
৭ নভেম্বর ঘটনা ইতিহাসের স্বাভাবিক ধারা ও শিক্ষাই উচ্চকিত হয়ে উঠেছিল। জনগনের অাস্থা, বিশ্বাস ও সমর্থনই যে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতার একমাত্র সোপান, এই মহাসত্যের প্রতিফলন ঘটেছিল জিয়াউর রহমানের সাহসী ও যুগন্তকারী দিকদর্শন মুলক বক্তব্য প্রচারের মধ্যদিয়ে। সেদিন প্রমানিত হয়েছে যে, জনগনের অধিকার এবং অাশা অাকাংখার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও পুনরুজ্জীবনের পথে যে কোন চক্রান্তই অন্তরায় বা বাধা সৃষ্টির চেস্টা করুক, তাহা শেষ পর্যন্ত নস্যাৎ হয়ে যাবেই তা অারেকবার প্রমানিত হয়েছে। বর্তমান দেশ, জাতি ও সার্বভৌমত্বে চরম দুঃসময় চলছে। দেশের জনগনের মধ্যে সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও ভোটাধিকার হরনের কারনে ক্ষোভ তিল তিল করে অাজ পাহাড়ে রূপ নিয়েছে। ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতার অভ্যুখানকে বিবেচনা করিতে হবে বাংলাদেশের জনগনের লালিত অাকাংখা, সংগ্রামী ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার রহমানের সাহসী ও বীরত্বপুর্ন ভুমিকার অালোকে। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তার দেশপ্রেম, সাহসী ঘোষনায় ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ দেশের কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা মুক্তির সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিল। জিয়া নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে উল্লেখ করে মুক্তিকামী মানুষদের নেতৃত্ব দিয়ে হৃদয়ে স্থান করেছিলেন, যা ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সঠিক নেতৃত্ব হিসাবে বেছে নিতে সহজ হয়েছে বাংলাদেশের সিপাহী জনতাকে।
৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয় ” দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে বাদ দিয়া তাহাদের অধিকারের কথা চিন্তা না করিয়া, তাহাদের অাশা অাকাঙ্থার প্রতি যথোচিত দৃষ্টি না দিয়া রাজনীতি, সমাজনীতি বা অর্থনীতি কোনোটাই হইতে পারে না। মানুষ লইয়া দেশ এবং মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণ চেস্টার মধ্য দিয়াই গড়িয়া উঠে দেশের সার্বভৌমত্ব। এই হিসাব ও বিবেচনার এতটুকু ব্যত্যয়, এতটুকু বিচ্যুতি ঘটিলেই অনিবার্য ভাবে দেখা দেয় জনতার রোষ বহিৃ ও প্রতিরোধ শক্তি। অাপন গতিতে বহিয়া চলিয়াছে, সাথে সাথে বহিয়া চলিয়াছে জনগনের সার্বভৌমত্বের ধারাও। যে কোনো দেশের উত্থান পতনের মধ্যে এই ঐতিহাসিক সত্যেরই প্রতিফলন দেখা যায়। গতকল্যকার সৈনিক-জনতার বিশাল-ব্যাপক ও স্বতঃস্ফুর্ত অভ্যুত্থান এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের পতন হইয়াছে, প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে জনগনের সার্বভেমৈত্বের ঘোষনা। এই ঘোষনা এখন যথোচিত ব্যবস্থা ও কার্যসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হইবে। জাগ্রত করিতে হইবে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গভীর দায়িত্ববোধ।
গতকল্যকার উত্থানের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক সৈনিক জনতা মেজর জিয়াউর রহমানের প্রতি যে, প্রত্যাশা, অাস্থা ও সর্মথন প্রকাশ করিয়াছেন উহা ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অধ্যায়। দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারনে সৈনিক জনতার এই রায় সুদুরপ্রসারী প্রভাব রাখিবে- ইহাই অামাদের বিশ্বাস। (ইত্তেফাক ৮ নভেম্বর ১৯৭৫)”।
চলমান সংকটময় মুহুর্তে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ রাষ্ট্রপতি, স্বাধীনতার মহান ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে দেয়া পদক কেড়ে নেয়া হয়েছে। জাতীয় জাদুঘর থেকে পদক প্রত্যাহার করা হয়েছে। দখলদার অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না বলেই এসব অপকর্ম করতে পারছে। কারো পদক কেড়ে নেয়া যায়, মুর্তি ভেঙ্গে ফেলা যায় কিন্তু কোটি কোটি মানুষের ভালবাসায় সিক্ত জিয়ার চেতনাকে মুছে ফেলা সম্ভব হবে না। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা থাকবে, দেশপ্রেমিক মুক্তিকামী মানুষের মাঝে ততদিন শহীদ জিয়াউর রহমান বেচেঁ থাকবেন চেতনার বাতিঘর হয়ে। বতর্মান ক্রান্তিকালে বেশী প্রয়োজন শহীদ জিয়ার বনাঢ্য কর্মময় জীবনকে নতুন প্রজন্মকে জানানো খুই বেশি প্রয়োজন। দেশের স্বাধীনতা ও দেশের মানুষকে সুক্ষায় জিয়ার অাদর্শ মুক্তিকামী জনতার পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করবে।
লেখকঃ চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ লেবার পার্টি।