খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৬ নভেম্বর ২০১৬:হবিগঞ্জে জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন চেয়ারম্যান ও সদস্য পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রচারণায় চেয়ারম্যানের তুলনায় সদস্য প্রার্থীরা অনেক এগিয়ে রয়েছেন। কয়েকজন অনেকটা আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমে পড়েছেন।
তারা লিফলেট, কার্ড বিতরণও করছেন। ঘনিষ্টজনদের নিকট দোয়া, সহযোগিতা চাইছেন। তবে বেশির ভাগ প্রার্থীই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আর চেয়ারম্যান পদে এখনও পযর্ন্ত একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। তবে আরও দু’জনের নামও প্রার্থীতার আলোচনায় রয়েছে। তারা হচ্ছেন সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও মাধবপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম। যদিও তারা দু’জনেই প্রার্থীতার বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। উভয়েই বলেছেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এটি দলীয় নির্বাচন হয় কি-না তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
দলীয় নির্বাচন হলে দলের মনোনয়ন দেয়ার উপর নির্ভর করছে। প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এখনও তারা চূড়ন্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানান। তবে ইচ্ছা রয়েছে। অপরদিকে মাঝে মাঝেই কিছু প্রচারণা করছেন জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট এনামুল হক মোশাহিদ। তিনি কার্ড ছাপিয়ে বিতরণও করছেন। তবে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনেকের মাঝে সন্দেহেরও সৃষ্টি করেছে। যদি নির্বাচনে অংশ নেনও তবুও অপ্রতিদ্বন্দ্বিই থাকবেন ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। কারণ জেলায় জামায়াতের ভোট নেই বললেই চলে। বিএনপির ভোট সংখ্যাও একেবারেই নগণ্য। যা হিসেব করার মতো নয়। ফলে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অন্য কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণাও দেননি, প্রচারণাও করছেননা।
এদিকে এ নির্বাচন উপলক্ষে পুরো জেলাকে ১৫টি সাধারণ ও ৫টি সংরক্ষিত আসনে ভাগ করা হয়েছে। আসন বিন্যাস করতে গিয়ে একটি উপজেলার সাথে অপর অপর উপজেলার ইউনিয়নকে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যসহ ভোটারদের মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ-১ আসনে রাখা হয়েছে আজমিরীগঞ্জ পৌরসভাসহ এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এবং বানিয়াচং উপজেলার ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-২ আসনে বানিয়াচং উপজেলা সদরের ১, ২, ৩ ও ৪নং ইউনিয়ন এবং ৬,৭ ও ৮নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-৩ আসনে একই উপজেলার ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-৪ আসনে নবীগঞ্জ উপজেলার ১, ২, ৩, ৪ ও ৫নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-৫ আসনে নবীগঞ্জ পৌরসভার সাথে রাখা হয়েছে ৬, ৭, ৮ ও ৯নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-৬ আসনে একই উপজেলার ১০, ১১, ১২, ১৩নং ইউনিয়ন এবং বাহুবল উপজেলার ১নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-৭ আসনে বাহুবল উপজেলার ২, ৩, ৪, ৫ ও ৭নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-৮ আসনে আছে হবিগঞ্জ পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ৩, ৪, ৫ ও ১০নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-৯ আসনে সদর উপজেলার ১, ২, ৬, ৯ ও লাখাই উপজেলার ৫নং ইউনিয়ন।
হবিগঞ্জ-১০ আসনে সদর উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভাসহ ৭ ও ৮নং ইউনিয়ন এবং বাহুবল উপজেলার ৬নং ও চুনারুঘাট উপজেলার ৭নং ইউনিয়ন রাখা হয়েছে। হবিগঞ্জ-১১ আসনে লাখাই উপজেলার ১, ২, ৩, ৪ ও ৬নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-১২ আসনে চুনারুঘাট উপজেলার ১, ২, ৩, ৪ ও ১০নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-১৩ আসনে চুনরুঘাট পৌরসভাসহ এ উপজেলার ৫, ৬, ৮ ও ৯নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-১৪ আসনে রাখা হয়েছে মাধবপুর উপজেলার ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ও ১১নং ইউনিয়ন। হবিগঞ্জ-১৫ আসনে রয়েছে মাধবপুর পৌরসভাসহ এ উপজেলার ১, ২, ৩, ৪ ও ৫নং ইউনিয়ন। আর সংরক্ষিত আসন করা হয়েছে হবিগঞ্জ-১, ২ ও ৩ নিয়ে হবিগঞ্জ সংরক্ষিত-১, হবিগঞ্জ-৪, ৫ ও ৬ নিয়ে হবিগঞ্জ সংরক্ষিত-২, হবিগঞ্জ-৭, ৮ ও ১০ নিয়ে হবিগঞ্জ সংরক্ষিত-৩, হবিগঞ্জ-৯, ১১ ও ১২ নিয়ে হবিগঞ্জ সংরক্ষিত-৪ এবং হবিগঞ্জ-১৩, ১৪ ও ১৫ নিয়ে হবিগঞ্জ সংরক্ষিত-৫ আসন গঠন করা হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সীমানা নির্ধারণ করেছেন সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম। এদিকে এ সীমানা নির্ধারণ নিয়ে প্রার্থী এবং ভোটারদের মাঝে স্পষ্ট কোন ধারণা তৈরী হয়নি।
অধিকাংশরাই জানেননা কোন আসনের সীমানা কতটুকু। এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জের সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট প্রসেনজিৎ জানান, তিনি হবিগঞ্জ-১ আসনের সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে প্রচারণা শুরু করেছেন। কিন্তু স্পষ্ট করে বলতে পারেননা তার আসনে কোন কোন ইউনিয়ন রাখা হয়েছে। আবার পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা কি তার ভোটার কি-না তা নিয়েও তার মাঝে বিভ্রান্তি রয়েছে। কারণ তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না। আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেউ জেলা পরিষদের ভোটার হতে পারবেননা বলে তিনি জানান। জেলায় মোট ভোট রয়েছে ১১০৩টি। এর মাঝে ৭৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য, ৬টি পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং ৮টি উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা এ নির্বাচনের ভোটার হিসেবে গণ্য হবেন।