খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০১৬ :
হিলারি ও বিল ক্লিনটনের দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তহবিল জোগানো কাতার ও সৌদি আরবের ধনকুবেররা জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের পেছনেও অর্থ ঢেলে আসছে বলে দাবি করেছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।
লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে থেকে রুশ সংবাদ মাধ্যম রাশিয়ান টুডে (আরটি)কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ এ দাবি করেন বলে ব্রিটিশ দৈনিক ইনডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কয়েকদিন আগেই এই দাবি করলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা; যে ওয়েবসাইটটির ফাঁস করা ইমেইল বার্তায় নিয়ে বিপাকে রয়েছেন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি।
সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ আরও বলেছেন, এই নির্বাচনে হিলারির পক্ষে নেমেছে সব প্রতিষ্ঠান, রিপাবলিকান প্রার্থীকে জিততে দেওয়া হবে না বলেই তিনি মনে করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ সুইডেনে হস্তান্তর এড়াতে ২০১২ সাল থেকেই লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়ে আছেন।
টেলিভিশন নেটওয়ার্ক রাশিয়ান টুডের জন্য তথ্যচিত্র নির্মাতা জন পিলগার সেখানেই অ্যাসাঞ্জের সাক্ষাৎকার নেন বলে ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গোপনতথ্য ফাঁসের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। দেশটিতে উইকিলিকসের কার্যক্রম নিয়ে একটি অপরাধ তদন্তও চলমান।
সম্প্রতি হিলারির নির্বাচনী প্রচার শিবিরের চেয়ারম্যান জন পডেস্টারের কয়েক হাজার ইমেইল ফাঁস হয়। তাতে গোল্ডম্যান সাকসকে অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হিলারির বেশ কয়েকটি বক্তব্য এবং মধ্যপ্রাচ্য ও চীন-রাশিয়াকে নিয়ে তার আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশিত হয়।
গত মাসে ওই সিরিজের প্রকাশিত একটি ইমেইলের দিকে ইঙ্গিত করেন অ্যাসাঞ্জ। ফাঁস হওয়া ইমেইলগুলোর মধ্যে এটিকেই ‘সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ’ হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি।
২০১৪-র ১৭ অগাস্ট লেখা ওই ইমেইলে দেখা যায়, হিলারি বারাক ওবামার প্রশাসনে কাজ করা পডেস্টাকে সৌদি ও কাতার প্রশাসনকে ‘চাপ’ দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন।
ওই ইমেইলে বলা হয়, “কূটনৈতিক এবং চিরাচরিত গোয়েন্দা সম্পদ ব্যবহার করে সৌদি ও কাতার সরকারকে চাপ দেওয়া উচিত, যারা আইএসআইএল ও ওই অঞ্চলের অন্যান্য জঙ্গি সুন্নি ইসলামিক গোষ্ঠীকে চোরাগোপ্তা অর্থ ও রসদ সরবরাহ করে আসছে।”
যুক্তরাষ্ট্র সরকার কখনোই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে আইএসের সখ্যের কথা স্বীকার করেনি বলেও জানান অ্যাসাঞ্জ।
“এর বদলে তারা দেখানোর চেষ্টা করছে- দুর্বৃত্ত কয়েক প্রিন্স তাদের তেলের খনি থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে জঙ্গিদের সাহায্য করাসহ যা ইচ্ছা তাই করে আসছে; যেখানে দেশগুলোর সরকারের কোনো সমর্থন নেই।”
সেক্ষেত্রে কি মনে করেন যে যাদের অর্থে আইএস গঠিত হয়েছে, তারাই ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অর্থ জোগাচ্ছে- পিলগারের এই প্রশ্নে অ্যাসাঞ্জ বলেন, “হ্যাঁ।”
সৌদি সরকার ১৯৯৭ সাল থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন প্রতিষ্ঠিত এ দাতব্য ফাউন্ডেশনে ১০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য দিয়েছে। গত মাসে কাতারের সরকারও বিল ক্লিনটনের জন্মদিনে ওই ফাউন্ডেশনে ১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এই অর্থ হিলারির নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে তার বিরোধীরা অভিযোগ করে আসছেন; যদিও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের মুখপাত্রদের দাবি, ফাউন্ডেশনের অর্থ নিয়ে হিলারি কখনোই জানতে চাননি এবং তার নির্বাচনী প্রচারেও এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না।
হিলারি যে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন সৌদি আরব ওই ফাউন্ডেশনে কোনো অর্থ দেয়নি বলেও দাবি তাদের।
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ফাঁস হওয়া জন পডেস্টার ইমেইল সিরিজ হিলারির জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়েছে। এর আগে ট্রাম্পের তুলনায় অনেকদূর এগিয়ে ছিলেন এ ডেমক্রেট প্রার্থী ।
রাশিয়ার যোগসাজশে অ্যাসাঞ্জ ট্রাম্পকে জেতাতে ডেমক্রেট প্রার্থীর বিপক্ষে ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে হিলারির প্রচার শিবির বেশ কয়েকমাস ধরে দাবি করে আসছে। তবে অ্যাসাঞ্জ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তার সাক্ষাৎকার ব্যবহার করে নির্বাচনে ট্রাম্প জিতে যেতে পারেন, এমনটাও মনে করছেন না তিনি।