খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৭ নভেম্বর ২০১৬: দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে আছে মহাখালীর সিটি করপোরেশন বাজার। কাওরান বাজার ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। তাদের নানা শর্তের জালে আটকে আছে কাওরান বাজার স্থানান্তর প্রক্রিয়া। এতে করে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কাওরান বাজার সরিয়ে নেয়ার দশ বছরের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পথে। উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম জানান, কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা দোকান স্থানান্তরের বিষয়ে লিখিতভাবে সম্মতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাদের কিছু দাবিও আছে। সেসব বিষয় সমাধানের কাজ প্রক্রিয়াধীন।
কাওরান বাজারের পাইকারি কাঁচাবাজার পরিকল্পিত তিনটি স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া দশ বছর ধরে চলছে। মহাখালী ও আমিনবাজার কাঁচাবাজার প্রস্তুত হলেও কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীরা যাননি। ব্যবসায়ীরা সরিয়ে নিতে সম্মত হলেও দোকান বরাদ্দ বাবদ টাকা, ভাড়া মওকুফসহ নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। শর্ত পূরণ না হওয়ায় তারা যাচ্ছেন না। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, দুটি বাজারের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও তা চালুর উপযোগী নয়। আর যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। তবে মহাখালী ও গাবতলীর আমিনবাজারে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এ দুই মার্কেটে ব্যবসায়ীরা এখনই যেতে পারেন। কিন্তু আমিনবাজারের সঙ্গে দুটি সংযোগ সড়ক তৈরির দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি মার্কেটের মধ্যে দোকানের আকার আরো বড় করার দাবি করেছেন। এসব কাজ শেষ হলে আমিনবাজারে যেতে কোনো আপত্তি নেই তাদের।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মহাখালী বাজারের একমুখী চলাচলের পরিবর্তে দ্বিমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এছাড়া মহাখালী মার্কেটে ছোট আকারের দোকানে তারা যেতে চান না। কাওরান বাজারের পাওয়া দোকানের মতো বড় দোকান চান তারা। কাওরান বাজারে দোকান ছেড়ে নতুন মার্কেটে দোকান নিতে জামানতের অর্থ বা সেলামি দিতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে নতুন মার্কেটে দুই বছরের ভাড়া মওকুফ চান। কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইসলামিয়া শান্তি সমিতির একজন নেতা জানান, ব্যবসায়ীরা নতুন মার্কেটে যেতে একমত হয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু দাবি জানানো হয়েছে। এসব দাবি পূরণ হলে স্থানান্তর করা হবে। উত্তর সিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়ীদের অনেক সুযোগ-সুবিধার কথা বলেও কাওরান বাজার স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। ঠিক কতদিনের মধ্যে পারা যাবে, বলা সম্ভব না। কিন্তু চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কাওরান বাজারের যানজট কমাতে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কাওরান বাজারের মোট এক হাজার ৭৮৯ জন ব্যবসায়ী প্রকল্পের তিনটি বাজারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দোকান বরাদ্দ পাবেন। এর মধ্যে মহাখালী মার্কেটেই কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য সংরক্ষিত ৩৬০টি দোকান। এছাড়া বাকি দোকান আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে স্থানান্তর হবে। এ ক্ষেত্রে স্থায়ী বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরা যাত্রাবাড়ীতে স্থানান্তরের সুযোগ পাবেন। অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা আমিনবাজারে বরাদ্দ পাবেন। তবে স্থায়ী ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো বাজারে বরাদ্দ দেয়া হবে।
মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঘেঁষা সিটি করপোরেশন মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটে ২০ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য মাসিক ব্যয় প্রায় দুই লাখ টাকা। দেখাশোনার জন্য আরো আছেন ১০ জনের মতো। এদের প্রত্যেকের বেতন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে ব্যয় হয় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। ফলে লোকসান গুণছে উত্তর সিটি। মহাখালীর এই বাজারে সাত দশমিক ১৭ একর জমির ওপর পাঁচটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ হাজার বর্গমিটার ফ্লোর এরিয়ায় দোকান নির্মাণ করা হয়েছে ৩৬০টি। প্রতিটি ভবন ছয়তলা বিশিষ্ট। মার্কেট সীমানায় রয়েছে নয়তলা বিশিষ্ট আরেকটি ভবন। আছে গ্যারেজ, ময়লার ডাম্পিং স্পেস, কসাইখানা ও জেনারেটর বিল্ডিং। ইত্তেফাক