Wed. Jun 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16kখোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৬:  উত্তর জনপদের হিমালয়ের পাদদেশে ঠাকুরগাঁও জেলা। অন্যান্য জেলার আগেই শীতের আগমন হয় এই জেলায়। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে শীত নেমেছে। শীতের শুরুতেই নতুন লেপ ও তোশক কিনে শীতের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন জেলার বাসিন্দারা। এতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লেপ-তোশকের কারিগর ও এ ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা। এ বছর শীত পুরোমাত্রায় আগমনের কিছুটা আগেই লেপ-তোশক বেচাকেনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে জেলায় পুরোদমে শীত নামলে অসহায় হয়ে পড়েন জেলার দুস্থ শীতার্তরা। ঠাকুরগাঁওয়ের ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। ৮০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। ইতোমধ্যে কোন কোন জায়গায় শীতের মাত্রা বেড়েছে। তবে এখনো হাড় কাঁপানো শীত শুরু হয়নি। সামনের দিনগুলোতে গত বছরগুলোর মতো স্বাভাবিকভাবে শীতের তীব্রতা বাড়বে। এতে করে শীতার্ত মানুষের অব্স্থা নাকাল আকার ধারণ করবে। সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতি বছর শীতজনিত রোগে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। আর শীত আসলে শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
পাতলা কম্বলে শীত যায় না বাহে
সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। গ্রামাঞ্চলের মানুষ খড়কুটো দিয়ে বেশির ভাগ সময় শীত নিবারণের চেষ্টা করে। বেশির ভাগ হতদরিদ্র মানুষ শীতের জন্য গরম কাপড় কিনতে পারে না। তাই অনেকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সরকারিভাবে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক যে পরিমাণ শীতবস্ত্র বিতরণ করে তা অপ্রতুল।
এছাড়া জেলা প্রশাসক থেকে শীতবস্ত্র হিসেবে যে কাপড় দেয়া হয় সেগুলো শীতের তীব্রতার কাছে কিছুই নয়। আসলে এসব শীতবস্ত্রে শীত নিবারণ হয় না। সেক্ষেত্রে এই জেলার মানুষের জন্য আরো মোটা কাপড়ের শীতবস্ত্র তৈরির দাবি জানান শীতার্তরা।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে শীতবস্ত্র তেমন পায় না দরিদ্র মানুষ। এমন অভিযোগ সীমান্তবর্তী এলাকার দরিদ্রদের। তারা অভিযোগ করে বলেন, জেলা শহর থেকে তাদের এখানের দূরত্ব বেশি হওয়ায় শীতবস্ত্র এখানে পৌঁছার আগেই শেষ হয়ে যায়। এছাড়া যে দুই একটা শীতবস্ত্র আসে সেগুলো শীতের তীব্রতার চেয়ে অপ্রতুল।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সাদেকুল হক নামে ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা বলেন, ‘হামাদের (আমাদের) গ্রামে অনেক শীত। বিকেল হইলেই শীত শুরু হয়। কিন্তু হামার (আমার) কপালে কখনো একটি শীতবস্ত্র জোটেনি।’
একই এলাকার হতদরিদ্র মোমেনা খাতুন বলেন, ভিক্ষে করে জীবন চালাই। শীত আসলে ভিক্ষে করবার পারি না। ঠান্ডার কারণে বাসার বাহিরে বের হওয়া যায় না। সরকার গরিবদের শীতবস্ত্র দেয় না। শীতবস্ত্র তো পায় বড়লোকেরা। ঠাকুরগাঁও শহরের ভিক্ষুক রাবেয়া বলেন, শীতকালে সরকারি যে কম্বল পাই। তা দিয়ে শীত পালায় না। এতো পাতলা কম্বল দিয়ে কী করমু হামরা (আমরা)। মোটা কম্বল হইলে হয়। শীতে একটা মোটা কম্বল পাইলে হামরা (আমরা) খুশি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে ৬০ হাজারের বেশি শীতবস্ত্রের আবেদন পাঠানো হয়। গত বছর প্রধানমন্ত্রী দফতর থেকে প্রায় ২০ হাজার শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে। এছাড়া অনেক বে-সরকারি এনজিও সংস্থা থেকে প্রায় ৫-১০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। ঠাকুরগাঁও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুস সালম জানান, জেলায় অনেক মানুষ হতদরিদ্র। আমরা যে পরিমাণ চাহিদা পাঠাই তার অর্ধেক শীতবস্ত্র পাওয়া যায়। গত বছরের চেয়ে এবছর আরো বেশি শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হবে।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. এহসানুল করিম জানান, হিমালয়ের পাদদেশে ঠাকুরগাঁও জেলা হওয়ার কারণে জেলায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। তাই শিশু ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ তাড়াতাড়ি শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। শিশুদের ঠান্ডা না লাগানোর জন্য মায়েদের সচেতন হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, হেমন্তের শুরুতে জেলায় শীতের আগমন ঘটেছে। জেলায় শীতবস্ত্রের চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু সরকারিভাবে আমরা তা দিতে পারি না। যতটুকু পাওয়া যায় তা গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। বে-সরকারি সংস্থাগুলো যদি প্রতিবছরের মতো এবারো শীতার্তদের পাশে দাঁড়ায়। তাহলে অনেকটা শীতবস্ত্রের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।