খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৬: 
ফুটপাতের মালিক সিটি করপোরেশন, আর নগরীর কোথাও কোনো স্থাপনা করতে অনুমোদন নিতে হয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে। সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ থেকে অনুমোদন না নিয়ে পুলিশের অনুমোদনে ব্যস্ত সড়কের ফুটপাতে বন্দরেরর পণ্য পরিবহনের কনটেইনারে গড়ে তোলা হয়েছে বেঙ্গল মিট নামের রেডি চিকেনের শো রুম। নগরীর দামপাড়া পুলিশলাইন গেইট থেকে পুনাকের দিকে এগিয়ে গেলে বাওয়া স্কুলের ফুটওভার ব্রিজের পাশে স্থাপন করা হয়েছে এই শো রুম। শুক্রবার এর উদ্বোধন করেন সিএমপি কমিশনার ইকবার বাহার।
ফুটপাতের উপর এই শো রুম হওয়ায় খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাও বিব্রত হচ্ছেন। নগরীতে ট্রাফিক শৃঙ্খলায় আনতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা উচ্চপদস্থ’ একজন কর্মকর্তা জানান, আমরা মাঠ পর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশ ও ট্রাফিক সার্জেন্টদের দিয়ে ট্রাফিকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করি। এখন আমাদের বিভাগ থেকে এই দোকানের অনুমোদন দেওয়ায় এবং সিএমপি’র কমিশনার তা উদ্বোধন করাতে আমরা খুব অবাক হয়েছি। এ ঘটনা আমাদের লজ্জায়ও ফেলেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক ও প্রশাসন) শহীদ উল আলম ‘বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
যথোপযুক্ত না হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন দ্য একসেপশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ জালাল আহমেদ রুম্মান। উল্লেখ্য, একসেপশন লিমিটেডের অধীনে চালু হয়েছে বেঙ্গল মিট।
জালাল আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোপলিটন পুলিশ যেহেতু জায়গাটি পাঁচ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে, তাই আমরা নিয়েছি। আর প্রতিযোগিতামূলক বাজারে রাস্তার পাশের একটি লোকেশন চাচ্ছিলাম আমরা। তবে নগরীতে আরো পাঁচ জায়গায় আউটলেট (শোরুম) হবে সেগুলো সঠিক স্থানে করা হবে।’
এখানে পার্কিং নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আপনার ধারণা সঠিক। পুনাকের সামনে গাড়ি টার্ন নেয়ার সময় একধরনের জ্যাম হয়, ওয়াসার মোড়ে একধরনের জ্যাম হয়। আর এই দুইয়ের মাঝখানে আউটলেটটি হওয়ায় যানজটের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রয়েছে।’
কিন্তু পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ৪০ ফুটের কনটেইনারের ভেতর এই আউটলেট করলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বার্তা সংস্থা এনবিএসকে বলেন, ‘মেট্রোপলিটন পুলিশ হয়তো আমাদের অনুমোদন দিয়েছে। তারপরও যদি লিজ বাতিল করে তাহলে চলে যেতে হবে এবং সেজন্য কনটেইনারের মধ্যে করেছি।’
ফুটপাত কীভাবে লিজ দেওয়া হলো জানতে চাইলে মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি হেডকোয়ার্টার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ ১৯৬০ সালে আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ করে, আর রাস্তা স¤প্রসারণ করেছে সিডিএ। তাই সিটি করপোরেশন এই জায়গার মালিক হতে পারে না।আমরা আমাদের জায়গা লিজ দিয়েছি তাতে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। আর ফ্লাইওভার চালু হলে এখানে পার্কিংয়ের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। পুনাকের সামনে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে গাড়ি পার্ক করার।’
এদিকে জায়গাটির মালিক মেট্রোপলিটন পুলিশ নয় বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের সহকারী এস্টেট কর্মকর্তা এখলাছ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাস্তার পাশের এই জায়গাটি সিটি করপোরেশনের। আমাদের জায়গায় কিভাবে শো রুম করলো এর ব্যাখ্যা চেয়ে শিগগিরই নোটিশ প্রদান করা হবে বেঙ্গল মিটকে।’
জায়গার মালিকানার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের বক্তব্যের জবাবে ডিসি হেডকোয়ার্টার ফারুক আহমেদ বলেন, জায়গার মালিকানা নিয়ে যতোই বিরোধ থাকুক মহানগরীতে কোনো স’াপনা নির্মাণ করতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী সিডিএ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এবিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, আমি নিজে জায়গাটি ভিজিট করবো। ‘দামপাড়ায় ফুটপাতের উপরে কোনো স্থাপনা নির্মাণের জন্য সিডিএ থেকে কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। আর অনুমোদনহীন স্থাপনা সিডিএ যেকোনো সময় উচ্ছেদ করতে পারে।’
উল্লেখ্য, নগরীতে দিন দিন যানজট বাড়ছে। আর বাওয়া স্কুলের সামনে প্রতিদিন যানজট হয়ে থাকে। প্রতিদিন ওয়াসা মোড় থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকা যানজটে চরম ভোগান্তিতে থাকে নগরবাসী।এখনই ফুটপাত দখল মুক্ত করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এমটাই প্রত্যাশা নগরবাসীর।
