Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

5kখোলা বাজার২৪, বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৬:  সরকারি নীতিমালা লংঘন করে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে। বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ২ হাজার পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফরম পূরণ করিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করেছে সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতিসহ অন্যান্য উপজেলা সমিতি নেতারা । ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ শিক্ষক সমিতির নির্দেশে সরকার নির্ধারিত হারের থেকেও ৩/৪ গুন টাকা বেশী নিয়েছে তাদের থেকে। শিক্ষক সমিতির অভিযুক্ত নেতাকে আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ফেরৎ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

শরীয়তপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারী শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় শরীয়তপুর সদর উপজেলার দুইটি সরকারী বিদ্যালয়ের বাইরেও ২০টি বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে ২ হাজার ৩৬ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করবে। ফরম পুরন ৭ নভেম্বর শুরু হয়েছে। শেষ হয়েছে ১৩ নভেম্বর। পরীক্ষার ফরম পুরনরে জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ফি‘র হার নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতি বিষয় ৮০ টাকা, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি ৩০ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ ফি ৩৫ টাকা, মূল সনদ ফি ১০০ টাকা, বয়স্টাউট/গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা। বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ১ হাজার ৪ শত ২০ টাকা, মানবিকে ১ হাজার ৩ শত ৩০ টাকা ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১ হাজার ৩ শত ৩০ টাকা করে মোট ফি ধার্য্য করা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিজনের জন্য ৩ শত টাকা করে কেন্দ্র ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে শিক্ষক সমিতির অনৈতিক বানিজ্যের এক ভয়ংকর চিত্র, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি শরীয়তপুর সদর উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত তাদের সমিতির প্যাডে গত ২৯ অক্টোবর প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি তালিকা প্রেরণ করেন। এতে প্রধান শিক্ষকদের নিন্ম বর্নিত হারে ফরম পুরনের টাকা আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেন সমিতির নেতারা। তাতে দেখা গেছে সরকার নির্ধারিত হারের বাইরেও প্রতি পরীক্ষার্থী থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারী-মার্চ ৩ মাসের বেতন- ৪২০ টাকা, সেশন ফি- ৫০০ টাকা, উন্নয়ন ফি – ৫০০ টাকা, খেলার ফি – ২০০ টাকা, মিলাদ/পূজা ফি – ১০০ টাকা, স্কাউট ফি – ১০০ টাকা, বিদ্যুৎ ও ভূমি কর – ১২০ টাকা, অন লাইন ফরম পুরণ ফি – ৫০ টাকা, যাতায়াত ফি – ১৫০ টাকা, বিবিধ – ১১০ টাকা, প্রথম মডেল টেষ্ট ফি – ৫০০ টাকা এবং দ্বিতীয় মডেল টেষ্ট ফি – ৫০০ টাকা, মোট অতিরিক্ত ফি ৩ হজার ২ শত ৫০ টাকা। হিসেব করে দেখা গেছে, উপজেলার ২০ বিদ্যালয়ের দুই হাজার পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে এভাবে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শিক্ষক নেতারা।
পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি মডেল টেষ্ট এবং নির্বাচনী পরীক্ষায় তারা ১ হাজার ৩ শত টাকা করে ফি দিয়েছে। নির্বাচনী পরীক্ষার আগে আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৩ হাজার ৫ শত টাকা করে ফি দিয়েছে। যা শরীয়তপুর জেলার অন্য কোন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিতে হয়নি।

আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি। তিনি অবৈধভাবে আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ বিঘা জমি বিক্রি করে অন্তত ৮ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে দুদকের দুইটি মামলার চার্জসীট ভূক্ত আসামী। এর আগে দুর্নীতির মামলায় আনোয়ার কামাল জেল খেটেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে আঙ্গারিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে আনোয়ার কামাল এবং সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক সমিতির ফরিদপুর অঞ্চলের সভাপতি সাবেক শিবির নেতা হারুন অর রশিদ সবচেয়ে বেশী দূর্নীতি করেছে ফরম পূরনের ক্ষেত্রে।এ ছাড়া ও পালং উচ্চবিদ্যালয়, বিঝারী উপশী তারা প্রসন্ন উচ্চবিদ্যালয়, চিকন্দি সরফ আলী উচ্চবিদ্যালয়, নড়িয়া বিহারী লাল মডেল উচ্চবিদ্যালয়,নড়িয়া গার্লস পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, কার্ত্তিকপৃুর উচ্চবিদ্যালয়,পঞ্চপল্লী গুরুরাম উচ্চবিদ্যালয় ,সখিপুর উচ্চবিদ্যালয় জাজিরা মোহর আলী উচ্চবিদ্যালয় চিঠি না দিলে ও ফরম পূরনে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ফয়সাল, ইমরান, আঙ্গারিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের স্বর্না, সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মোহনা আক্তার শারমিন, সজীব, রাকিব ও ইকবাল হোসেন জানান, তারা প্রত্যেকে ফরম পুরনরে জন্য ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে।

অভিভাবক জামাল হোসেন মাদবর, আব্দুল হক সরদার সহ অসংখ্য অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তাদের ছেলে মেয়েদের ফরম পুরনের জন্য ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে শিক্ষকেরা। তাদের টাকা জোগার করতে এত কষ্ট হয়েছে যে, গবাদী পশু, ঘরে রাখা ধান পাট বিক্রি করেও টাকা সংগ্রহ করতে হয়েছে। ৫ শত টাকা কম দেয়ার জন্য অনেক অভিভাবক আকুতি জানালেও কোন রকমের কর্নপাত করেনি হারুন-কামাল সহ অন্যান্য শিক্ষক নেতারা ।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য চিঠি ইস্যু করলেও সেই পরিমানের টাকা আদায় করিনি। ইস্যুকৃত চিঠি পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে নিয়েছি।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, আমি শুনেছি শিক্ষক সমিতি একটি চিঠি দিয়ে এসএসসি‘র ফরম পূরনে শিক্ষার্থীদের থেকে কয়েকগুন টাকা বেশী আদায় করেছে। আমি শিক্ষক সমিতির কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত টাকা ফেরৎ দিতে নির্দেশ দিয়েছি। টাকা ফেরৎ না দিলে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।