খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৬: সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে রান্না কাজে বিকল্প জ্বালানী হিসেবে কালো মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে কালো মাটির চাহিদা ও ব্যবহার। হাওরাঞ্চলে প্রায় ২০বছর আগ থেকে রান্নার কাজে গৃহিনীরা কালো মাটি ব্যবহার করে আসছেন। আর কালো মাটি বিক্রী করে বর্ষার শেষদিকে অর্থাৎ কার্তিক মাস থেকে শুরু করে হেমন্তকালের পুরো সময়টা জুড়ে কয়েক হাজার মানুষ বাড়তি আয় করে।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার দিরাই-শাল্লা উপজেলার মেদি বিল, গুড়মাই বিল, শাপলার চর, চাতল বিল থেকে চানপুর, ফকিরপুর, আশ্রম, উজানধল, ও আমিরপুরে গ্রামের লোকজন কালো মাটি সংগ্রহ করছে। একই ভাবে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গজারিয়া নদীর তীরবর্তী অচিন্তপুর, রাজারগাঁও, চানপুর, লালপুর, গোইবন্দপুর, শাকতারপাড়, ভাতেরটেক, সোনাপুরসহ জেলার প্রায় সবকয়টি উপজেলার নদীপাড়, হাওর ও বিল থেকে কালো মাটি সংগ্রহ করা হয়।
কালোমাটি সংগ্রহকারীরা জানান, থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে পুরো ফাল্গুন মাস সময় পর্যন্ত কালো মাটি সংগ্রহ করা হয়। নদী, বিল বা হাওরে প্রথমে ৪/৫ফুট মাটি কুড়লেই বের হয়ে আসে কালো মাটি। এ মাটি সংগ্রহ করে প্রক্রিয়ার পর ৩/৪দিন রৌদে শুকালেই জ্বালানীর উপযোগি হয় কালো মাটি।
কালো মাটি সংগ্রহে নারীদের উপস্থিতি লক্ষনীয়। দল বেঁেধ কাজ করেন নারীরা। দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের রাফসা বেগম বলেন, এক মৌসুমে একেক জন নারী একশত থেকে দেড়শত মন কালো মাটি সংগ্রহ করতে পারেন। একই গ্রামের আনহার মিয়া বলেন, বর্ষাকালে তীব্র জ্বালানী সংকটে পড়েন হাওর পাড়ের মানুষজন। চারদিকে পানি থাকায় জ্বালানী সংগ্রহ করতে কিছুটা সমস্যা হলেও ভাদ্রমাস থেকে জ্বালানি সংগ্রহের কাজে জড়িয়ে পড়েন এবং শুষ্ক মৌসুমে হাওর পাড়ের গৃহিনীরা সারা বছরের জ্বালানী জন্য বাড়িতে কালো মাটি সংগ্রহ করে রাখেন।
শুধু পরিশ্রমেই পাওয়া যায় কালো মাটি। অনেকেই এ সময় কালো মাটি জ্বালানী উপযোগী করে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় ও করছেন। সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের আবু সাইদ জানান, জ্বালানী উপযোগী মাঝারি আকারে এক বস্তা কালো মাটি বিক্রি হয় দেড়শত টাকায়।
কালো মাটি লাকড়ি গ্যাসের মতো জ্বলে। তাই এর ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বসত-বাড়ির পাশাপাশি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ব্যবহার করা হয়। কালো মাটি ব্যবহারে কাঠের উপর ছাপ কম হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, হাজার হাজার মানুষ কালো মাটি বিকল্প জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করছে। আবার অনেকেই এটি বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি বাজারজাত করলে সাধারণ মানুষ উপকেৃত হবে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, কালো মাটি জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের ফলে কাঠ ও গ্যাসের উপর চাপ কম পড়ে। এটি পরিবেশবান্ধব হলে হাওরাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে উপকৃত হবে।