খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৭ নভেম্বর ২০১৬: মানব ও মাদক পাচারে সম্পৃক্ত ৪৬১ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের পরিমাণ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব শাখাকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তালিকাভুক্তদের হিসাবে অস্বাভাবিক কোনো লেনদেন হলে তাও জানাতে হবে। চিঠি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট। তালিকার বেশিরভাগই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের। তাদের মধ্যে দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এমপি আবদুর রহমান বদির ভাই মজিবুর রহমান ও ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপুসহ অর্ধডজন বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি রয়েছে। এদিকে ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়ার পর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে আবারও মানব ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু হবে বলেও জানিয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
জানা যায়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের সূত্র ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের কমপ্লেইন্টস হ্যান্ডলিং অ্যান্ড ইনফরমেশন এক্সচেঞ্জ উইং থেকে ব্যাংকগুলোর শাখায় ১৬ অক্টোবর এ তালিকাসহ নির্দেশনা পাঠানো হয়। ১৬ নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের শাখাপ্রধানরা।
মানব, মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা বৈধকরণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন অনেকেই। এমপি বদি ও তার স্বজনদের পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় এ অপরাধ কার্যক্রম ক্রমেই বাড়ছে বলেও অনেকের অভিযোগ। তাই এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর আগে এ অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের পৃথকভাবে তালিকা তৈরি করা
হয়েছিল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের তালিকায় এমপি বদিকে মাদকের মূল পৃষ্ঠপোষক বলা হয়। ওই তালিকায় তার ১৭ জন আত্মীয়ের নাম আছে। আবার রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে সহায়তাকারীদের তালিকায়ও তিনি আছেন এক নম্বরে। মানব পাচারকারী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকের তালিকায়ও শীর্ষে আছেন টেকনাফ-উখিয়া আসনের এমপি বদি। তার ছোট ভাই মৌলভী মজিবুর রহমানের নাম আছে তিন নম্বরে। আবার রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহকারীদের তালিকায় মুজিবরের নাম আছে আটে। তালিকার দুই নম্বরে আছেন এমপির আরেক ভাই আবদুর শুক্কুরের নাম। তালিকার চার নম্বরে বদির ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম, পাঁচ নম্বরে ফয়সাল রহমান ও আট নম্বরে চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলমের নাম রয়েছে। আত্মীয়দের মধ্যে তার ভাই আবদুল আমিন, বোন শামসুন্নাহার, বোনের ছেলে সাহেদুর রহমান নিপু, বোনের দেবর হামিদ হোসেন, চাচাতো দেবর আক্তার কামাল, শাহেদ কামাল, জসিম উদ্দিন রাব্বানী, মোয়াজ্জেম হোসেন দানু, ননদের স্বামী নুর মোহাম্মদ মেম্বার, চাচাশ্বশুর জহির উদ্দিন ওরফে কানা জহির, ফুফাতো ভাই কামরুল ইসলাম ওরফে রাসেল, বেয়াই আফসার, সৈয়দ হোসেন, মফিজুর রহমান, এমপি বদির ফুফাতো ভাই সৈয়দ আলম, নুরুল আলম নুরা, ভাগিনা শামীম ওরফে হাসু ও খালাতো ভাই মং মং সেনের নাম তালিকায় আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় তাদের সবার নাম আছে।
এ ছাড়া উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের চেপটখালী এলাকার মোস্তাফিজ সিকদারের ছেলে ফয়েজুল ইসলাম, একই এলাকার মাস্টার শরীফ আহমদের ছেলে আবুল কালাম, সোনাইছড়ি এলাকার মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে বেলাল উদ্দিন ওরফে লাল বেলাল, মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে রোস্তম আলী, ডেইলপাড়ার মৃত কাদের হোসেনের ছেলে জমির উদ্দিন ওরফে কালা জমির, জালিয়া পালং ইউপির সাবেক সদস্য বেলাল উদ্দিন ওরফে বেলাল মেম্বার, মৃত রাজ মুকুল বড়ূয়ার ছেলে বাবুল বড়ূয়া প্রমুখ।
তালিকায় বেশ কয়েকজন মানব পাচারকারীর স্ত্রীর নামও আছে। তাদের মধ্যে রয়েছে সোনাইছড়ি এলাকার নুরুল কবিরের স্ত্রী রেবী ম্যাডাম, নাইটং পাড়ার জাফর আহমদের স্ত্রী হাসিনা বেগম, টেকনাফ উপজেলার শাহ্পরীর দ্বীপ এলাকার আক্তার হোসেন মাঝির স্ত্রী দিলদার বেগম, একই গ্রামের শামারুক ওরফে শারেক বানু, বশির আহমদের স্ত্রী হাফেজা বেগম, ইমাম শরীফের স্ত্রী হাসিনা বেগমসহ আরও কয়েকজন।
সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, চিঠি প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। শিগগির প্রতিবেদন আকারে এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হবে। এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের একজন শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, তালিকায় থাকা কিছু ব্যক্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়নি। যাদের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছি তাদের লেনদেনের বিষয়টি শিগগির প্রতিবেদন আকারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও এমপি বদির আটকের ঘটনায় মানব পাচার ও মাদক পাচারের ঘটনা এ মুহূর্তে কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য দেওয়া হলে আমরা আবার শুদ্ধি অভিযান শুরু করব। একই প্রসঙ্গে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানব ও মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। সমকাল