খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৬ নভেম্বর ২০১৬: নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সমালোচনার মুখে থাকা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেছেন, ‘আমি কাউকে মালাউনের বাচ্চা বলিনি। আমার বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেবো।’
রোববার দুপুরে নাসিরনগর উপজেলার আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, একটি শিশুও বিশ্বাস করবে না যে আমি নিজ নির্বাচনী এলাকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার পরিবর্তে হিন্দুদের গালিগালাজ করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেবো। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক, যা আমার শত্রুপক্ষই ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি হিন্দু ভাইবোনদের হেফাজতে যথাযথ ভূমিকা পালন না করে নিজেদের মধ্যে একটি মিথ্যা খবরের ভিত্তিতে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করা মানেই ক্ষতিগ্রস্থদের আরো হুমকির মধ্যে ঠেলে দেয়া। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের মতো সংগঠনও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে অভিযুক্ত করায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিজেই সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনি শোনা কথার ভিত্তিতে এই অভিযোগ তুলেছেন। তারা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার স্বার্থে আমার সাথে দেখা করতে পারতেন, কিন্তু তা করেননি। মিথ্যা অভিযোগের তীর ছুঁড়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে তারা কেন ঢাকায় ফিরে গেলেন এটাও একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন হয়ে আছে।
ছায়েদুল হক বলেন, আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করতে একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু আমি অত্যন্ত দৃঢ়কন্ঠে বলতে চাই আমার জীবন থাকতে আমি হিন্দু ভাই বোনদের ক্ষতি করার মাধ্যমে নিজের সুনামহানির ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেবোনা। যারা তাদের ক্ষতি করেছে, বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে, মন্দিরে ভাঙচুর করেছে তাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।
মন্ত্রী উপস্থিত থাকার পরও শুক্রবার কিভাবে এ ঘটনা ঘটলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছয়দিন ধরে এখানে আছি। ঘটনার পর থেকে পুরো পরিস্থিতি নিজে পর্যবেক্ষণ করেছি। বুধবারও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি ঘুরেছি। রাত চারটার সময় বিছানায় শুয়েছি। প্রতিটি মন্দিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী নিরাপত্তায় ছিল। এরপরও এমন ঘটনা ঘটা দু:খজনক।
সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সুলতানা কামালের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা নাসির নগরে এসে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি, মন্দির পরিদর্শন করেছেন। অথচ তারা কেন আমার সাথে দেখা করলেন না?
নাসির নগরের ঘটনায় বহিস্কার হওয়া তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে নির্দোষ দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ঘটনার দিন সদরের চেয়ারম্যান হাশেম ও কর্মী নূর আলম সহিংসতা ঠেকাতে এগিয়ে গিয়েছিল। তাদের একজন আহতও হয়েছে। ফারুক নিজেও ওই সহিংসতা ঠেকাতে এগিয়ে গিয়েছিল। অথচ তাদের দল থেকে বহিস্কার করা হলো।
কোন দোষ না থাকলে তাদের আওয়ামী লীগ থেকে কেন বহিস্কার করা হলো-এমন প্রশ্নের জবাবে ছায়েদুল হক বলেন, কেন বহিস্কার করা হলো এটা যারা বহিস্কার করেছেন তাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করেন। আমি এই সব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ইসলাম অবমাননার প্রতিবাদের নামে ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরের ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।ওই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ওই এলাকার একাধিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য অভিযোগ করেন, নাসিরনগরের ইউএনও মোয়াজ্জেম ও ওসি আবদুল কাদেরের উপস্থিতিতে একটি সমাবেশে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের পরই ওই হামলা চালানো হয়।
ঘটনার পর সহস্রাধিক লোককে আসামি করে দুটি মামলা হয়। গঠন করা হয় তিনটি তদন্ত কমিটি। মন্দিরসহ বাড়িঘরে হামলার পাঁচ দিনের মাথায় পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই শুক্রবার ভোরে উপজেলা সদরের পশ্চিমপাড়া এলাকায় সংখ্যালঘুদের বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
ওই ঘটনায় প্রশাসন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের জবাবে মৎস্য ও প্রানীসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক উত্তেজিত হয়ে ‘মালাউনের বাচ্চারা বেশি বাড়াবাড়ি করতাছে’ এমন মন্তব্য করেন বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।