Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

4kখোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৬: মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি সেনাদের নির্যাতন, এর পরিপ্রেক্ষিতে অং সান সুচির নীরবতা। শান্তিকামী মানুষের দাবি সকল দোষ অং সান সুচির। এরইমধ্যে তার নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বানও উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তবে অং সান সুচির কোনো দোষ নেই বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ওয়ালিউর রহমান।
সাবেক এ কূটনীতিক বলেন, ‘সত্যি বলতে অং সান সুচির এখানে দোষ নেই। সুচি নিজেই তো রোহিঙ্গাদের মতো মিয়ানমারের একজন ভিকটিম। মূলত কিছু উগ্রপন্থী সেনা জেনারেলরাই রোহিঙ্গা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। তারা নির্মমভাবে রোহিঙ্গা নারী, শিশুসহ সকলকে হত্যা করছে।’
তবে বাংলাদেশ চাইলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে বলে মনে করেন তিনি।
ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমারে কিছু উগ্রপন্থী জেনারেলের রোহিঙ্গা নির্যাতন এখন আন্তর্জাতিক সমস্যা। আপনি দেখেন আন্তর্জাতিক সমাজ ও সংগঠন সবাই এ ঘটনার নিন্দা করছে। জীবন বাঁচাতে মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গারা সাগরে ভাসছে, নদীতে ভাসছে, জঙ্গলে লুকাচ্ছে। উগ্রপন্থী জেনারেলদের হাত থেকে ছোট শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না।’
এ কুটনীতিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ‘রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাচাঁতে ও মায়ানমারের নাগরিকত্ব আদায় করতে বাংলাদেশকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সকলের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ এ বিষয়টি জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিলে তোলা। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এই ঘটনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে। শুধুমাত্র এশিয়ান কান্ট্রিগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই হস্তক্ষেপ করতে পারে। কারণ ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়া নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। আমি নিজেই চুক্তি করেছি। সেই চুক্তিকে সামনে এনেই বাংলাদেশ সরাসরি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলতে পারে। এমনকি বাংলাদেশ সরকার চাইলে যে কোনো সময় মিয়ানমারে যেতে পারে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের হত্যা নয় তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার দেওয়ার কথা ছিল।
ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনারা নিষ্ঠুর আচরণ করছে। হিউমান রাটসের সকল বিষয় ভঙ্গ করে রোহিঙ্গা নির্যাতন চালাচ্ছে। মিয়ারমার তাদের সংবিধানে স্বীকৃত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভঙ্গ করে রোহিঙ্গাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গা ছাড়াও আরো অনেক ধর্ম ও জাতির মানুষ আছে। তারা অন্য সকলকে স্বীকৃতি দিলেও রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দেয়নি। অথচ রোহিঙ্গারাই মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে আছে। রোহিঙ্গারা প্রায় ৮০০ বছর ধরে দেশটিতে আছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৮ সালেও এ ধরনের নির্যাতন হয়েছিল। সেনা সদস্যদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে সেসময় প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল। পরে আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে ৩ মাসের মধ্যে মায়ানামারে তাদের ফেরত পাঠিয়েছি। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে রোহিঙ্গা ফেরত নিতে বাধ্য করেছি।’
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা আছে। বেশিরভাগই পরিচয় গোপন করে আছে। সুতরাং বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গা গ্রহণ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। চুক্তি অনুযায়ী এটা বাংলাদেশ পারে না। কিন্তু বাংলাদেশ চাইলে নির্যাতন বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।’
তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়টা কখনোই গুরুত্বসহকারে নেয়নি। বাংলাদেশ কি মিয়ানমারকে ভয় পায়? এটি আমি বুঝতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তত পক্ষে এইবার রোহিঙ্গা ইস্যু শক্তভাবে নেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশকে সব ধরনের পদেক্ষপ নিতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশকে কঠোর হতে হবে।’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘১৯৯৪ সালে দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন আমি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় গিয়েছিলাম। তখন আমি স্বচক্ষে দেখেছিলাম মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন। তারা মিয়ানমার সরকার থেকে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও নাগরিক অধিকার পায় না। কোনোভাবে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে তারা।’