Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

9kখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০১৬:  জিওপি! গ্রান্ড ওল্ড পার্টি। বাইরের দুনিয়া তো বটেই, খোদ আমেরিকারই কত শতাংশ মানুষ জানেন এই পার্টির নাম? হ্যাঁ, এটিই আমেরিকার প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের একটি রিপাবলিকান পার্টির আরেকটি নাম। এই দল থেকেই ১৮৬১ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ছিলেন বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম কিংবদন্তী আব্রাহাম লিংকন। তারপর আরও ১৭ জন। অর্থাৎ দলটির জন্মের পর এ পর্যন্ত মোট ১৮ জন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন রিপাবালিকান পার্টি থেকে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে (বাংলাদেশ সময়সন্ধ্যা ৭টায়) আমেরিকায় যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাতে রিপাবালিকান পার্টির প্রার্থী নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আরেকটি পরিচয়, তিনি টেলিভিশনের রিয়েলিটি শো’র উপস্থাপক। সেই অর্থে তারকাও বটে। নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কাছে তিনি অপরিচিত নন। অতীতে তিনি কখনও প্রথাগত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। চতুর ব্যবসায়ী হিসাবে সব সময়ই ক্ষমতাসীন মহলের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে নিজের ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছেন তিনি। যদিও ব্যবসায়ী হিসাবে তার সততা ও নৈতিকতা এখন আমেরিকান নাগরিক সমাজের অন্যতম আলোচনার বিষয়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দিন ম্যানহাটনের ট্রাম্প টাওয়ারে নিজের ব্যবসার অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করে রিপাবালিকান পার্টির প্রার্থীতার লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দেন সে দিন উপস্থিত সাংবাদিকরা তার কথায় যেন কেবল হাসির খোরাকই খুঁজে পেয়েছিলেন। এর কারণও পরিষ্কার। নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প সে দিন বলে ছিলেন, আমেরিকার জন্য আমি খুবই ভাল প্রেসিডেন্ট হবো। কারণ আমি ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি করবো না। আমি তো ধনী, সত্যিই যথেষ্ট ধনী (আই এম রিচ, রিয়েলি এনাফ রিচ)। আমেরিকার মতো দেশের একজন হবু প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর কে হাসবে না ? হয়েছিলও তাই। কিন্তু তার পর দিন যত গেছে অদ্ভুত এক ভীঁতিজাগানিয়ে কৌশলে সবাইকে চমকে দিয়ে কেবল সামনের দিকেইএগিয়েছেন।
গত দেড় বছরে তার নানা কথায় যুক্তরাষ্ট্রের উদারবাদী রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবি ও বিশেষত অভিবাসীরা এমনকি দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ ক্রমাগত আতঙ্কিত বোধ করলেও নিজের বর্ণ ও ধর্মবিদ্বেষী অবস্থান থেকে মুহূর্তের জন্যও সরেননি তিনি। আর তাতে আমেরিকারই অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষ ছুটলো তার পেছনে। এই মানুষগুলো যেন বহুকাল ধরেই এমন একজন নেতার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। নিজেদের চিন্তার মানুষ ভেবে এতকাল রিপাবালিকান পার্টির যেসব নেতা কেতারা ভোটদিয়ে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিলেন তার সবই যেন ভুলছিল। সাম্প্রতিক একটি জনমত জরিপের ফল অন্তত তাই বলছে। কংগ্রেসের রিপাবালিকান দলীয় স্পিকার (যিনি একইসঙ্গে দলটির চেয়ারও) পল রায়ান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কে যথাযথভাবে দলীয় আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ৫১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন ট্রাম্পের কথা। অন্যদিকে পল রায়ানের নাম বলেছেন মাত্র ৩৩ শতাংশ। এই চিত্র দেখে রিপাবালিকান নয় এমনমানুষের ভ্রু কুঁচকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু খোদ রিপাবালিকান পার্টির দীর্ঘকালের নেতারা ইআঁঁতকে উঠছেন।
কারণ, ১৮৫৪ সালে জন্ম নেওয়া দলটির উদ্যোক্তা ছিলেন দাস প্রথা-বিরোধী লোকেরা। এরমধ্যে একটি বড় অংশ এসেছিলেন আমেরিকান হিগ পার্টি থেকে যারা ওই দলের ভিতর আধুনিক এবং উদারপন্থী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। রিপাবালিকান পার্টির প্রকৃত আদর্শ কি ছিল তার সবচেয়ে উজ্জল দৃষ্টান্ত আব্রাহাম লিংকন। তাঁর ঠিক ১শ’ বছর পর সেই পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্প কি বলছেন ? এক দিকে ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। একই সঙ্গে তিনি মুসলমানদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করণ, মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণ এবং অভিবাসীদের বিরূদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের ঘোষণার মাধ্যমে অতিরক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গ খ্রীষ্টানদের উস্কে দিয়ে এতদূর চলে এসেছেন।
তাঁর দেখানো পথ ধরেই কিরিপাবলিকান পার্টি নতুন পথে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিসি টেলিভিশনের সাংবাদিক স্ট্যানলিরিও এই প্রতিবেদককে বলেন, নতুন পথে যাচ্ছে কিনা তাহয়তো এখনই বলা যাবে না। তবে রিপাবলিকান স্টাবলিশমেন্ট তথা আমেরিকার উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যে তিনি দাঁড় করিয়েছেন এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ইত্তেফাক