Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০১৬: নারীদের পুনর্বাসন, বাল্যবিয়ে বন্ধ ও বৃদ্ধাদের সহযোগিতা করে এলাকায় বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন সুলতানা শামীমারা বেগম ফটো। তবে এলাকায় তিনি ‘ফটো আপা’ বলেই পরিচিত। তাঁর বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়াহাট গ্রামে। তিনি শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি সামাজিক এসব কাজ করে থাকেন। তিনি বৃদ্ধাদের থাকার জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম করেছেন কিন্তু অর্থাভাবে সেটি চালু করতে পারছেন না।

সুলতানা শামীমারা বেগম ফটোর পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, সুলতানার বাবা ডা. শামছুজ্জোহার ইচ্ছে ছিল মেয়ে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে। কিন্তু ফটো চিকিৎসক হতে পারেননি। ২০০৪ সালে ডা. শামছুজ্জোহা মারা যান। এরপর বাবার ইচ্ছে পুরণের কথা ভাবতে থাকেন ফটো। এরপর তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ শুরু করেন।

প্রথমে তিনি বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে হতদরিদ্র নারীদের তালিকা তৈরি করেন। সেই তালিকা থেকে তিনি ৫০জন নারীকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষিত সেই নারীরা এখন স্বাবলম্বী। এছাড়া তিনি প্রায় শতাধিক বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন। সেইসব মেয়েদের আবারো স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। এসব কাজ করতে গিয়ে তিনি বারবার বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন মানুষের। পরে মানুষকে বুঝিয়ে বলার পর মানুষ এখন তার কথা মানে ও শোনে।

বয়স বেশি হলে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। পরিবারের কাছে অনেকটা অবহেলিতও হয়। এসব অবহেলিত বৃদ্ধদের কথা বেশ ভাবায় ফটোকে।এরপর তিনি ভাবেন বৃদ্ধাদের জন্য স্থায়ীভাবে কিছু করবেন। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে অসহায় বৃদ্ধাদের খোঁজখবর নেন। তারপর যার যেমন চাহিদা সে অনুযায়ী সমাধান করে দেন। যে সন্তানরা বাবা-মায়ের ভরনপোষণ দিত না। সুলতানা সেই সন্তানদের বুঝিয়ে ভরণপোষনের ব্যবস্থা করে দেন। যাদের থাকার জায়গা নেই তাদেরকে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। অসুখে বৃদ্ধাদের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অনুরোধ করে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও ভিজিডি কার্ড পাবার ব্যবস্থা করে দেন হতদরিদ্র বৃদ্ধাদের। ফটো এই পর্যন্ত প্রায় ১০০জন বৃদ্ধাকে সহায়তা করেছেন। তাদের খোঁজখবর রাখার জন্য বৃদ্ধাদের সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠক করেন তিনি।

বৃদ্ধা নারীদের থাকার জন্য গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের কচুয়াহাট বাজারের পাশে সুলতানা নিজের টাকায় এগার শতক জমি কিনেছেন। ওই জমিতে প্রায় ছয় লাখ টাকা ব্যয় করে ২২ হাত আঁধাপাঁকা ঘর নির্মাণ করেন। ২০১৩ সালে এখানে গড়ে তোলেন বৃদ্ধাশ্রম। তার নাম দেন ডা. শামছুজ্জোহা মেমোরিয়াল বৃদ্ধাশ্রম।

সুলতানা শামীমারা বেগম ফটো বলেন, আমার কলেজশিক্ষক স্বামীর টাকায় সংসার চলে। আর নিজের বেতনের টাকা বৃদ্ধা নারীদের উন্নয়নে ব্যয় করছি। বৃদ্ধ নারীদের সহায়তা করা এখন তার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, বৃদ্ধা নারীদের বৃদ্ধাশ্রমে রাখার জন্য ঘর করেছি, কিন্তু অর্থাভাবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছি না।

সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইট বলেন, অসহায় বৃদ্ধাদের কল্যাণে তিনি উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন গ্রামের অনেক বৃদ্ধা উপকৃত হচ্ছে। তাই তাকে অনুপ্রেরণা যোগানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করছি।

সুলতানা শামীমারা বেগম ফটো কচুয়াহাট শহীদ এইচআরএম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক আর স্বামী আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল সাঘাটা ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক। তার বড়মেয়ে রাজসি সুলতানা অর্থনীতি বিষয়ে ¯œাতকোত্তর এবং ছেলে জারিফ রাজ অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বৃদ্ধাদের সহায়তার পাশাপাশি তিনি বাল্য বিয়ে রোধ, গ্রামে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ভুমিকা রাখা এবং সামাজিক কাজের জন্য জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তেরটি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।