খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৬: নড়াইলের লোহাগড়ার সিকদার হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টারের ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় আড়াই বছরের শিশু সামাদ এর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার(১৯ নভেম্বর) সকালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সামাদের মৃত্য হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের শাহীদুজ্জামান ও কাজলী বেগমের আড়াই বছর বয়সি শিশুপুত্র সামাদ গত ১৭ নভেম্বর জ্বর ও বুকের পার্শ্বে ব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা ১৭ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে তারা প্রথম স্থানীয় মাকড়াইলের হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার মিন্টু খানের কাছে চিকিৎসার জন্য সামাদকে নিয়ে যান। ওই ডাক্তারের ওষুধে জ্বর কমলেও ব্যাথা থেকে যায় । তাই ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সামাদ কে নিয়ে যাওয়া হয় মাকড়াইলের গ্রাম্য ডাক্তার ফিরোজের কাছে। তিনিও প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। অবস্থা জটিল দেখে ১৮ নভেম্বর সকালে বাবা-মা পুত্র সামাদ কে লোহাগড়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এবং সদর হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য পারামর্শ দেন। এরপর সরকারি হাসপাতাল থেকে তারা বাড়িতে চলে আসেন। ১৮ নভেম্বর রাতে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে ফিরোজ ডাক্তার এর স্মরণাপন্ন হলে তিনি লোহাগড়ার পোদ্দারপাড়াস্থ সিকদার হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টারে সামাদ কে নিয়ে যাবার জন্য পরামর্শ দেন। ১৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে সামাদ কে সিকদার হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সিকদার হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টারের ডাক্তার ফরহাদ বিন হক ফি বাবদ সামাদের মায়ের কাছ থেকে তিনশত টাকা নেন এবং চিকিৎসা শুরু করেন। মৃত সামাদের চাচাতো ভাই মাহামুদুর রহমান অভিযোগ করেন, ডাক্তার ফরহাদ বিন হক ও হাতুড়ে নার্স লক্ষী রাণী সামাদের বুক থেকে কফ দূর করতে সামাদের গলার মধ্যে দুইবার বড় নল(পাইপ) ঢুকিয়ে প্রায় আধাঘন্টা ধরে কফ বের করেন । ক্রমেই সামাদ অসুস্থ হতে থাকে। এক পর্যায়ে ফরহাদ বিন হক ও হাতুড়ে নার্স লক্ষী রাণী বারবিট((নধৎনরঃ) নামক ইঞ্জেকশান পুশ করেন। সামাদের শরীরে ইঞ্জেকশান পুশ করবার ৮/১০ মিনিটের মাথায় সামাদের মৃত্যু হয়। সামাদের মৃত্যু হয়েছে সে খবর গোপন রেখে সিকদার হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টারের ডাক্তার ফরহাদ বিন হক ও নার্স লক্ষী রাণী রোগীর মাকে দ্রুত সামাদকে লোহাগড়া হাসপাতালে নিতে বলেন। এক পর্যায়ে সিকদার হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ সামাদ কে দ্রুত স্থান ত্যাগ করিয়ে দেয়। প্রিয় ছেলের মৃত্য হয়েছে না বুঝে সামাদের মা সামাদ কে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লোহাগড়া হাসপাতালে নিয়ে আসেন। লোহাগড়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তার মোঃ আবুল হাসনাত বলেন, হাসপাতালে আনার অনেক আগেই সামাদের মৃত্যু হয়েছে। সামাদ সম্ভবত এ্যাসপেরিশন নিউমোনিয়া রোগে আকান্ত ছিল। এ ধরনের রোগীদের নধৎনরঃ ইঞ্জেকশান খুব হিসাব করে পুশ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, ধরনের রোগী বমি করলে খাদ্যনালী থেকে বমি শ্বাসনালীতে চলে গেলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
অভিযোগ রয়েছে, রোগীর বাস্তব অবস্থা নাবুঝে ডাক্তার ফরহাদ বিন হক ও নার্স লক্ষী রাণী রোগীর শরীরে নধৎনরঃ ইঞ্জেকশান পুশ করেছেন। এমনকি তারা দীর্ঘসময় ধরে গালের মধ্যে পাইপ দিয়ে কফ পরিস্কার করতে গিয়ে শ্বাসনালী বন্ধ করে ফেলেছেন। তাই ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ছেলের লাশের পার্শ্বে বসে শোকে পাগলপ্রায় মা কাজলী বলেন, ইনজকেশান দেবার পর আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তার ফরহাদ বিন হক অভিযোগ বিষয়ে বলেন, আমি রোগীকে নধৎনরঃ ইঞ্জেকশান পুশ করিনি। তবে ওটা কিনে আনিয়েছিলাম। শ্বাস কষ্ট দূর করতে আমি তার মুখে ইমুলাইজার দিয়েছি এবং কফ দূর করতে গলার মধ্যে পাইপ ঢুকিয়ে কফ দূর করেছি। স্যালাইন দিয়েছি। সিকদার হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টারের মালিক(আংশিক) কাম ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন আমি পরে এসেছি ,তাই সামাদকে কেমন চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তা জানিনা।