খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০১৬: শরীয়তপুর জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা নিয়ে নেতা কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উৎকন্ঠা । কে হচ্ছেন জেলা বিনেপির অভিভাবক বা কর্নধার। কে হচ্ছেন সাধারন সম্পাদক? । এক গ্রুপ চাচ্ছেন একতরফা করতে অপর গ্রুপ চাচ্ছেন সমন্বয় করে কমিটি গঠন করতে। এখন বিএনপির চেয়ারপার্সনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
শরীয়তপুর জেলা বিএনপি সুত্রে জানাগেছে , ২০১১ সালে গঠিত জেলা বিএনপির গঠনের পর শুরু থেকেই শফিকুর রহমান কিরন সভাপতি ও নাসির উদ্দিন কালুকে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।তারা দু’জনে জেলার সকল উপজেলা ও পৌর কমিটি নোটিশ ছাড়াই ভেঙ্গে দিয়ে একতরফা ভাবে তাদের নিজস্ব লোকজন দিয়ে উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি গঠন করে নেয়।তারা একই পরিবারে ৫ ভাইকেই জেলা কমিটিতে অর্ন্তভ’ক্ত করেছেন। উপজেলা ও জেলায় একাধিক পদপদবী দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি একতরফা ভাবে গঠনের প্রতিবাদে নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এক গ্রুপে নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য প্রায়ত কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব এর স্ত্রী এড. তাহমিনা আওরঙ্গ ও এড. জামাল শরীফ হিরু। অপর গ্রুপে রয়েছেন সফিকুর রহমান কিরন ও নাসির উদ্দিন কালু।
আওরঙ্গ সমর্থকরা শরীয়তপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সভা সমাবেশ, কুশপুত্তলিকা দাহ সহ নানা কর্মসূচী পালন করে এ কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় । এরপরে ও কোন সুরাহা দেয়নি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। কয়েক দফা প্রোগ্রাম দিয়ে ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ শরীয়তপুরে আসতে ব্যর্থ হয়। এমনি ভাবে চলতে থাকে দীর্ঘ ৫ বছর। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় তেৃবৃন্দ বিশেষ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী কামাল ইবনে ইউসুফ, ভাইসচেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতারা ঢাকায় কয়েক দফা বৈঠক করেন। কিন্তু আন্তরিক ভাবে কোন সুরাহা দেননি বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। নেতাকর্মীদের দাবী গত ৫ বছরে জেলা কমিটি একটি সভা ও করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় কোন কর্মসূচী পালনে তাদের কোন ভুমিকা নেই। তারা নাসির উদ্দিন কালুর বাসায় বসে ব্যানার টানিয়ে সভা সমাবেশ দেখিয়ে বা বাড়ির ভিতরে মিছিলের অনুকরন করে ফটোসেশন করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে কর্মসূচী পালন করেছে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
ফলে বিদ্যমান কমিটির লোকজনের বিরুদ্ধে কোন মামলা মোকদ্দমা হয়নি। তারা কোন অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়নি। বিশেষ করে কমিটির সভাপতি শফিকুর রহমান বিদেশে (দুবাই) থাকা কালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। এ মামলার অজুহাতে সে দীর্ঘ ৩ বছর যাবত শরীয়তপুর জেলায় আসেনি। ঢাকায় বসে তার বাসায় তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের ডেকে নিয়ে সভা সমাবেশ করে। আর অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছে আওরঙ্গ সমর্থক নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে হরতাল অবরোধ করতে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। নেতাকর্মীরা কারাবরন করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী সারা দেশ ব্যাপী বিএনপি পুর্নগঠন কাজ শুরু হয়েছে। এরই ধারবাকিতায় বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান কে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়। গত ১৬ অক্টোবর ঢাকায় জেলা কমিটির গুটি কয়েকজন নেতার সাথে একতরফা বৈঠক করে গত ২৬ অক্টোবর শরীয়তপুর জেলা কমিটি গঠনের জন্য শরীয়তপুরে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সরদার নাসির উদ্দিন কালুর বাসায় সম্মেলনের স্থান নির্ধারন করা হয়। এ খবর তৃণমূলের নেতা কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তার ফুসে উঠে।
একতরফা সম্মেলনের তারিখ ও স্থান নির্ধারন করার প্রতিবাদে তারা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তেৃবৃন্দের কাছে যোগাযোগ করে। এরপরে ও কোন সুরাহা না হওয়ায় অবহেলিত নেতাকর্মীরা শরীয়তপুর শহরে একতরফা সম্মেলনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল সভা সমাবেশ অব্যাহত রাখে। তারা শরীয়তপুর শিশু পরিবারের মাঠে পাল্টা সম্মেলনের স্থান নির্ধারন করে পুলিশের কাছে অনুমতি চায়। এক পর্যায়ে আইন শৃংখলা বাহিনী উভয় গ্রুপের সমর্থকদের উত্তেজনা দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা বিএনপির উভয়ের সম্মেলন বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উভয় গ্রুপের নেতৃবৃন্দকে ২৬ অক্টোবর ঢাকায় তলব করে নিয়ে যায়। তারা ঐদিন সকাল সাড়ে ১১ টায় বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান সাবেক এমপি মোঃ শাহজাহান এর ঢাকার শাহজাদপুরের বাসায় সমন্বয় বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান, বিএনপির যুগ্নমহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ রিংকু,বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক খোন্দকার মাসুকুর রহমান মাসুক ,সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সেলিমুজ্জামান সেলিম। সেখানে আলোচনার পরে উভয় গ্রুপের ৩জন করে নাম নেয়া হয়।
এক গ্রুপ এড. জামাল শরীফ হিরু সভাপতি এড. তাহমিনা আওরঙ্গ সাধারন সম্পাদক, কর্ণেল অবঃ এসএম ফয়সাল সাংগঠনিক সম্পাদক, অপর গ্রুপ শফিকুর রহমান কিরণ সভাপতি ,নাসির উদ্দিন কালু সাধারন সম্পাদক, সাইদ আহম্মেদ আসলাম সাংগঠনিক সম্পাদক করার লক্ষ্যে নামের তালিকা দাখিল করে। এরপর এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিকট চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তাঁর নিকট জমা দেয়া হয়। তিনিই এখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন।
এ নিয়ে জেলা বিএনপির উভয় গ্রুপের নেতা কর্মীরা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বাসায় বাসায় চেষ্টা তদবীর করছেন । উভয় গ্রুপের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এ নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় রয়েছে। কে হবে জেলা বিএনপির সভাপতি বা সাধারন সম্পাদক ? সাধারন নেতাকর্মীদের দাবী উভয় গ্রুপের সমন্বয়ে শরীয়তপুর জেলা কমিটি গঠন করা হলে এ সমস্য নিরসন হয়ে যাবে।
জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন কালু বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ও স্থান নির্ধারন করে দিয়েছে। সেখানে এক গ্রুপের লোকজন ক্ষুদ্ধ হয়ে শহরে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করে। এতে করে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উভয় গ্রুপের লোকজনদের নিয়ে ঢাকায় বসে আলোচনা করে নামের তালিকা নেয়। এখন বিএনপির চেয়ারপার্সন যে সিদ্ধান্ত দেয় সে সিদ্ধান্তের সাথে আমরা একমত।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এড. জামাল শরীফ হিরু বলেন,একতরফা ভাবে জেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আমাদেরকে না জানিয়ে একজন ব্যক্তির বাড়িতে সম্মেলনের স্থান ও তারিখ নির্ধারন করায় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। পরে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উভয় গ্রুপের নেতৃবৃন্দদের ঢাকায় তলব করে নিয়ে সমন্বয় বৈঠক করে। সেখানে উভয় গ্রুপের ৩ জনের নামের তালিকা নেয়।আমরা চাই সমন্বয় করে কমিটি গঠন করা হোক। এখন বিএনপির চেয়ারপার্সন এর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।