Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০১৬: গতকাল ইম্পিরিয়াল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক বৃন্দ নরসিংদী প্রেস কাবের সামনে ইম্পিরিয়া দ্বাদশ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র মনিরা আক্তারের হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে এক মানব বন্ধন করে। ২৩ অক্টোবর রোববার গভীর রাতে শিবপুর উপজেলার শেরপুর গ্রামে সংগঠিত কলেজ ছাত্রী হত্যার ঘটনার ৭ দিন পর অবশেষে ৩০ অক্টোবর রোববার বিকেলে প্রতিবেশি এক শিশু বায়েজিদ (১২) মাঠ থেকে ছাগল আনতে যেয়ে নিহত কলেজ ছাত্রীর মনিরা আক্তার এর কূপে পরে যায়। এ সময় শিশু বায়েজিদ ভয়ে আর্তচিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা দৌড়ে ঘটনস্থলে পৌছে তাকে উদ্দার করে। এ সময় প্রতিবেশীরা শিশুটিকে উদ্ধার এর পর গর্ত থেকে আচমকা অসহনশীল পচা দূর্গন্ধ বের হতে থাকে। পচনশীল দূর্গন্ধে এলাকা বাসীর মাঝে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম নেয়। তন্মধ্যে অধিকাংশ মানুষের মাঝে কলেজ ছাত্রী মুনিরা আক্তার (চুশনি) হত্যার রহস্যের প্রশ্ন প্রকাশ পায়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা এলাকাবাসী শিবপুর মডেল থানা পুলিশ সহ নরসিংদী পুলিশ সুপার আমেনা বেগমকে অবহিত করে।

বিস্ময়কর ঘটনার সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌছে সংবাদের সত্যতা খুজে পেয়ে প্রায় ৬/৭ ফুট গভীর এক কূপ থেকে কলেজ ছাত্রী মনিরা আক্তার (চুশনি) দূর্গন্ধময় গলিত লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। নিহত স্কুল ছাত্রীর বড়বোন নাদিয়া আক্তার জানায়, নরসিংদী ইম্পিরিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী মুনিরা আক্তার (চুশনি) ঘটনার রাতে তার বাবা খোশেদ আলম, মাতা সালমা বেগম, ভাই কলেজ ছাত্র সোহেল মিয়া সহ নিকট আত্মীয় স্বজনরা মিলে অত্যান্ত সু-পরিকল্পিত ভাবে তার মেয়েকে হত্যা করে। তাকে নির্মম ভাবে হত্যার পর প্রথমে ঘরের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে এবং পরবর্তীতে হত্যা রহস্য ফাস হয়ে পরবে বুঝতে পেরে বিকল্প পরিকল্পনায় বাড়ীর একশ গজ দূরে মৎস্য খামারের কর্নারে গভীর এক কূপ করে নারকীয়ভাবে নীল রঙ্গের পলিথিনে পেচিয়ে তাকে মাটি চাপা দেয়। ঘটনার পর থেকে কলেজ ছাত্রী মনিরা আক্তার এর পিতা মাতা ও পরিবারের সদস্যরা মেয়ে আত্মীয়র বড়ীতে বেড়াতে গেছে, নিখোজ হয়েছে, বান্দবীর বাসায় রয়েছে ইত্যাদির অজুহাত দেখিয়ে আসছিল।

নিহতের স্বজনরা জানায়, মুনিরা আক্তার চুশনি বাড়ির পাশে বিল্লাল মিয়ার টেক্সটাইল মিলের ম্যানেজার রুবেল মিয়ার সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ ভালবাসার সম্পর্ক ছিলো। এরই অপরাধে তার পিতা- মাতা ও ভাই কলেজ ছাত্রী মুনিরা আক্তার কে প্রায়ই মারধর করত। বিগত সময়ে নিহত মুনিরার পিতা- মাতা ভাই বোনরা সকলে মিলে একই উপজেলায় প্রতিবেশি কামারগাঁও গ্রামের মৃত-সানাউল্লার পুত্র ও স্থানীয় বিল্লাল মিয়ার টেক্সটাইল মিলের ম্যানেজার রুবেল মিয়াকে পরিকল্পিত ভাবে বাড়ীতে ডেকে এনে মারপিট করে তার মেয়ের সঙ্গে কোন প্রকার সম্পর্ক না রাখার জন্য প্রান নাশের হুমকি দিয়ে ছেরে দেয় বলে জানা গেছে। মুনিরাকে নিজ ঘরে হত্যার একদিন পূর্বেও তার বাবা- মা ভাই বোনেরা মিলে তাকে বেদোরক মারপিট করে। পিতা-মাতা ভাই বোনের মারটিট খেয়েও মনিরা আক্তার (চুশনি) তার কলেজে যাওয়া আসা অব্যাহত রেখে ছিল।

অবশেষে ২৩ অক্টোবর রোববার দিনই ছিল তার কলেজে যাওয়ার শেষ দিন। একই দিন রাতে পরিবারের সদস্যরা পূর্ব পরিকল্পিত উপায়ে নিজের সন্তান মনিরা আক্তার কে গভীর রাতে পৈচাশিক কায়দায় হত্যা করে ঘটনাটি আত্মহত্যা বা রহস্যজনক বলে চালিয়ে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে বাবা খোরশেদ আলম ও ভাই সোহেল। মনিরা আক্তার নিখোঁজের বিষয়টি এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃস্টি হয়। ৩০ অক্টোবর রোববার বিকেলে হত্যার পর লাশ গুমের বিষয়টি এলাকাবাসীর নিকট প্রকাশ পায়। শিবপুর থানা পুলিশে খবর দিলে থানার এস আই আমিনুল হকের নেতৃত্বে সংগীয় ফোর্স নিয়ে দীর্ঘ ৩ ঘন্টা চেষ্টা করে মাটির গভীর থেকে নীল রঙ্গের মোড়ানো নিহত কলেজ ছাত্রী মনিরার পচা গলিত লাশটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

এস আই আমিনুল হক জানায়, আমরা লাশটি উদ্ধার করেছি, এখন ময়না তদন্তে হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

প্রত্যদর্শীরা জানায় কলেজ ছাত্রী মুনিরা আক্তারের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

শিবপুর মডেল থানা পুলিশ বাদী হয়ে চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্রী মুনিরা আক্তার (চুশনি) হত্যার ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। যার মামলা নং- ৪২(১৬)। ৩১ অক্টোবর সোমবার শিবপুর মডেল থানা পুলিশের হেফাজতে নিহত কলেজ ছাত্রী মুনিরা আক্তারের ময়না তদন্ত সম্পূর্ন করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত মুনিরা আক্তারের পরিবারের সদস্যরা বাড়ী ঘড়ে তালা ঝুলিয়ে আত্ম গোপন করেছে বলে এলাকাবাসী জানায়।