যে দেশে কোনো শিশুশ্রম থাকবে না। সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশে কতজন শিশু শ্রমিক রয়েছে তার জরিপ করার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। জরিপ করা হলে শিশু শ্রমিকদের কার পরিবারে কি সমস্যা আছে সেগুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ শিশু সনদে বলা হয়েছে শিশুর বেঁচে থাকা তাদের জন্মগত অধিকার। এর সঙ্গে রয়েছে স্নেহ, ভালবাসা ও সমবেদনা পাওয়ার অধিকার, পুষ্টিকর খাদ্য ও চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার অধিকার, অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ, খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদের পূর্ণ সুযোগ পাওয়ার অধিকার, একটি নাম ও নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার, দুর্যোগের সময় সবার আগে ত্রাণ পাওয়ার অধিকার, সমাজের কাজে লাগার উপযোগী হয়ে গড়ে উঠার এবং ব্যক্তিসামর্থ্য অর্থাৎ সুপ্তপ্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাওয়ার অধিকার, শান্তি ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের মনোভাব নিয়ে গড়ে ওঠার অধিকার। এসব অধিকার জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে বিশ্বের সব শিশুর থাকবে।