Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

10kখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০১৬:  নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করে তা আদালতে দাখিল করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওইদিন মামলাটি পরবর্তী আদেশের জন্য আসবে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের নয় বিচারপতির বেঞ্চ গতকাল সোমবার এই আদেশ দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আপিল বিভাগ বলেন, এটাই শেষ সময়। আর কোন সময় দেয়া হবে না। চাকরির শৃঙ্খলা বিধিমালা না থাকায় নিম্ন আদালতের কিছু বিচারক শৃঙ্খলার বাইরে চলে যাচ্ছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরেও তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। বিচার বিভাগ জিম্মি হয়ে আছে। দেশের একটি বিভাগ জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত খসড়া বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। সুপ্রিম কোর্ট ওই বিধি সংশোধন করে দেয় এবং ৬ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সরকার গেজেট প্রকাশ না করে গতকাল আট সপ্তাহ সময় চেয়ে একটি আবেদন দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালত বলেন, হলফনামায় প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানোর কথা বলেছেন। কবে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠিয়েছেন সেই দিনক্ষণ উল্লেখ নেই। এটা কি ধরনের আবেদন? এটি অসম্পন্ন।
আদালত বলেন, আপনি (আইন মন্ত্রণালয়) একটি খসড়া পাঠিয়েছিলেন। সেটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। আমরা তা সংশোধন করে দিয়েছি। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে সেটি পাঠানো কি দরকার ছিল? রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী গেজেট সংসদীয় পদ্ধতিতে সরকার এটা বাস্তবায়ন করবে। আদালত বলেন, আপিল বিভাগের সর্বশেষ নির্দেশনার পর আড়াই মাস চলে গেছে। এখনো গেজেট করতে পারেননি। অধস্তন আদালতের কিছু বিচারক দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। তারা শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
আদালত আরো বলেন, একজন অতিরিক্ত জেলা জজ রাষ্ট্রপতির কাছে ইমপিচমেন্ট চেয়ে চিঠি দিয়েছে। অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেয় ঔদ্ধত্য কত? এই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও ‘ডিপ ফ্রিজে’ ফেলে রাখা হয়েছে। আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, আপনি না পারলে সারেন্ডার করুন। আমরা দেখছি। আদালত বলেন, কবে এবং কখন রাষ্ট্রপতির কাছে এই বিধিমালা পাঠিয়েছেন আজ সাড়ে ১১ টার মধ্যে আদালতকে অবহিত করুন।
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি (আইনমন্ত্রী) তো দেশের বাইরে। তিনি না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন তথ্য জানা যাবে না। আদালত বলেন, আপনাদের সময় আবেদন ‘ফলস স্টেটমেন্টের’ ভিত্তিতে। এর কোন সত্যতা নেই। আদালত বলেন, বিচার বিভাগ জিম্মি হয়ে আছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী বিচারকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। দেশের একটি বিভাগ জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। আমরা খসড়া বিধিমালা ‘লাল কালি’ দিয়ে মার্ক করে দিয়েছি। এরপরেও গেজেট প্রকাশ করতে পারেননি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মাসদার হোসেন মামলায় আমি এর আগেও অনেকবার আদালতে দাঁড়িয়েছি। এটা অনেকটা আসামির মত। আদালত বলেন, একটি শব্দ বাদ দিতে বলেছি। তা পাঁচ বছরেও করতে পারেননি। আদালত বলেন, ১৪ বছর হয়ে গেছে কিন্তু মাসদার হোসেন মামলার রায়ের এই অন্যতম নির্দেশনাটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটিও বাস্তবায়িত হবে। আমাদের সুযোগ দিন। আদালত বলেন, নিম্ন আদালতের ১৭০ জন বিচারকের এজলাস নেই। তারা এজলাস ভাগাভাগি করে বিচার কাজ পরিচালনা করছেন। এছাড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভবন নির্মাণ ও তা চালুর ক্ষেত্রেও ধীরগতির দেখা যাচ্ছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালত বলেন, প্রেসিডেন্টের দোহাই দিয়ে আপনারা (মন্ত্রণালয়) নিম্ন আদালতের বিচারকদের দুর্নীতির অভিযোগ ফেলে রাখছেন। রুলস অব বিজনেস করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা মন্ত্রণালয় নিয়েছে। আমরা চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধন করে দিয়েছি। এই সংশোধন মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাইরে গিয়ে করা হয়নি। দাড়ি, কমা ও সেমিকোলন ঠিক রাখা হয়েছে। এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপনারা রুলস করে দিয়েছেন। আদালত বলেন, আমরা রুলস করে দেইনি। সরকার যেটি করেছে তা সংশোধন করে দিয়েছি।
এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালত বলেন, আমরা দুই সপ্তাহ সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে গেজেট প্রকাশ করুন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই সময়ের মধ্যে করা সম্ভব নয়। এরপর আদালত ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেন। ইত্তেফাক