
বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের ফেসবুক আইডিতে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল’ এই বইটির বিতর্কিত কয়েকটি পৃষ্ঠা নম্বরসহ কিছু উক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
ফেসবুকে ২০ দলের ওই নেতার পোষ্ঠের পর থেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্জায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বইটির ৩৪, ৮০, ৮৫, ১৩২, ১৩৩, ১৩৪ ও উতসর্গ নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করছেন ২০ দলের নেতাকর্মীরা।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক বইটির বিতর্কিত ছড়ানো চুম্বক অংশগুলো হলো-
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল’ নামক বইয়ের ১৩২ নম্বর পাতায় উল্লেখ রয়েছে, ‘ziaur rahman was a cold-blooded murderer.’ এছাড়া ১৩৩ নম্বর পাতায় উল্লেখ রয়েছে ‘পার্লামেন্টারী শাসনব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করেন নাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য, কারন দুজনেই অাগমন সেনা ছাউনি হইতে এবং দুজনই স্বৈরশাসক’। এখানে এরশাদ এবং জিয়াউর রহমানকে সরাসরি স্বৈরশাসক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের ফেসবুক আইডিতে তুলে ধরা হয়েছে বইটির উতসর্গে জাতীয় চার নেতার নাম উল্লেখ করা হলেও জাতীয়তাবাদী আদর্শের এই নেতা তার বইয়েরর উতসর্গে জিয়াউর রমানের নাম উল্লেখ করেনি। এটা নিয়েও সৃষ্টি হয়ে বিতর্কের।
মোস্তাফিজুর রহমান ইরান তার ফেসবুকের ওই পোষ্টে আরো উল্লেখ করেছেন, তিনি মূলতো জেলহত্যা মামলা থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য বইটি লিখেছেন।
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল’ বইটির লেখক ও বিএনপির বর্তমান জেলা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর বির্তকের এই বিষয়ে বলেন, ‘এই বইটি লিখেছি আমার আদর্শের জাগা থেকে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার আদর্শের জায়গা থেকে বইটা লেখা।’
জাতীয়িতাবাদের এই নেতা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই কথাগুলো আমার বইয়ের কোথাও উল্লেখ নেই।’
এ প্রসঙ্গে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল’ বইটির প্রকাশক সিকদার আবুল বাশার বলেন, ‘এটা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর বই।’ ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল’ বইটি প্রথম প্রকাশ হয়েছে ২০১৫ সালে গতিধারা প্রকাশনি থেকে।
বইটির শেষ প্রচ্ছদে লেখকের জীবনী ও তার উল্লেখযোগ্য কৃতৃত্ব উল্লেখ করা রয়েছে। সেখানে মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মনজুর বিএনপির পদপদবীর কোন কথা উল্লেখ করেনি। এটা নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শহীদ জিয়া স্বাধিনতার ঘোষক তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। তিনি যে বই লিখেছেন তা উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত ভাবে লিখেছেন। এ বিষয়ে আমি দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পাশাপাশি এই লেখক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোড় দাবি জানাচ্ছি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৯ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর। তিনি ১৯৯০ সালে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। তার রাজনৈক জীবন শুরু হয় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দলনের মধ্য দিয়ে। এরপর ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে রাজনীতি করেছেন বলে পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া তার ছেলে সোহেল মনজুর সুমন বর্তমানে পিরোজপুর জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও ভান্ডারিয়া থানা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের ফেসবুক পোষ্টে পিরোজপুর-২ আসনের জোমাদ্দার কবির নামের এক ছাত্রদল নেতা কমেন্ট করেছেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কে নিয়ে কটুক্তি করে বি এন পি নামধারী নেতারা পার পেয়ে তারা যদি চরিত্রে জাতীয়তাবাদী আদর্শ মেখে মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করতে পারে তাহলে তার বংশধর রা এর থেকে বড় কোন বেয়াদবি করতে সাহস পাবে। কাজেই, এদেরকে দলে না রেখে আওয়ামীলীগ করার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।’
স্থানীয় ছাত্রদল নেতা নুরুল হুদা মিন্টু হাওলাদার ফেসবুক কমেন্টে লিখেছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা যে কথা বলতে পারে না। সে কথা একজন বিএনপির প্রবিন নেতার লেখায় কিভাবে উঠে আসে তা আমার বোধগম্য নয়। আমি বিশ্বাস করি তিনি তার লেখার পুনঃবিবেচনা করবেন। পাশাপাশি আমি বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে এই লেখার প্রতিবাদ জানাই।
মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের ফেসবুক পোষ্টে জাতীয়তাবাদী দলের অনেক দাবি করেছেন, বিএনপি নেতা হলেও মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর আওয়ামী লীগের দালাল। এছাড়া অর্ধশতাধিক নেতা ফেসবুকে এই বইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।