খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০১৬: হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির খাদ্যাভাব দূরীকরনের লক্ষ্যে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির আওতায় মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিতরণে অবিশ্বাস্য রকমের অনিয়ম আর দুর্নীতি করছে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় নিযুক্ত ডিলাররা। এমন অভিযোগ এখন দ্বীপবাসীর মুখে মুখে। তবে অনিয়মকে নিয়মের চাদরে ডাকার চেষ্টা করছে উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয়দের অভিযোগ রাজনৈতিক চাপে দুর্নীতিবাজ এমন ডিলারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন রকমের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আতুর ঘরেই ব্যর্থ হতে চলেছে মাননীয় প্রধারমন্ত্রীর এই মহৎ উদ্যোগ।
গত ১৫ নভেম্বর সকালে উপজেলার তমরুদ্দি বাজারে নিযুক্ত ডিলার নুরুন নবীর কাছ থেকে হতদরিদ্র কার্ডধারী মানুষগুলো ৩শত টাকায় ৩০ কেজি চাউল কিনে ওজন করলে ৪কেজি করে চাউল কম হয়। এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ করলে তাদের কার্ড বাতিল করার হুমকি দেয় ঐ ডিলার। এ ব্যাপারে পরের দিন বুধবার সকালে হতদরিদ্র লোকজন হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন এবং অভিযুক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানান।
তমরুদ্দি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের রায়হান, জিহান, চুট্রু, ১নং ওয়ার্ডের মনাফ, এনায়েত, আনোয়র জানান, আমরা প্রতি মাসে চাউল কিনলে ডিলার আমাদেরকে প্রতি মাসে চার কেজি করে চাউল কম দেন। তমরুদ্দি ইউপি সদস্য জাহেদ হোসেন ও বদি আলামের সাথে কথা বললে তাঁরা ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিতরণে অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে জানান সরকারের দেওয়া ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিতরনে ব্যাপক অনিয়ম করছেন ডিলার।
এ ব্যপারে তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফররুখ আহম্মদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অভিযোগ পেয়ে ডিলার নুরুন নবীকে সতর্ক করে দিয়েছি। যদি ভবিষ্যতে আর এ ধরনের অনিয়ম করে তাহলে তার ডিলার কার্ড বাতিলের সুপারিশ করা হবে।
অভিযুক্ত ডিলার নুরনবীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি চাউল বিতরণের সময় ছিলাম না। আমার কর্মচারীরা চাউল বিতরণ করেছে। ভবিষ্যতে আর পরিমাপে কম দেয়া হবে না।
শুধু তমরুদ্দি ইউনিয়ন নয়, উপজেলার হাতিয়া বাজারের ডিলার মো.ইসমাঈল, চরচেঙ্গা বাজারের সাইফুল ইসলাম, মাইজদী বাজারের ডিলার আবদুল ওয়াব, বাংলা বাজারের ডিলার এনামুল হক, সেকু মার্কেটের ডিলার আবুল কালাম ও চৌমুহনী বাজারের ডিলার সিরাজ উদ্দিন একই ভাবে ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিতরণে ভুয়া কার্ড সৃজন ও ওজনে কম দিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যে সকল মানুষ দু’বেলা খাবার সংগ্রহ করেত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাড় ভাঙ্গা খাঁটুনিতে নিজেকে বিকিয়ে দেয়, এমন শত শত মানুষ সরকারের এই ন্যায্যমূল্যের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ক্ষমতাশীন দলীয় নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারেরা গরীব মানুষের নাম বাদ দিয়ে তাদের স্বচ্ছল সমর্থক ও আত্মীয় স্বজনদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে। হাতিয়ার সুশীল সমাজ দাবী করছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারি এই দরিদ্র বান্ধব কর্মসূচির সফলতা কাংখিত লক্ষ্যে পৌছাতে হলে ক্ষমতাশীনদের চরিত্র পরিবর্তন করে, সকল অনিয়মের বেড়াজাল ছিন্ন করতে হবে।
হাতিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আমজাদ হোসেন চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চাউল ওজনে কম দেয়া অথবা কার্ডধারী কোন ব্যক্তি চাউল পায়নি এ ধরণের কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।